অর্থায়নে পাঁচ সমস্যায় এসএমই উদ্যোক্তারা
Published: 30th, May 2025 GMT
পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে তাঁতের কাপড়ের তৈরি পোশাকের ব্যবসা করছেন সলো’স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সায়মা সুলতানা। ব্যবসা শুরুর দুই বছরের মাথায় ২০২২ সালে তিনি ঋণ নিতে বেসরকারি একটি ব্যাংকে যান। কিন্তু ব্যবসার কম অভিজ্ঞতা, বিক্রয়কেন্দ্র না থাকায় ব্যাংকটি তাঁকে ঋণ দেয়নি। এরপর তিন বছর অপেক্ষার পর চলতি বছরের মার্চে ঋণ পান তিনি।
সায়মা সুলতানা বলেন, ‘নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র না থাকায় ব্যাংক প্রথমে ঋণ দেয়নি। পরে নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র চালুর এক বছর পর আবার ঋণ আবেদন করি। তারপরও ঋণ পাইনি। এমনকি ঋণের জন্য বাড়ির দলিল চান ব্যাংক কর্মকর্তারা। এসব শর্ত পূরণ করে ঋণ পেতে ব্যর্থ হয়ে পরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশনের শরণাপন্ন হই। তাদের সহায়তায় অন্য আরেকটি ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ চেয়ে পেয়েছি মাত্র পাঁচ লাখ টাকা।’
ঋণ পেতে সায়মা সুলতানার ভোগান্তির ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা না। দেশের এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা প্রায়ই এ ধরনের ভোগান্তির মুখোমুখি হন। ঋণ ছাড়াও এসএমই উদ্যোক্তাদের আরও কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় ব্যবসার ধাপে ধাপে। তবে এসএমই উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় অর্থায়ন সমস্যায়। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের নানা শর্তের কারণে ঋণ পাওয়ার যোগ্যতাই হয় না এসএমই উদ্যোক্তাদের বড় একটি অংশের। আবার যোগ্য হলেও চড়া সুদের কারণে ঋণ নিতে চান না অনেকে। এসব কারণে দেশে এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। বছর বছর ব্যাংকগুলোর জন্য এসএমই ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা শেষ পর্যন্ত পূরণ হয় না।
পাঁচ ধরনের সমস্যা
এসএমই খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই খাতের জন্য বেশ কিছু ঋণ কর্মসূচি থাকলেও সেগুলো থেকে প্রত্যাশিত সুবিধা পাওয়া যায় না। ঋণের পাশাপাশি ব্যবসার নিবন্ধন, শুল্ক–কর, কাঁচামাল আমদানি, বিপণন প্রভৃতি পর্যায়েও অসুবিধার সম্মুখীন হন এসএমই উদ্যোক্তারা।
বেশ কয়েকজন এসএমই উদ্যোক্তা, এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ও খাত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের ক্ষেত্রে অন্তত পাঁচ ধরনের সমস্যা রয়েছে। সমস্যাগুলো হচ্ছে—উচ্চ সুদহার, জামানত প্রদানের বাধ্যবাধকতা, প্রয়োজনীয় নথিপত্রের অভাব, ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি এড়ানোর মনোভাব এবং ব্যাংকবহির্ভূত বিকল্প অর্থায়ন সুবিধা না থাকা।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, নতুন, প্রান্তিক ও নারী উদ্যোক্তারা ব্যাংকঋণের ক্ষেত্রে জামানত নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য এটি বড় বাধা। তাই তাদেরকে যতটা সম্ভব জামানতবিহীন ঋণ দেওয়া উচিত।
সুদহার নিয়েও ভোগান্তি রয়েছে এসএমই উদ্যোক্তাদের। এসএমই প্রতিষ্ঠান হাতবাক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাফাত কাদির জানান, সরকারের কিছু ঋণ কর্মসূচিতে ৪ থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যায়। তবে সেই ঋণের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় কম। এর বাইরে সাধারণ ব্যাংকঋণের সুদ এখন ১৬–১৭ শতাংশের মতো। শাফাত কাদির বলেন, এমনিতেই দেশে ব্যবসা পরিস্থিতি ভালো না। উদ্যোক্তাদের মূলধনি সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু চড়া সুদহারের কারণে ব্যবসা সম্প্রসারণ না হয়ে উল্টো সংকুচিত হচ্ছে।
উদ্যোগ আছে, সাফল্য কম
এসএমই ঋণ সম্প্রসারণে সরকারের নানা পদক্ষেপ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে, দেশের তফসিলি ব্যাংকের সব শাখায় একটি করে এসএমই ডেস্ক রাখার নিয়ম রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকের মোট ঋণের অন্তত ২৫ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। তা সত্ত্বেও উদ্যোক্তারা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ঋণ পাচ্ছেন না। বিশেষ করে কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ পাওয়ার হার অনেক কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত অর্থবছরে সিএমএসএমই খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ (স্থিতি) ছিল ৩ লাখ ৬ হাজার ১২০ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের প্রায় ১৯ শতাংশ। ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর এসএমই ঋণের প্রবাহ বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ বা ১ হাজার ২৭ কোটি টাকা।
এদিকে গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৮ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ছিল। এ কারণে ওই প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ উল্লেখযোগ পরিমাণে কমে যায়।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, দেশের এসএমই খাতের আকার অনুসারে এই খাতে বিতরণ করা ঋণ অনেক কম। অর্থনীতি চাঙা করতে ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে সিএমএসএমইতে ঋণ বাড়ানো প্রয়োজন।
জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি—সবারই বৈশিষ্ট্য ও ঋণের চাহিদা আলাদা। কিন্তু ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে মাঝারি ও ক্ষুদ্রদের চেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেয়। এখান থেকে সরে এসে প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে ঋণের সুযোগ করে দিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এসএমই খ ত ঋণ ব তরণ পর ম ণ ঋণ র প সমস য বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ৪ হাজার ৯১২ কোটি টাকা
বিদায়ী সপ্তাহে (২৪ থেকে ২৯ মে) দেশের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক বাড়লেও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমলেও সিএসইতে বেড়েছে। তবে উভয় পুঁজিবাজারে বিদায়ী সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার ৯১২ কোটি ১ লাখ টাকা।
শনিবার (৩১ মে) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪৭.২০ পয়েন্ট বা ৩.০৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৩৭ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৪৭.৪৭ পয়েন্ট বা ২.৬৭ শতাংশ কমে ১ হাজার ৭২৯ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩৫.৫৪ পয়েন্ট বা ৩.৩৯ শতাংশ কমে ১ হাজার ১১ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) ২১.৯২ পয়েন্ট বা ২.৩১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯২৬ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ১০৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৯৯ কোটি ৫ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৪২২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৮টির, দর কমেছে ৩০৩টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪ টির। তবে লেনদেন হয়নি ১৮টির।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৩৩.৬৩ পয়েন্ট বা ২.৪৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫১ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ৩.৩৫ শতাংশ কমে ১১ হাজার ২৯ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ২.৫৫ শতাংশ কমে ৭ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ১.৮২ শতাংশ কমে ৮৪৬ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ১.৫৭ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯৩৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ২০৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৭৭ হাজার ২০৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৮০৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৬১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩০৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৩টির, দর কমেছে ২০৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টির শেয়ার ও ইউনিট দর।
ঢাকা/এনটি/টিপু