সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। চলতি মাসের ২২ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত অভিযানে ৩৯০ জনকে আটক করা হয়েছে। 

আজ শুক্রবার সকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আটক ৩৯০ জনের মধ্যে হত্যা মামলার আসামি, অবৈধ অস্ত্রধারী, তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী, চোরাকারবারী, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, অপহরণকারী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকাসক্ত রয়েছেন। এসব অপরাধীকে হাতেনাতে আটক করা হয়। 

আইএসপিআর জানিয়েছে, আটকৃতদের কাছ থেকে ২১টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ৯৯টি বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ, ১৬টি ককটেল বোমা, বিভিন্ন মাদকদ্রব্য, সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার দেশীয় অস্ত্র, মোটরসাইকেল, চোরাই মোবাইলফোন, ওয়াকি-টকি, পাসপোর্ট, জালনোট ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। আটককৃতদের প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ এবং আইনি কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, দেশব্যাপী জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত টহল ও নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিল্পাঞ্চলসমূহে সম্ভাব্য অস্থিরতারোধে মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও সমঝোতার মাধ্যমে বেতন-বোনাস পরিশোধ নিশ্চিতে সেনা টহলদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। 

এছাড়াও আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসা অস্থায়ী পশুরহাটে সার্বক্ষণিক নজরদারী, নিরাপত্তা ও পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করছে। পাশাপাশি ঈদযাত্রাকে সহজ করতে নির্বিঘ্নে সড়কে যান চলাচল নিশ্চিতকরণ ও টিকিট কালোবাজারি রোধকল্পে সেনাবাহিনী বিশেষ টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ জনগণকে যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে তথ্য প্রদান করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

হাসপাতালে লঙ্কাকাণ্ড আহত ১৫, সেবা বন্ধ

রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের সঙ্গে ভর্তি থাকা জুলাই অভ্যুত্থানের আহতদের হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচ চিকিৎসকসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা। গতকাল বুধবার সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চিকিৎসক, রোগী ও স্বজনরা হাসপাতাল ছেড়েছেন।

সংঘর্ষের ঘটনায় সকাল থেকেই সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন চিকিৎসা নিতে আসা হাজারো রোগী। এরই মধ্যে সাত দিনের ছুটিতে যান হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ। তিনি নিরাপত্তার স্বার্থে হাসপাতাল বন্ধের সুপারিশ করেছেন।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন– হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শহীদুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার ডা. মাহফুজুর রহমান, ডা. আরাফাত হোসেন, ডা. জাহিদ ও ডা. অভি। 
হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চার রোগী হাসপাতালে বিষপান করেন। এটিকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের পরিচালক, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা, গায়ে হাত তোলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বুধবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন। এতে হাসপাতালে আসা রোগীরা পড়েন বিপাকে। শিডিউল অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও হয়নি। আউটডোরে দীর্ঘ সারি থাকলেও টিকিট দেওয়ার লোক ছিল না। শুধু জরুরি বিভাগ খোলা ছিল।

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা গৃহবধূ ফাতেমা খাতুনের গতকাল চোখের ছানি অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। তবে কর্মবিরতি থাকার কারণে সেটা করা সম্ভব হয়নি। তাঁর বড় ছেলে শাহিদুর ইসলাম বলেন, বুধবার সকালে আমার মায়ের অস্ত্রোপচারের কথা ছিল। হাসপাতালে এসে দেখেছি, নার্স ও কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। জানতে চাইলে কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হননি। শুধু আমার মায়ের না, কয়েকশ রোগীকে সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে দেখেছি।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, বেলা ১১টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। দুপুর দেড়টার দিকে সেনা ও কোস্টগার্ড সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে এরই মধ্যে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের অনেকে আহত হন এবং হাসপাতালের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের অভিযোগ, তারা উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। হাসপাতালের কর্মচারীরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। চিকিৎসা না দিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে। তাদের চোখের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে।

জুলাই আন্দোলনে আহত হিল্লোল নামে একজন বলেন, সকাল থেকে সব ধরনের সেবা বন্ধ করে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছিলেন। জরুরি সেবাও দিচ্ছিলেন না। এটি নিয়ে প্রতিবাদ জানালে হাসপাতালের স্টাফরা আমাদের ও সাধারণ রোগীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (তেজগাঁও) আলমগীর কবির বলেন, পরিস্থিতি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে আমরা আরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করেছি, যাতে আবার সংঘর্ষ না হয়।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ বলেন, তিন দিন ধরে হাসপাতালে সমস্যা হচ্ছে। এত ঝুঁকি নিয়ে চাকরি করা যাবে না। আমি সাত দিনের ছুটি নিয়েছি। সকালে আমাদের কর্মীরা মনঃক্ষুণ্ন হয়ে কর্মবিরতিতে যান। এতে বহির্বিভাগের রোগীদের সঙ্গে মিলে চিকিৎসকদের নাজেহাল করেন জুলাই আহতরা।

কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। আনুমানিক ১৫ চিকিৎসক ও স্টাফ আহত হয়েছেন। তারা বেশির ভাগই পুরুষ। আর নারীদের তারা হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। 
তিনি জানান, জুলাই আহত ৫৫ জন ভর্তি ছিলেন। আত্মহত্যার চেষ্টা করে চারজন সোহরাওয়ার্দীতে এবং একজন সিএমএইচে ভর্তি আছেন।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হাজারো ছাত্র-জনতা এ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। কয়েক মাস ধরে তাদের ৫৫ জন ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালকের অভিযোগ, তাদের অনেককে ছুটি দেওয়া হলেও তারা হাসপাতাল ছাড়েননি। তারা এখান থেকে বিভিন্ন মিছিল-সমাবেশে অংশ নেন। এতে অন্য রোগীদের সমস্যা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান সমকালকে বলেন, চিকিৎসক ও নার্সদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাতের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বৃহস্পতিবার বৈঠক করে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেলা সোয়া ৩টায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাঁদাবাজির অভিযোগে এনসিপি নেতা গ্রেপ্তার
  • চট্টগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে সেনাবাহিনীর তাৎক্ষণিক উদ্যোগ
  • সাত দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৯০
  • রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল সুব্রত বাইনের
  • কমলাপুরসহ দেশের ৪৫ রেলস্টেশনে আনসার মোতায়েন
  • আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদ্‌যাপিত
  • হাসপাতালে লঙ্কাকাণ্ড আহত ১৫, সেবা বন্ধ
  • আলোচনায় সুব্রত বাইনের স্যাটেলাইট ফোন
  • ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ হস্তান্তর