অপেক্ষার দীর্ঘ পথ শেষে বিরাট কোহলির নেতৃত্বে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) আবারও ফিরে এল আইপিএলের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মঞ্চ, ফাইনালে। লিগ পর্বে ধারাবাহিক সাফল্যের পর এবার প্লে-অফেও নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিলো তারা। প্রথম কোয়ালিফায়ারে অসহায় পাঞ্জাব কিংসকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে এক দশকের কাছাকাছি সময় পর আবারও শিরোপার লড়াইয়ে নামছে বেঙ্গালুরু।

ম্যাচের শুরুটা যেমন ছিল পাঞ্জাবের, তেমনি দ্রুতই সবকিছু হাতছাড়া হয়ে যায় তাদের জন্য। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত যে আত্মঘাতী হবে, তা তারা বুঝতে পারে ইনিংসের প্রথম থেকেই। বেঙ্গালুরুর বোলারদের তোপে মাত্র ১৪ ওভার ১ বলেই পাঞ্জাব গুটিয়ে যায় মাত্র ১০১ রানে। ওপেনার প্রিয়ানশ আরিয়ার ৭, প্রভশিমরান সিংয়ের ১৮ আর স্টইনিসের লড়াকু ২৬ রানের ইনিংস ছাড়া উল্লেখ করার মতো পারফরম্যান্স মেলেনি। শেষদিকে আজমতউল্লাহ ওমরজাই চেষ্টা করেছিলেন ১৮ রানে হাল ধরতে। কিন্তু দলকে লজ্জা থেকে বাঁচাতে পারেননি।

বেঙ্গালুরুর পেস আক্রমণ ছিল এক কথায় নিখুঁত। জশ হ্যাজলউড এবং শুয়াস শর্মা; দুজনেই শিকার করেন ৩টি করে উইকেট। আর বাকিরা দারুণ চাপ সৃষ্টি করে ব্যাটারদের স্বস্তি নিতে দেননি এক মুহূর্তও।

আরো পড়ুন:

যে প্রক্রিয়ায় বিসিবির পরিচালক হবেন বুলবুল

ফারুকের বিরুদ্ধে যেসব অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি

তবে লক্ষ্য ছিল বেশ ছোট, মাত্র ১০২ রান। কিন্তু শুরুতে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বেঙ্গালুরু। অধিনায়ক কোহলি দলীয় ৩০ রানে ফিরে যান মাত্র ১২ রান করে। মায়াঙ্ক আগারওয়ালও বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। ১৩ বলে ১৯ রান করেই বিদায় নেন।

এতসব টানাপোড়েনের মাঝেও দৃঢ়তায় দাঁড়িয়ে যান ফিল সল্ট। তার ব্যাট যেন হয়ে ওঠে বিজয়ের বাণী। মাত্র ২৭ বলে ৫৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দলকে ফাইনালের পথে এগিয়ে দেন। সঙ্গে ছিলেন রজত পাতিদার। যিনি ৮ বলে ১৫ রান করে অপরাজিত থেকে নিশ্চিত করেন জয়।

এই জয়ের ফলে নয় বছরের প্রতীক্ষা শেষে আবারও আইপিএল ফাইনালে জায়গা করে নিলো রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। কোহলি-বাহিনীর সামনে এখন একটাই লক্ষ্য, স্বপ্নের সেই প্রথম শিরোপা জয়।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ ইন ল

এছাড়াও পড়ুন:

নভেম্বরে বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির

বাড়ির সামনে ১৫ শতক জমিতে সবজি আবাদ করেছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বয়রা গ্রামের কৃষক শাম্মত আলী (৬০)। পালংশাক, মুলা, ডাঁটা ও মরিচের বীজ বুনেছেন তিনি। মরিচের বীজ বোনার দুই দিন পর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে বীজ পচে গেছে। নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে তিনি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

ইতিমধ্যে ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান কাটতে শুরু করেন কৃষকেরা। এ ছাড়া শীত মৌসুমকে সামনে রেখে কৃষকেরা সবজি চাষ শুরু করেছেন। ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলগুলোতে বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়। তবে নভেম্বরের শুরুতে টানা বৃষ্টি এসব ফসলের ওপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর প্রভাব বাজারেও পড়তে পারে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ১৩টি ‍উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার শর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে শর্ষে আবাদ করা যাচ্ছে না। ২১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বাঁধাকপি, ফুলকপি, করলা, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়ার কিছুটা সমস্যা হতে পারে। বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।

নভেম্বরের বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. পারভেজ আনোয়ার বলেন, নিম্নচাপের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। নভেম্বরে এমন বৃষ্টি অপ্রত্যাশিত। ইতিমধ্যে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকেরা ধান শুকাতে সমস্যায় পড়বেন। যাঁরা কাটতে পারেননি, তাঁদের জমিতে পানি ওঠায় ধানের অপচয় বেশি হবে। রবি ফসলের ক্ষেত্রে ভুট্টা, ডাল-জাতীয় শস্য ও শর্ষে লাগানো দেরি হয়ে যাবে। ফসল লাগাতে দেরি হলে পরে বোরো ফসল লাগাতেও দেরি হয়ে যাবে।

অধ্যাপক পারভেজ আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, শীতকালীন সবজি যাঁরা দেরিতে লাগাচ্ছেন, তাঁদের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। আগাম যাঁরা আবাদ করেছেন, অতিবৃষ্টির কারণে পচে যাবে এবং রোগবালাই ও পোকার আক্রমণও বাড়বে। সব মিলিয়ে ধান, রবি শস্য ও শীতকালীন সবজি—সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে অসময়ের বৃষ্টির কারণে।

কৃষক শাম্মত আলী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মরিচ বুনছিলাম। বৃষ্টিতে সব পইচ্চা গেছে। আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সব গাইব হয়ে গেছে। আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি হইছে। এমন বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছিন না। এমন সময়ে ছিডাছাডা বৃষ্টি হইলেও এমন বৃষ্টি আর কখনো হয় নাই।’

গতকাল শনিবার রাত আড়াইটা থেকে রোববার সকাল ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ময়মনসিংহ আবহাওয়া কার্যালয়ের উচ্চ পর্যবেক্ষক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৪টা ২৫ মিনিট থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

ময়মনসিংহ শহরের দীঘারকান্দা এলাকার লাল মিয়া বলেন, ‘২ কাডা জমিতে শাকসবজি করছিলাম। বৃষ্টিতে সব ক্ষতি হইয়া গেছে। এমন টাইমে তো বৃষ্টি হয় না।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর মাসের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় সবজি লাগানো কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। শর্ষে আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, বৃষ্টির কারণে লাগাতে দেরি হলে অর্জন কিছুটা কম হবে। এখন শর্ষে আবাদের ভালো সময়। এ সময় শর্ষের বীজ বুনতে না পারলে আবাদ কমে যাবে। বৃষ্টি কয়েক দিনের মধ্যে থেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ