টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ৬০ ড্রাম সয়াবিন তেলবোঝাই একটি ট্রাক ছিনতাই হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর বাইপাস বাসস্ট্যান্ডের আন্ডারপাসের ওপর থেকে ট্রাকটি ছিনতাই হয়। ছিনতাই হওয়া তেলের দাম প্রায় ২০ লাখ টাকা বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও ট্রাকের মালিক সনি মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে ৬০ ড্রাম সয়াবিন তেল নিয়ে ট্রাকটি (ঢাকা মেট্রো-ট-২৪-৪৮২৯) বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। ট্রাকের চালক ছিলেন নওগাঁ সদরের আল আমিন ও তাঁর সহকারী ছিলেন একই এলাকার টিটু মিয়া। রাত সোয়া ৩টার দিকে ট্রাকটি আন্ডারপাসের ওপরে ওঠার সময় গতি কমে যায়। এই সময় কয়েকজন ছিনতাইকারী আন্ডারপাসের ওপর একটি পিকআপভ্যান নিয়ে ট্রাকটির গতিরোধ করে। তারা ট্রাকের দুই পাশের জানালার কাচ ভেঙে অস্ত্রের মুখে চালক ও তাঁর সহকারীকে জিম্মি করে ট্রাক নিয়ন্ত্রণে নেয়।

ছিনতাইকারীরা ট্রাকের চালক ও সহকারীকে পিকআপভ্যানে উঠিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে রওনা হয়। তবে তারা ট্রাকটি কোন দিকে নিয়ে গেছে, তা ট্রাকচালক ও সহকারী বুঝতে পারেননি। ছিনতাইকারীরা চালক আল আমিন ও সহকারী টিটু মিয়ার হাত-পা ও মুখ বেঁধে মহাসড়কের দেলদুয়ারের ডুবাইল এলাকায় পিকআপভ্যান থেকে নামিয়ে ফেলে যায়। পরে রাত চারটার দিকে মহাসড়কে টহলরত পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, পুলিশ তেলসহ ট্রাক উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় ট্রাকের মালিক থানার মামলা করবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ নত ই সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ