কুমিল্লার হাটে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু
Published: 30th, May 2025 GMT
ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহ। ঈদকে সামনে রেখে কুমিল্লার হাটগুলোতে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। খামারি ও ব্যাপারীদের উপস্থিতিতে সরগরম হাট। তবে, এখনো প্রত্যাশা অনুযায়ী জমে ওঠেনি বিক্রি। বিক্রেতারা জানান, যারা হাটে আসছেন তারা মূলত পশুর দাম যাচাই করে যাচ্ছেন।
এ বছর কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট স্থাপন করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব হাটের মেয়াদকাল হবে ঈদের দিনসহ মোট পাঁচ থেকে সাতদিন। কুমিল্লার ১৭টি উপজেলায় মোট ৪০১টি স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এবং বরুড়া পৌরসভা এলাকায় এবার কোনো পশুর হাট বসছে না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিরশান্নি হাটে আসা ব্যাপারী ও খামারিরা জানান, এখনো ক্রেতারা সেভাবে পশু কিনতে শুরু করেননি। যারা আসছেন তাদের অধিকাংশই শুধুমাত্র বাজার যাছাই করে যাচ্ছেন। আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই হাটগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা শুরু হবে বলেও আশা করেছেন তারা।
আরো পড়ুন:
অভয়নগরে বিক্রির জন্য প্রস্তুত সেরা ফ্রিজিয়ান ষাড় ‘ঠাণ্ডা ভোলা’
হাট কাঁপাতে প্রস্তুত সিরাজগঞ্জের বাবু-তুফান
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় জানায়, কুমিল্লায় কোরবানির জন্য ১ লাখ ৯১ হাজার ৮২টি গরু, মহিষ ৬০৮টি, ছাগল ৫৬ হাজার ৯৪০টি, ভেড়া ১১ হাজার ৮০৫টি ও অন্যান্য পশু ৩১৭টি প্রস্তুত রয়েছে। চাহিদার চেয়ে জেলায় ২৩ হাজার ১৬৬টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। উদ্বৃত্ত পশু অন্য জেলায় পাঠানো হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় আরো জানায়, উপজেলাভিত্তিক পশুর সংখ্যা হলো- কুমিল্লা আদর্শ সদরে ১৬ হাজার ৭৬৩টি, সদর দক্ষিণে ৯ হাজার ৬৪৯টি, চৌদ্দগ্রামে ১৩ হাজার ৩৯৯টি, নাঙ্গলকোটে ২৭ হাজার ১৭৪টি, লাকসামে ৩৩ হাজার ৮৬৭টি, বরুড়ায় ২৩ হাজার ১২টি, চান্দিনায় ১৫ হাজার ২১০টি, মনোহরগঞ্জে ১১ হাজার ৯১১টি, লালমাইয়ে ১৯ হাজার ২৩৮টি, দাউদকান্দিতে ৯ হাজার ২৫০টি, দেবিদ্বারে ১৪ হাজার ৮৪২টি, মুরাদনগরে ১৯ হাজার ৪৯টি, বুড়িচংয়ে ৯ হাজার ৬৬৪টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৮ হাজার ৭৬৪টি, হোমনায় ১৩ হাজার ৩৬২টি, মেঘনায় ৮ হাজার ৭২৭টি ও তিতাসে ৬ হাজার ৮৭১টি।
খামারিরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও গোখাদ্যের সংকটের মধ্যেও প্রান্তিক খামারি ও কৃষকরা পশু লালন করেছেন। তারা শঙ্কায় আছেন ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ নিয়ে। তাদের দবি, হাটে ভারতীয় গরু আসলে লোকসানের মুখে পড়বেন তারা।
বিজিবি জানায়, ভারতীয় গরুর প্রবেশ বন্ধে সীমান্তে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চোরাচালান ঠেকাতে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
বুড়িচং উপজেলার ছয় গ্রামের খামারি শাহাদাত মিয়া বলেন, “প্রতিবছরই আমরা অন্তত ৮-১০টি গরু পালন করি। গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে পশু পালনে খরচও বেড়েছে। এবার তিনটি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করছি। প্রত্যাশিত দাম না পাওয়া পর্যন্ত পশুগুলো বিক্রি করছি না। ঈদ আসতে আরো কিছুদিন সময় আছে। এর মধ্যে কিছুটা লাভ পেলেই বিক্রি করে দেব।”
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মিরশান্নি বাজারে গরু ব্যবসায়ী রফিকুল হক বলেন, “খামারের গরুর চেয়ে বাড়িতে পালা গরুর চাহিদা বেশি। তাই গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে গরু দেখছি। এবার দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন খামারিরা। ফলে আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি দামে পশু কিনতে হবে ক্রেতাদের।”
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, “গ্রামাঞ্চলে এখনো অনেক খামারি নিজের গোয়ালে এক থেকে দুইটি করে দেশি জাতের পশু পালন করছেন। ১৭টি উপজেলায় ৩৬ হাজার খামারি রয়েছেন। তাদের পশু দিয়ে জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত পশু পার্শ্ববর্তী জেলায় বিক্রি করা যাবে। হাটগুলোতে নিয়মিত মনিটরিং করছি।”
বিজিবির-১০ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, “সীমান্তে চোরাচালান অনেক কমেছে। শাহপুর, চৌদ্দগ্রাম ও শিবের বাজার এলাকাগুলোতে বিজিবি টহলে রয়েছে। এবার ভারতীয় গরু ঢুকতে পারবে না।”
এদিকে, কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধান ও রোগনির্ণয়ের জন্য ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। হাটগুলোতে জাল টাকা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, ব্যাংকের বুথ ও ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাও রাখা হয়েছে।
কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, “ঈদকে সামনে রেখে আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। গেল ঈদের মতে এবারো শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ ঈদ উদযাপন করবে।”
জাল টাকা শনাক্তকরণ ও লেনদেন-সংক্রান্ত বুথ স্থাপনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পশুর হাটে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি প্রতিরোধে টহল বৃদ্ধির পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। সার্বিক নিরাপত্তায় হাটকেন্দ্রিক পুলিশের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কোনো পশুবাহী গাড়ি জোরপূর্বক হাটে আনা যাবে না।”
গত ২৮ মে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পবিত্র ঈদ উল আজহার প্রস্তুতি সভায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো.
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রব ন র হ ট প রস ত ত র জন য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা
আহমদ ছফাকে বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর বেশির ভাগ কথা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। দেশের সঙ্গে তিনি প্রাণকে যুক্ত করেছিলেন। দেশকে ভালোবেসে যা যা করা দরকার, তার সবকিছু করেছেন।
শুক্রবার বিকেলে আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। এশীয় শিল্পী ও সংস্কৃতি সভা জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা-২০২৫’ আয়োজন করে। ‘আহমদ ছফার রাষ্ট্র বাসনা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরিচয়’ শীর্ষক স্মৃতি বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশীয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সভার সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আহমদ ছফা (১৯৪৩–২০০১) ছিলেন লেখক, প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মী ও রাজনৈতিক চিন্তক।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আহমদ ছফা ছিলেন মূলত সাহিত্যিক। তবে তিনি সাহিত্যের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তাকে রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে প্রসারিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তা অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না।’ ছফা বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের একটি নতুন ভাষা থাকতে হবে। মানুষের রাষ্ট্রের বাসনা বুঝতে হবে। দেশটা আমার নিজের বলে মনে করলে তার সমস্যার সমাধানও আমার নিজের মতো করেই ভাবতে হবে।’
স্মৃতি বক্তৃতায় ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আহমদ ছফা রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধরনের দেশ সেই বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার মতো কোনো তাত্ত্বিক রাজনৈতিক রূপরেখা নেই। কোনো রাজনৈতিক দলও নেই।
ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। একাত্তর ছিল অপরিকল্পিত। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানও হয়েছে অপ্রস্তুতভাবে। এখন জুলাইয়ের নেতারা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বড় দলের যে সামর্থ্য আছে, সেই শক্তি–সামর্থ্য তাদের নেই। তারা মিত্রহীন হয়ে পড়েছে।’
আহমদ ছফার বন্ধু ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের পরিবর্তন চেয়েছিল। বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম সেই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে। এখন একটি নতুন রাজনীতি দরকার।