ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহ। ঈদকে সামনে রেখে কুমিল্লার হাটগুলোতে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। খামারি ও ব্যাপারীদের উপস্থিতিতে সরগরম হাট। তবে, এখনো প্রত্যাশা অনুযায়ী জমে ওঠেনি বিক্রি। বিক্রেতারা জানান, যারা হাটে আসছেন তারা মূলত পশুর দাম যাচাই করে যাচ্ছেন। 

এ বছর কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট স্থাপন করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব হাটের মেয়াদকাল হবে ঈদের দিনসহ মোট পাঁচ থেকে সাতদিন। কুমিল্লার ১৭টি উপজেলায় মোট ৪০১টি স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এবং বরুড়া পৌরসভা এলাকায় এবার কোনো পশুর হাট বসছে না।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিরশান্নি হাটে আসা ব্যাপারী ও খামারিরা জানান, এখনো ক্রেতারা সেভাবে পশু কিনতে শুরু করেননি। যারা আসছেন তাদের অধিকাংশই শুধুমাত্র বাজার যাছাই করে যাচ্ছেন। আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই হাটগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা শুরু হবে বলেও আশা করেছেন তারা।

আরো পড়ুন:

অভয়নগরে বিক্রির জন্য প্রস্তুত সেরা ফ্রিজিয়ান ষাড় ‘ঠাণ্ডা ভোলা’ 

হাট কাঁপাতে প্রস্তুত সিরাজগঞ্জের বাবু-তুফান

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় জানায়, কুমিল্লায় কোরবানির জন্য ১ লাখ ৯১ হাজার ৮২টি গরু, মহিষ ৬০৮টি, ছাগল ৫৬ হাজার ৯৪০টি, ভেড়া ১১ হাজার ৮০৫টি ও অন্যান্য পশু ৩১৭টি প্রস্তুত রয়েছে। চাহিদার চেয়ে জেলায় ২৩ হাজার ১৬৬টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। উদ্বৃত্ত পশু অন্য জেলায় পাঠানো হবে। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় আরো জানায়, উপজেলাভিত্তিক পশুর সংখ্যা হলো- কুমিল্লা আদর্শ সদরে ১৬ হাজার ৭৬৩টি, সদর দক্ষিণে ৯ হাজার ৬৪৯টি, চৌদ্দগ্রামে ১৩ হাজার ৩৯৯টি, নাঙ্গলকোটে ২৭ হাজার ১৭৪টি, লাকসামে ৩৩ হাজার ৮৬৭টি, বরুড়ায় ২৩ হাজার ১২টি, চান্দিনায় ১৫ হাজার ২১০টি, মনোহরগঞ্জে ১১ হাজার ৯১১টি, লালমাইয়ে ১৯ হাজার ২৩৮টি, দাউদকান্দিতে ৯ হাজার ২৫০টি, দেবিদ্বারে ১৪ হাজার ৮৪২টি, মুরাদনগরে ১৯ হাজার ৪৯টি, বুড়িচংয়ে ৯ হাজার ৬৬৪টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৮ হাজার ৭৬৪টি, হোমনায় ১৩ হাজার ৩৬২টি, মেঘনায় ৮ হাজার ৭২৭টি ও তিতাসে ৬ হাজার ৮৭১টি।

খামারিরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও গোখাদ্যের সংকটের মধ্যেও প্রান্তিক খামারি ও কৃষকরা পশু লালন করেছেন। তারা শঙ্কায় আছেন ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ নিয়ে। তাদের দবি, হাটে ভারতীয় গরু আসলে লোকসানের মুখে পড়বেন তারা।

বিজিবি জানায়, ভারতীয় গরুর প্রবেশ বন্ধে সীমান্তে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চোরাচালান ঠেকাতে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

বুড়িচং উপজেলার ছয় গ্রামের খামারি শাহাদাত মিয়া বলেন, “প্রতিবছরই আমরা অন্তত ৮-১০টি গরু পালন করি। গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে পশু পালনে খরচও বেড়েছে। এবার তিনটি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করছি। প্রত্যাশিত দাম না পাওয়া পর্যন্ত পশুগুলো বিক্রি করছি না। ঈদ আসতে আরো কিছুদিন সময় আছে। এর মধ্যে কিছুটা লাভ পেলেই বিক্রি করে দেব।”

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মিরশান্নি বাজারে গরু ব্যবসায়ী রফিকুল হক বলেন, “খামারের গরুর চেয়ে বাড়িতে পালা গরুর চাহিদা বেশি। তাই গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে গরু দেখছি। এবার দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন খামারিরা। ফলে আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি দামে পশু কিনতে হবে ক্রেতাদের।”

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, “গ্রামাঞ্চলে এখনো অনেক খামারি নিজের গোয়ালে এক থেকে দুইটি করে দেশি জাতের পশু পালন করছেন। ১৭টি উপজেলায় ৩৬ হাজার খামারি রয়েছেন। তাদের পশু দিয়ে জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত পশু পার্শ্ববর্তী জেলায় বিক্রি করা যাবে। হাটগুলোতে নিয়মিত মনিটরিং করছি।”

বিজিবির-১০ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, “সীমান্তে চোরাচালান অনেক কমেছে। শাহপুর, চৌদ্দগ্রাম ও শিবের বাজার এলাকাগুলোতে বিজিবি টহলে রয়েছে। এবার ভারতীয় গরু ঢুকতে পারবে না।”

এদিকে, কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধান ও রোগনির্ণয়ের জন্য ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। হাটগুলোতে জাল টাকা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, ব্যাংকের বুথ ও ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাও রাখা হয়েছে।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, “ঈদকে সামনে রেখে আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। গেল ঈদের মতে এবারো শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ ঈদ উদযাপন করবে।”

জাল টাকা শনাক্তকরণ ও লেনদেন-সংক্রান্ত বুথ স্থাপনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পশুর হাটে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি প্রতিরোধে টহল বৃদ্ধির পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। সার্বিক নিরাপত্তায় হাটকেন্দ্রিক পুলিশের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কোনো পশুবাহী গাড়ি জোরপূর্বক হাটে আনা যাবে না।”

গত ২৮ মে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পবিত্র ঈদ উল আজহার প্রস্তুতি সভায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো.

আমিরুল কায়সার জানান, পশুবাহী ট্রাক যেন কোনোভাবেই কোনো বাজারের ইজারাদার কর্তৃক থামানো না হয়, সেদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখবে। মহাসড়কের পাশে যেন কোনো হাটবাজার অবৈধভাবে বসতে না পারে, সেদিকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নজর রাখবে।

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রব ন র হ ট প রস ত ত র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

উৎসব ঘুরে প্রেক্ষাগৃহে ‘বাড়ির নাম শাহানা’

কৈশোর পেরোনোর আগেই শাহানাবাড়ির মেয়ে দীপার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর নির্যাতনের জাল ছিঁড়ে নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের পটভূমিতে দীপার বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বাড়ির নাম শাহানা।

সত্য কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত বাড়ির নাম শাহানায় দীপা চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনান সিদ্দিকা। ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে কমলা কালেক্টিভ ও গুপী বাঘা প্রোডাকশন্স লিমিটেড।

নির্মাণের বাইরে লীসা গাজী লেখক, নাট্যকর্মী হিসেবে পরিচিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ