জি এম কাদের ঢাকায় ফিরলে কর্মসূচি দেবে রংপুর জাপা, বৈষম্যবিরোধীদের বিক্ষোভ স্থগিত
Published: 30th, May 2025 GMT
জাতীয় পার্টির (জাপা) ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুর। সেখানে দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উপস্থিতিতেই বাড়িতে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীরা। ‘মব–সন্ত্রাস’ তৈরি করে এই হামলা চালানোর জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) দায়ী করছেন তাঁরা। তবে আপাতত দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি নেই। চেয়ারম্যান রংপুর সফর শেষে ঢাকায় ফিরলে মাঠে নামতে চান তাঁরা।
এদিকে জাতীয় পার্টির এই দাবিকে নাকচ করেছেন এনসিপির সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী নেতারা। তাঁরা বলছেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রংপুর সফরের প্রতিবাদে তাঁরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তাঁদের বিক্ষোভে হামলা করেছেন জাপার স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। এর প্রতিবাদে তাঁরা আজ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও পরে ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে’ স্থগিত করা হয়।
ব্যক্তিগত সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুরে আসেন। তিনি নগরের সেনপাড়ায় অবস্থিত তাঁর বাড়ি ‘দ্য স্কাই ভিউয়ে’ ওঠেন। বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন। এরপর রাতে তাঁর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা জি এম কাদেরের বাড়ি দ্য স্কাই ভিউয়ের জানালার কাচ ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন।
এ ঘটনার বিষয়ে আজ শুক্রবার বিবিসি বাংলার সঙ্গে আলাপকালে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের অভিযোগ করেন, রংপুরে বাড়িতে হামলার মাধ্যমে মূলত তাঁর ‘প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে’। হামলাকারীদের সঙ্গে পিস্তল-বন্দুক-রামদার মতো অস্ত্র ছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি।
পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, দুই পক্ষের উত্তেজনা৫ আগস্টের পর থেকেই বিভিন্ন সময় নানা ইস্যুতে রংপুরে জাতীয় পার্টি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল হয়ে আসছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থাকাকালীন এনসিপি নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর রংপুরে আগমনকে কেন্দ্র করে পাল্লাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সবশেষ ২৮ মে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমানকে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে পুনর্বহালের দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ করেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। ওই দিন নগর ভবনের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অথর্ব’ বলেন মোস্তাফিজার। একই সঙ্গে দাবি বাস্তবায়নে সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির বিক্ষোভের প্রতিবাদে ওই দিন রাতে পাল্টা বিক্ষোভ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী নেতারা মোস্তাফিজার রহমান ও জাতীয় পার্টির নেতাদের আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করে তাঁদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে জি এম কাদের বৃহস্পতিবার রংপুর সফরে এলে উত্তেজনা বাড়ে।
এনসিপরি মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টিকে আওয়ীমী লীগের দোসর উল্লেখ করে এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘.
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, কর্মসূচি ঘোষণার পর বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির নেতা-কর্মীরা রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। রাত আটটার দিকে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে অবস্থান নেন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে নগরের সেনপাড়ার দিকে যান। এরপর জি এম কাদেরের বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্যসচিব আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ আহম্মদ, বহিষ্কৃত মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন হামলার নেতৃত্ব দেন। হামলায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বাড়ি কাচ ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলার সময় জি এম কাদের ওই বাড়িতে ছিলেন।
হামলার সময় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মিলন চৌধুরী ওই বাড়িতে ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা (বৈষম্যবিরোধী) মিছিল নিয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছোরা, লাঠি নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে চৌরাস্তা মোড়ে আসে। সেখানে ককটেল ফোটানোর শব্দ হয়। এরপর মব–সন্ত্রাস তৈরি করে চেয়ারম্যানের বাড়িতে এসে গালাগালি, হামলা ও ভাঙচুর করে চলে যায়। পরে তারা পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে গিয়ে আবার হামলার প্রস্তুতি নেয়।’
হামলা খবরে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাড়িতে ছিল নেতা–কর্মীদের আনাগোনা। আজ শুক্রবার সকালে রংপুর নগরের সেনপাড়ায়উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ক ষ ভ কর এম ক দ র র কর ছ ন কর ম র কম ট র এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।