জাতীয় পার্টির (জাপা) ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুর। সেখানে দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উপস্থিতিতেই বাড়িতে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীরা। ‘মব–সন্ত্রাস’ তৈরি করে এই হামলা চালানোর জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) দায়ী করছেন তাঁরা। তবে আপাতত দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি নেই। চেয়ারম্যান রংপুর সফর শেষে ঢাকায় ফিরলে মাঠে নামতে চান তাঁরা।

এদিকে জাতীয় পার্টির এই দাবিকে নাকচ করেছেন এনসিপির সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী নেতারা। তাঁরা বলছেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রংপুর সফরের প্রতিবাদে তাঁরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তাঁদের বিক্ষোভে হামলা করেছেন জাপার স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। এর প্রতিবাদে তাঁরা আজ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও পরে ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে’ স্থগিত করা হয়।

ব্যক্তিগত সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুরে আসেন। তিনি নগরের সেনপাড়ায় অবস্থিত তাঁর বাড়ি ‘দ্য স্কাই ভিউয়ে’ ওঠেন। বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন। এরপর রাতে তাঁর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা জি এম কাদেরের বাড়ি দ্য স্কাই‌ ভিউয়ের জানালার কাচ ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন।

এ ঘটনার বিষয়ে আজ শুক্রবার বিবিসি বাংলার সঙ্গে আলাপকালে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের অভিযোগ করেন, রংপুরে বাড়িতে হামলার মাধ্যমে মূলত তাঁর ‘প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে’। হামলাকারীদের সঙ্গে পিস্তল-বন্দুক-রামদার মতো অস্ত্র ছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি।

পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, দুই পক্ষের উত্তেজনা

৫ আগস্টের পর থেকেই বিভিন্ন সময় নানা ইস্যুতে রংপুরে জাতীয় পার্টি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল হয়ে আসছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থাকাকালীন এনসিপি নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর রংপুরে আগমনকে কেন্দ্র করে পাল্লাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সবশেষ ২৮ মে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমানকে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে পুনর্বহালের দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ করেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। ওই দিন নগর ভবনের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অথর্ব’ বলেন মোস্তাফিজার। একই সঙ্গে দাবি বাস্তবায়নে সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির বিক্ষোভের প্রতিবাদে ওই দিন রাতে পাল্টা বিক্ষোভ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী নেতারা মোস্তাফিজার রহমান ও জাতীয় পার্টির নেতাদের আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করে তাঁদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে জি এম কাদের বৃহস্পতিবার রংপুর সফরে এলে উত্তেজনা বাড়ে।

এনসিপরি মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টিকে আওয়ীমী লীগের দোসর উল্লেখ করে এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘.

..সেই জি এম কাদের এখনো বাইরে কীভাবে? সরকারকে ধাক্কা না দিলে কি কাজ হয় না? নাকি প্রত্যেকটা কাজের জন্য ছাত্র-জনতাকে নতুন করে মাঠে নামতে হবে?’ এরপর গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বৈষম্যবিরোধীদের পক্ষ থেকে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের রংপুরে অবস্থান করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

মিছিল, হামলা, ভাঙচুর

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, কর্মসূচি ঘোষণার পর বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির নেতা-কর্মীরা রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। রাত আটটার দিকে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে অবস্থান নেন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে নগরের সেনপাড়ার দিকে যান। এরপর জি এম কাদেরের বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্যসচিব আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ আহম্মদ, বহিষ্কৃত মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন হামলার নেতৃত্ব দেন। হামলায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বাড়ি কাচ ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলার সময় জি এম কাদের ওই বাড়িতে ছিলেন।

হামলার সময় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মিলন চৌধুরী ওই বাড়িতে ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা (বৈষম্যবিরোধী) মিছিল নিয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছোরা, লাঠি নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে চৌরাস্তা মোড়ে আসে। সেখানে ককটেল ফোটানোর শব্দ হয়। এরপর মব–সন্ত্রাস তৈরি করে চেয়ারম্যানের বাড়িতে এসে গালাগালি, হামলা ও ভাঙচুর করে চলে যায়। পরে তারা পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে গিয়ে আবার হামলার প্রস্তুতি নেয়।’

হামলা খবরে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাড়িতে ছিল নেতা–কর্মীদের আনাগোনা। আজ শুক্রবার সকালে রংপুর নগরের সেনপাড়ায়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ক ষ ভ কর এম ক দ র র কর ছ ন কর ম র কম ট র এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়েট শিক্ষক সমিতির আন্দোলন স্থগিত, ১৬০ দিন পর মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে ক্লাস

১৬০ দিন পর আগামীকাল মঙ্গলবার খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শুরু হচ্ছে ক্লাস। আজ সোমবার কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় তিন সপ্তাহের জন্য আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর দুপুরে নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মো. মাকসুদ হেলালী একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা দেন।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, ‘উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এখন একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করবেন উপাচার্য। আগামীকাল মঙ্গলবার ক্লাস শুরু হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ ক্লাস শুরুর নোটিশ দেওয়া হবে।’

দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক মো. মাকসুদ হেলালী সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একমত হয়েছেন যে ক্লাস ও তদন্ত কার্যক্রম একসঙ্গে চলবে। সে অনুযায়ী আগামীকাল মঙ্গলবার ক্লাস শুরুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে দুই দিন ধরে উপাচার্য বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি কুয়েট শিক্ষক সমিতি, অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, সাধারণ শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদকে ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এর পর থেকে কোনো শিক্ষকই আর ক্লাসে ফেরেননি।

এ অচলাবস্থার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি একাধিক বৈঠকে বসেন—শনিবার ডিনদের সঙ্গে, রোববার সকালে লেকচারার ও সহকারী অধ্যাপক এবং দুপুরে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদের সঙ্গে। বিকেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে, রাতে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

গত ২৬ এপ্রিল উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে অপসারণের পর ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে তিনিও দায়িত্ব পালন করতে পারেননি এবং ২২ মে পদত্যাগ করেন। পরে ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে অধ্যাপক হেলালীকে কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনকুয়েটে অচলাবস্থা কাটছে, মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে পারে ক্লাস২১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিশ্ছিদ্র দাপটে উরুগুয়েকে উড়িয়ে ফাইনালে ও অলিম্পিকে ব্রাজিল
  • যে জীবন মানুষের উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়: ববিতা
  • প্রেমের টানে চীনা যুবকের বাংলাদেশে এসে বিয়ে
  • চার দিনের জ্বরে ভুগে মারা গেল কিশোর
  • নারী এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের ম্যাচ কবে, কোথায়
  • সাংলাং থেকে বেডং, সমুদ্র আমাদের সাথী  
  • আর রাহিকুল মাখতুম: এক আশ্চর্য সিরাতগ্রন্থ
  • ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার
  • লাইভ কনসার্টে পোশাক বিড়ম্বনায় জেনিফার লোপেজ (ভিডিও)
  • কুয়েট শিক্ষক সমিতির আন্দোলন স্থগিত, ১৬০ দিন পর মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে ক্লাস