উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় টানা তিন দিনের মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বিষখালী নদী উত্তাল হয়ে উঠেছে। সমুদ্রে লগুচাপটি নিম্মচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে তীরে আছড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। নদীর পানি ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। বিষখালী নদীতে বেড়িবাঁধ না থাকায় নদী তীরবর্তী ১২ গ্রামের মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। 

শনিবার (৩১ মে) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা পরিষদ এবং এর আশপাশের সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছে না। জীবিকার তাগিদে রিকশা ও অটোচালকরা বের হলেও যাত্রী সংকটে পড়তে হয়েছে।

উপজেলা সদর আমুয়া বন্দর, মরিচবুনিয়া, কৈখালী বাজার, বানাই হাট, সাতানী বাজার, সেন্টারের হাটের বেশির ভাগ দোকান বন্ধ রয়েছে। বিষখালী নদীতীরবর্তী আমুয়া, হেতালবুনিয়া, মশাবুনিয়া, জয়খালী, কাঁঠালিয়া সদর, বড় কাঁঠালিয়া, কচুয়া, সোনারবাংলা, তালগাছিয়া, রঘুয়ারচর, রঘূয়ারদড়ি চর, আওরাবুনিয়া ও জাঙ্গালিয়া গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠসহ ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

ঘাটে তিনদিন অপেক্ষার পর গন্তব্যে পৌঁছাল ৪ মরদেহ

ময়মনসিংহে ধসে পড়েছে গহুর মোল্লার ব্রিজ, যোগাযোগ বন্ধ

তলিয়ে গেছে উপজেলা সদরের দক্ষিণ আউরা আশ্রয়ন প্রকল্পের অর্ধশত ঘর। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় দুপুরে অনেকের পরিবারে রান্না হয়নি। পুকুর ও ঘের থেকে মাছ বেরিয়ে গেছে। 

উপজেলার তালগাছিয়া গ্রামের কৃষক আবদুস ছালাম জানান, তিল ও মুগডালের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। হাঁস, মুরগি, গবাদি পশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন। বড় কাঁঠালিয়া গ্রামের হালিম সিকদার জানান, বিষখালী নদীতে বেড়িবাঁধ না থাকায় নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আর্থিক সহায়তা করা হবে। 

ঢাকা/অলোক/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প কেন ভারতের ওপর এমন চাপ দিচ্ছেন, কী বলছেন রাজনৈতিক নেতারা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর বিরোধী দল কংগ্রেস বিজেপি সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছে। কংগ্রেস পার্টির এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, এখন দেশকে মোদির ‘বন্ধুত্বের মূল্য’ দিতে হচ্ছে।

কংগ্রেস ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে টেক্সাসে অনুষ্ঠিত ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের পক্ষে মোদির প্রচার চালানোকে আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছে।

কংগ্রেস বলেছে, ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। এর সঙ্গে দণ্ড জরিমানাও দিয়েছেন। এখন দেশ মোদির বন্ধুত্বের খেসারত দিচ্ছে। মোদি ট্রাম্পের প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ও ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ভারতকে শাস্তি দিলেন। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের পাশাপাশি ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও অস্ত্র কেনার কারণে ভারতকে অতিরিক্ত জরিমানাও দিতে হবে।

ট্রাম্প আরও বলেন, ভারত ও চীন রাশিয়ার যুদ্ধ খরচ বহন করছে। সেই যুদ্ধ এরই মধ্যে তিন বছর ধরে চলছে। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আবার প্রেসিডেন্ট হলে শপথ নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি যুদ্ধ শেষ করে দেবেন।

ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ভারত সব সময় রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র কিনেছে এবং রাশিয়ার জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এমন এক সময়ে তারা এই কাজ করেছে, যখন সবাই চাইছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক। তাই আগামী ১ আগস্ট থেকে ভারতকে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ও অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হবে।

কংগ্রেস–দলীয় সংসদ সদস্য মাল্লু রবি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুমকিতে আমরা উদ্বিগ্ন। শুনে মনে হচ্ছে, তিনি যেন ভারতকে হুমকি দিচ্ছেন। আমাদের উচিত উপযুক্ত জবাব দেওয়া।’

কংগ্রেসের আরেক নেতা রাজীব শুক্লা এই পদক্ষেপকে ‘একেবারে ভুল’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘সরকার যাঁকে বন্ধু মনে করত, সেই ট্রাম্প এখন আমাদের আঘাত করেছেন। এর ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা সংসদে এ বিষয়ে কথা বলব। এত বন্ধুত্বের পরও ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে এমন করলেন কেন?’

আম আদমি পার্টির (এএপি) সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রতিদিন ভারতের অপমান করছেন। ট্রাম্প তো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলকে পর্যন্ত ভারত থেকে আইফোন তৈরি না করতে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি তিনি বলেছেন, তিনি পাকিস্তানকে ভালোবাসেন। এটি নিয়ে ভারতের ভাবা উচিত। মোদির উচিত, এ বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানানো এবং তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করা।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, ট্রাম্প প্রায়ই তাঁর বক্তব্য থেকে পেছনে সরে আসেন। তাই ভারতের সরকার কী বলে, তা না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিজেপি–দলীয় আরেক সংসদ সদস্য প্রবীণ খান্ডেলওয়াল বলেন, ‘এটি দুঃখজনক। আমি নিশ্চিত, ভারত সরকার এর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। ব্যবসা ও শিল্প খাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।’

বিজেপির হেমাং যোশি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট একতরফা বিবৃতি দিতে থাকেন। ভারতের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কিছু না বলা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা উচিত। আগেও তিনি এক কথা বলেছিলেন, পরে আবার নিজেই তা বদলে ফেলেছিলেন।’

বিজেপির আরেক সংসদ সদস্য প্রতাপ সারাঙ্গি বলেন, ‘ভারত শক্তিশালী পাল্টা কৌশল তৈরি করবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, মোদির নেতৃত্বে আমেরিকার এই পদক্ষেপ সফল হতে দেওয়া হবে না। আমরা উপযুক্ত জবাব দেব।’

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে গত ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের ওপরই পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন। তাঁর দাবি, এসব দেশ আগে থেকেই মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসিয়ে আসছিল।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনজাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সব পদক্ষেপ নেবে নয়াদিল্লি১৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ