ঝালকাঠির ১২ গ্রাম প্লাবিত, আতঙ্কে নদীর পাড়ের মানুষ
Published: 31st, May 2025 GMT
উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় টানা তিন দিনের মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বিষখালী নদী উত্তাল হয়ে উঠেছে। সমুদ্রে লগুচাপটি নিম্মচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে তীরে আছড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। নদীর পানি ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। বিষখালী নদীতে বেড়িবাঁধ না থাকায় নদী তীরবর্তী ১২ গ্রামের মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
শনিবার (৩১ মে) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা পরিষদ এবং এর আশপাশের সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছে না। জীবিকার তাগিদে রিকশা ও অটোচালকরা বের হলেও যাত্রী সংকটে পড়তে হয়েছে।
উপজেলা সদর আমুয়া বন্দর, মরিচবুনিয়া, কৈখালী বাজার, বানাই হাট, সাতানী বাজার, সেন্টারের হাটের বেশির ভাগ দোকান বন্ধ রয়েছে। বিষখালী নদীতীরবর্তী আমুয়া, হেতালবুনিয়া, মশাবুনিয়া, জয়খালী, কাঁঠালিয়া সদর, বড় কাঁঠালিয়া, কচুয়া, সোনারবাংলা, তালগাছিয়া, রঘুয়ারচর, রঘূয়ারদড়ি চর, আওরাবুনিয়া ও জাঙ্গালিয়া গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠসহ ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঘাটে তিনদিন অপেক্ষার পর গন্তব্যে পৌঁছাল ৪ মরদেহ
ময়মনসিংহে ধসে পড়েছে গহুর মোল্লার ব্রিজ, যোগাযোগ বন্ধ
তলিয়ে গেছে উপজেলা সদরের দক্ষিণ আউরা আশ্রয়ন প্রকল্পের অর্ধশত ঘর। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় দুপুরে অনেকের পরিবারে রান্না হয়নি। পুকুর ও ঘের থেকে মাছ বেরিয়ে গেছে।
উপজেলার তালগাছিয়া গ্রামের কৃষক আবদুস ছালাম জানান, তিল ও মুগডালের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। হাঁস, মুরগি, গবাদি পশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন। বড় কাঁঠালিয়া গ্রামের হালিম সিকদার জানান, বিষখালী নদীতে বেড়িবাঁধ না থাকায় নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আর্থিক সহায়তা করা হবে।
ঢাকা/অলোক/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।