এ বছর ৯ ক্যাটাগরিতে ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে জাতীয় সম্মাননা ২০২৫’ দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁদের সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হয়।

এ বছর প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক ক্যাটাগরিতে এ সম্মাননা পেয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোছাব্বের হোসেন। ইলেকট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছেন একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিবেদক সুশান্ত সিনহা।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন রেলসচিব ফাহিমুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.

আবু জাফর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা রাজেশ নারওয়াল। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিশ্ব স্বাস্থ্য অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি।

বক্তারা বলেন, ধূমপান ও তামাকের ভয়াল নেশা প্রাণঘাতী। এ নেশা থেকে শিশু-কিশোরদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সচেতন হতে হবে। তামাকের করাল গ্রাস থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষা দিয়ে একটি কর্মক্ষম ও সুস্থ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি। তাই তামাক কোম্পানির সব কূটকৌশল প্রতিহত করার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে, যেন শিশু-কিশোররা তামাকে আসক্ত না হতে পারে।

সম্মাননা পেলেন যাঁরা

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অবদান রাখায় এ বছর উপজেলা টাস্কফোর্স হিসেবে সম্মাননা পেয়েছে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি। জেলা টাস্কফোর্স হিসেবে সম্মাননা পেয়েছে রাজবাড়ী জেলা টাস্কফোর্স কমিটি।

শ্রেষ্ঠ ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী’ কর্মকর্তা হিসেবে এ বছর সম্মাননা পেয়েছেন পঞ্চগড়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল হক তারেক। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে বিশেষ অবদান রাখায় ‘কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’ ক্যাটাগরিতে নোয়াখালী জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী ও নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর নুরুল ইসলাম সম্মাননা পেয়েছেন।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা পেয়েছেন হবিগঞ্জ পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ ইকবাল চৌধুরী এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ৭ নং সফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামসুল হক।

প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোছাব্বের হোসেন এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছেন একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিবেদক সুশান্ত সিনহা।

সরকারি সংস্থা হিসেবে এ বছর সম্মাননা পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়। আর বেসরকারি সংস্থা ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত অন ষ ঠ ন র উপজ ল সরক র এ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ