কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীর হামলার জবাবে পাকিস্তানে ভারতের চালানো সামরিক অভিযানের পর পাকিস্তানের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল কলম্বিয়া। তবে ভারতের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানোর পর সে বিবৃতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ শনিবার ভারতের কংগ্রেস দলের পার্লামেন্ট সদস্য শশী থারুর এসব কথা বলেছেন।

বোগোতায় ভারতের সর্বদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন থারুর। তিনি বলেন, কলম্বিয়ার আগের বিবৃতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পর দেশটির অবস্থান বদলানোয় ভারত সন্তুষ্ট।

গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারী হামলায় ২৬ জন নিরীহ বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার পর চলতি মাসের শুরুতে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান শুরু করে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালানো হয়।

শশী থারুর আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিরীহ নাগরিকদের কোনো তুলনা চলে না। যারা আমাদের দেশে হামলা চালায় এবং যারা নিজেদের দেশকে রক্ষা করে—তাদের এক কাতারে রাখা যায় না। কলম্বিয়ার আগের বিবৃতিতে এই গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যটিকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। আর সেটাই আমাদের একমাত্র আপত্তির জায়গা ছিল। এখন সেই বিবৃতি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানতে পেরে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট।’

এর আগে গতকাল শুক্রবার শশী থারুর বলেছিলেন, পাকিস্তানে প্রাণহানির ঘটনায় কলম্বিয়া সরকার ‘গভীর সমবেদনা’ প্রকাশ করায় তিনি হতাশ। কারণ, তারা সন্ত্রাসবাদের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি না দেখিয়ে পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার পর চলতি মাসের শুরুতে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালায়। পাকিস্তান ও পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা ১০ মে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছালে দুই দেশ যুদ্ধের কিনারা থেকে ফিরে আসে।

আরও পড়ুননতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা করেছে ভারত-পাকিস্তান ড্রোন যুদ্ধ২৮ মে ২০২৫

ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার সময় কলম্বিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী রোসা ইয়োলান্দা ভিয়াভিসেনসিও আগের বিবৃতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা যে ব্যাখ্যা পেয়েছি এবং কাশ্মীরের বাস্তব পরিস্থিতি, সংঘাত ও সেখানে কী ঘটেছিল, তা নিয়ে যে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছি, তাতে আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আমরাও এই সংলাপ চালিয়ে যেতে পারব।’

‘সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে নিরীহ নাগরিকদের কোনো তুলনা চলে না। যারা আমাদের দেশে হামলা চালায় এবং যারা নিজেদের দেশকে রক্ষা করে—তাদের এক কাতারে রাখা যায় না।’শশী থারুর, ভারতের কংগ্রেস দলের নেতা

বিজেপি–দলীয় সংসদ সদস্য এবং ভারতীয় ওই প্রতিনিধিদলের সদস্য তেজস্বী সূর্য কলম্বিয়ার অবস্থান পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘(কলম্বিয়ার) উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের যুক্তিগুলোকে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে এবং তারা তাদের আগের দেওয়া বিবৃতিটি প্রত্যাহার করার মতো সৌজন্য দেখিয়েছে। তারা ভারতের অবস্থানের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি ও সমর্থনও জানিয়েছে।’

বোগোতায় এক সংবাদ সম্মেলনে শশী থারুর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর উদ্দেশ্য কী ছিল, ব্যাখ্যা করেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদল কলম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সিজার গাভিরিয়ার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে। গাভিরিয়া বর্তমানে দেশটির জাতীয় পরিষদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

আরও পড়ুনপাল্টাপাল্টি আকাশসীমা বন্ধের মেয়াদ বাড়াল ভারত-পাকিস্তান২৪ মে ২০২৫

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে শশী থারুর বলেন, ‘তিনি (গাভিরিয়া) ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন এবং এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কলম ব য় র র অবস থ ন আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ