ঘুমন্ত সোহাগীর নিষ্প্রাণ দেহ মিলল বড়াল নদের পাড়ে
Published: 31st, May 2025 GMT
পাঁচ মাস বয়সী সোহাগীকে ঘুম পাড়িয়ে বিছানায় শুইয়ে রেখে ঘরের কাজ করছিলেন মা শ্রাবন্তী মন্ডল। এক পর্যায়ে খড় আনতে বাইরে যান তিনি। কয়েক মিনিট পর ফিরে এসে দেখেন, বিছানা খালি। শুরু হয় সোহাগীর সন্ধান।
এলাকাবাসীও পরিবারের সঙ্গে যোগ দেয় শিশুটিকে খুঁজতে। কিছু সময় পর তারা বাড়ির অদূরে বড়াল নদের পাড় থেকে উদ্ধার করেন শিশু সোহাগীর নিষ্প্রাণ দেহ।
শনিবার (৩১ মে) সকালে এমনই হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় শিশুটির পরিবারে চলছে আহাজারি।
আরো পড়ুন:
জোড়া মাথার দুই কন্যাশিশুর জন্মের আগেই মৃত্যু
গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের সুরক্ষায় দ্রুত আইন প্রণয়নের তাগিদ
সবার মনে প্রশ্ন কে নিয়ে গেল ঘুমন্ত সোহাগীকে? কি এমন রহস্য আছে শিশুটির মৃত্যুর পেছনে? কার শত্রুতার বলি হলো পাঁচ মাস বয়সী এই শিশু?
মারা যাওয়া সোহাগী চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের জালেশ্বর মন্ডলপাড়া গ্রামের কমল মন্ডল ও শ্রাবন্তী মন্ডল দম্পতির মেয়ে।
পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন সকালে সোহাগীকে কখনো ঘরের বারান্দার বিছানায়, কখনো দোলনায় শুইয়ে রেখে সংসারের কাজ করেন মা শ্রাবন্তী মন্ডল। প্রতিদিনের মতো আজ সকাল ৭টার দিকে ঘুমন্ত সোহাগীকে ঘরের বারান্দার বিছানায় শুইয়ে রেখে গরুর জন্য খড় আনতে যান তিনি।
কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে তিনি দেখেন সোহাগী বিছানায় নেই। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। বাড়ির অদূরে বড়াল নদের পাড়ে সোহাগীর নিষ্প্রাণ দেহ দেখতে পান এলাকাবাসী। পরিবারের লোকজন তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যান। পুলিশকে খবর দেন এলাকাবাসী।
শনিবার দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র মেয়ে সোহাগীর কথা বলতে বলতে প্রায়ই মূর্ছা যাচ্ছেন মা শ্রাবন্তী মন্ডল। মেয়ে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা কমল মন্ডল। এলাকার মানুষ ভিড় করেছেন বাড়িতে। আত্মীয়-স্বজন সোহাগীর বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন।
ঘরের বারান্দায় ঝোলানো রয়েছে দোলনা। যেখানে সোহাগীকে শুইয়ে রেখে সংসারের কাজ করতেন মা। সেই দোলনা দেখে শ্রাবন্তী মন্ডল বলেন, “এই দোলনায় এখন কে ঘুমাবে? আপনারা আমার সোহাগীকে এনে দেন।”
সোহাগীর বাবা কমল মন্ডলের দাবি, “মেয়ের এই মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নয়। কেউ তাদের ঘর থেকেই শিশুকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে নদীর পাড়ে ফেলে রেখেছিল।” তিনি দ্রুত দোষীকে খুঁজে বের করার দাবি জানান।
চাটমোহর থানার ওসি মনজুরুল আলম বলেন, “পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। শিশুটির মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ শ র বন ত পর ব র নদ র প
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।