বঙ্গোপসাগরে গত বৃহস্পতিবার সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারের মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় নতুন করে অন্তত ১ হাজার ৬০০ মিটার বেড়িবাঁধ সাগরে বিলীন হয়েছে। এর মধ্যে মহেশখালীতে ৯০৫ মিটার ও কুতুবদিোয় ৬৯৬ মিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। গত কয়েক দিনে ৩ দফা ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারের কবলে পড়ে এসব বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। জোয়ারের তীব্রতা না কমায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন দুই দ্বীপের বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসকারী বাসিন্দারা।

আজ শনিবার দুপুরে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিমে ষাইটপাড়া গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বেড়িবাঁধের ওপর বসানো অধিকাংশ জিও টিউব সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সে স্থান দিয়ে ঢুকছে জোয়ারের পানি। একই অবস্থা ধলঘাট ইউনিয়নের সরইতলা বেড়িবাঁধের। সেখানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ার-ভাটা চলছে।

মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সরওয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এলাকা ষাইটপাড়ার অন্তত এক কিলোমিটার অরক্ষিত বেড়িবাঁধের পাশে এক হাজার পরিবার বসবাস করে। গত বৃহস্পতি ও গতকাল শুক্রবার তিন দফা বৃষ্টিতে জোয়ারের পানি ঢুকে এসব পরিবারের বাড়িঘর, ফসলি জমি প্লাবিত করেছে। ১০টি কাঁচা ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। দ্রুত সংস্কার না করলে সামনে পূর্ণিমার জোয়ারের সময় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে আরও বিস্তীর্ণ এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়বে।

ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল আরও বলেন, অরক্ষিত বেড়িবাঁধের কারণে তাঁর এলাকার অন্তত এক হাজার পরিবার প্রকৃতি সঙ্গে লড়াই করে কোনোরকমে বেঁচে আছে। প্রতি বর্ষার মৌসুমে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য পাউবো কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মহেশখালীর ইউএনও মো.

হেদায়েত উল্যাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে তিন দফা জোয়ারের পানি ঢুকে অনেক এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ সময় অন্তত ৩০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পাউবোকে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র ও তাবালরচর এলাকায় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে আজ দুপুরেও জোয়ারের পানি লোকালয়ের ঢুকেছে। এর পাশাপাশি দ্বীপের বেশ কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ অরক্ষিত পড়ে আছে। সব মিলিয়ে ৬০০ মিটারের মতো বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জানতে চাইলে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্যথোয়াইপ্রু মারমা প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে আজ দুপুরেও বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র ও তাবালরচর এলাকায় জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি জোয়ারের পানি কমে যাওয়ায় কারণে লোকালয়ে নতুন করে প্লাবিত হয়নি। কিন্তু ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা উৎকণ্ঠায় আছেন। বিকেলে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত আরও ৫০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে পাউবোর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় ১ হাজার ৬০০ মিটার বেড়িবাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মহেশখালীতে ৯০৫ মিটার ও কুতুবদিয়ায় ৬৯৬ মিটার বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত বর্ষার মৌসুমে জোয়ারের পানি ঠেকাতে কুতুবদিয়ার ভাঙা বেড়িবাঁধে জিও টিউব বসানোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অন্তত দুই কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। একইভাবে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে এক কোটি টাকা। কতৃপক্ষের অনুমতি পেলে দ্রুত বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ৬০০ ম ট র ইউন য ন পর ব র র এল ক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি