নারায়ণগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। শনিবার সকালে জেলা কারাগারের অফিস কক্ষে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের উপস্থিতিতে পরীক্ষা দেন তিনি।
 
জিসান নারায়ণগঞ্জের অনলাইন পত্রিকা ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জের’ প্রতিবেদক। গত ৮ মে রাত ১১টায় নগরীর দেওভোগে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা.

সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাড়িতে যায় পুলিশ। খবর পেয়ে তাঁর সমর্থকরা এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। ছয় ঘণ্টা পর ৯ মে ভোরে পুলিশ আইভীকে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নেয়ার সময় গাড়িবহরে হামলা হয়। 

এ ঘটনায় ১২ মে রাতে পুলিশের কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগে ৫২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা হয়। এর বাদী একই থানার উপপরিদর্শক মো. রিপন মৃধা। ওই রাতেই পুলিশ মামলাটির আসামি হিসেবে সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান, তাঁর বাবা হানিফ ও চাচা জনপ্রিয় ফুড ব্লগার শওকত মিথুনকে গ্রেপ্তার করে। কয়েক দফায় আদালতে তাদের জামিনের আবেদন করা হলেও আদালত নামঞ্জুর করেন। 

ছেলের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাংবাদিক জিসানের মা আছমা বেগম। তিনি বলেন, ‘বিনা অপরাধে আমার ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এখন আমার ছেলে কারাগারে বসে বসে বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু এই মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিলো।’

সাংবাদিক জিসান ও ব্লগার শওকত মিথুনের আইনজীবী আওলাদ হোসেনের ভাষ্য, গত ২৮ মে কারাগারে বসে জিসানের ভর্তি পরীক্ষাদানের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (প্রথম) আদালতের বিচারক শহীদুল ইসলাম এ বিষয়ে জেলা কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন। শনিবার জিসান পরীক্ষায় অংশ নেন। 

জিসানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও মামলাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও পরিকল্পিত উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, ‘আমরা শুনেছি, এলাকার এক বিএনপি নেতা বাণিজ্য করতে তাঁকে মামলায় ফাঁসিয়েছেন।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার মো. ফেরদৌস মিঞা বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষক সিলগালা করা প্রশ্নপত্র নিয়ে এসেছিলেন। কারাগারের অফিস কক্ষের এক অংশ অস্থায়ী পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরীক্ষার নির্ধারিত সময় বেলা ১১টায় প্রশ্নপত্র খোলা হয়। এক ঘণ্টা পরীক্ষা দেন জিসান।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

কারাবন্দী অধ্যাপক আনোয়ারা চার বছর আগে অবসরে যান

চার দিন আগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম অসুস্থ। তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। হাড়ক্ষয়ের কারণে হাঁটাচলা করতে সমস্যা হয়। চার বছর আগে অবসর নেওয়ার পর তিনি রাজধানীর কলাবাগানের বাসায় অবস্থান করছেন। তিনি দলীয় কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা পেশাজীবী কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নন। আদালতের কাছে এসব দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম।

অবশ্য ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গত বৃহস্পতিবার তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

অধ্যাপক আনোয়ারার বিষয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তি যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৬ বছরের নিচে) হয় এবং কোনো নারী হন কিংবা অসুস্থ হন, সে ক্ষেত্রে আদালত ওই ব্যক্তির জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। যেহেতু আনোয়ারা বেগম অসুস্থ এবং বয়স্ক। তাঁর জামিনের বিষয়টি আদালত বিবেচনায় নিতে পারেন।

নাবিলা মাহজাবিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মায়ের বয়স ৬৯ বছর, খুবই অসুস্থ। হাড়ক্ষয়ের কারণে তিনি ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন। চার বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাস তিনেক আগে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হন না।

২০২১ সাল থেকে অবসরে

অধ্যাপক আনোয়ারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২১ সালে অবসরে যান। একই বছর তাঁর স্বামী সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুর রহমান মারা যান। এর পর থেকে তিনি কলাবাগানের বাসায় অবস্থান করছেন। তাঁর মেয়ে নাবিলা মাহজাবিন ও ছোট ছেলে জানিয়েছেন, অবসরের পর থেকে তাঁদের মা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা পেশাজীবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নেই।

নাবিলা মাহজাবিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মায়ের বয়স ৬৯ বছর, খুবই অসুস্থ। হাড়ক্ষয়ের কারণে তিনি ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন। চার বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাস তিনেক আগে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হন না।

নাবিলা মাহজাবিন তাঁর স্বামীর সঙ্গে পটুয়াখালীতে বসবাস করেন। আনোয়ারার ছোট ছেলে মায়ের সঙ্গে কলাবাগানের বাসায় থাকেন। তাঁর ছোট ছেলে প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর জুলাই–আগস্টের আন্দোলনের সময় তাঁর মা বাসাতেই অবস্থান করছিলেন। চার বছরের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন। জগন্নাথের শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গেও তাঁর মা জড়িত নেই।

মামলার বাদী সুজন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও নানা অনিয়মের সঙ্গে আনোয়ারা বেগম জড়িত ছিলেন। দলীয় পরিচয়ে ছাত্রলীগের অনেক লোকজনকে তিনি চাকরি দিয়েছেন।

মা আনোয়ারাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ছোট ছেলে বলেন, গত বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি একাডেমিক সভায় যোগ দিতে তাঁর মাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন, তখন একদল যুবক তাঁর মাকে ঘিরে ধরেন। খবর পেয়ে সূত্রাপুর থানা–পুলিশ তাঁর মাকে থানায় নিয়ে যায়।

সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, অধ্যাপক আনোয়ারা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। মামলার তদন্ত চলমান।

সূত্রাপুর থানার পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৯ জুলাই রায়সাহেব বাজারের কাছে স্টার হোটেলের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে গুলি চালানো হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ প্ররোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ ঘটনা ঘটান। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার চোখে গুলি লাগে। বাঁ চোখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। এ ঘটনায় সুজন মোল্লা বাদী হয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন।

মামলার বাদী সুজন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও নানা অনিয়মের সঙ্গে আনোয়ারা বেগম জড়িত ছিলেন। দলীয় পরিচয়ে ছাত্রলীগের অনেক লোকজনকে তিনি চাকরি দিয়েছেন। সুজন মোল্লা বলেন, ‘যেসব শিক্ষক আমাদের অত্যাচার করেছেন, তাঁদের মধ্যে আনোয়ারা বেগম অন্যতম।’

অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি, আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় বহুজনকে আসামি করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই পূর্বশত্রুতা, বিরোধ, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও বাণিজ্যের উদ্দেশ্য থেকে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই বলছেন, ‘ইচ্ছেমতো’ আসামি করার কারণে জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের পক্ষ থেকে ঢালাও মামলা ও গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে একাধিকবার বলা হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মামলা হওয়ার অর্থ যত্রতত্র গ্রেপ্তার নয়।

অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি, আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

অধ্যাপক আনোয়ারার আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি (আনোয়ারা) কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। হয়রানির জন্য তাঁকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। তবে তিনি আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন মামলায় গ্রেপ্তারে অনুমতির সিদ্ধান্ত স্থগিতের আদেশ আপাতত বহাল
  • তারেক রহমানসহ আসামিদের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি পেল রাষ্ট্রপক্ষ
  • কারাবন্দী অধ্যাপক আনোয়ারা চার বছর আগে অবসরে যান
  • ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সঙ্গে চলে যাবেন: জয়নুল আবেদীন 
  • চট্টগ্রামে ছাত্র জোটের সমাবেশে হামলা নিয়ে ৩২ নাগরিকের বিবৃতি
  • সভাপতি-সম্পাদক পদে জামায়াত সমর্থকরা জয়ী
  • ছাত্র জোটের সমাবেশে হামলা ভিন্নমত ও চিন্তা দমনের ফ্যাসিবাদী আক্রমণ
  • মগবাজারে আলোচিত ছিনতাই: চারজন রিমান্ডে 
  • গাজীপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ৫ পদে জামায়াতের বিজয়