ঈশ্বরদী পৌর এলাকার সাঁড়াগোপালপুর স্কুলপাড়ার হাসান চৌধুরীর দোকানে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থেকে বিধবা ভাতার ১ হাজার ৬০০ টাকা তুলতে এসেছিলেন কয়েকজন বয়স্ক ও বিধবা নারী। ইকরাম চৌধুরী নামে এক বৃদ্ধও ভাতার টাকা তুলতে এসেছিলেন। ঈদের আগে এ অর্থে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে ব্যাগও এনেছিলেন সঙ্গে। দোকানি তাদের মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে দেখেন, কারও অ্যাকাউন্টেই টাকা নেই।
ঘটনাটি গতকাল শনিবার সকালের। তারা বুঝতে পারেন, অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এ অবস্থায় দোকানেই অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কারণ, এ টাকাই ছিল তাদের সম্বল। তারা বাজারে না গিয়ে খালি হাতে অশ্রুসজল চোখে বাড়ি ফেরেন। একই এলাকায় ফয়সাল হাবিব নামে এক যুবক প্রাইভেট পড়িয়ে তাঁর মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে জমিয়েছিলেন ৬০ হাজার টাকা। ঢাকায় চাকরির খোঁজে যেতে তিনি সঞ্চয় করেছিলেন।
গতকাল হাবিব কিছু টাকা উত্তোলন করতে এসে দেখেন, অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। প্রতারকরা তাঁর সব টাকা তুলে নিয়েছে। এ সময় তাঁর কান্না দেখে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। উপজেলায় প্রতারক চক্র এভাবে কৌশলে অসহায় মানুষের ভাতা ও জমানো টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতারণার শিকার হয়ে ঈদের আগে আনন্দের পরিবর্তে তাদের চোখে কষ্টের অশ্রু। অসহায় মানুষ ঈদের খরচ কীভাবে জোগাড় করবেন, তা ভেবে উদ্বেগে আছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অসহায় প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ সরকারের দেওয়া সহায়তার টাকা তিন মাস পরপর মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে আসে। এবার ঈদের আগেও সে টাকা হাতে পাওয়ার আশায় ছিলেন গরিব ও অসহায় হাজারো মানুষ। কিন্তু পৌর এলাকা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন গ্রামের গরিবের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকাও প্রতারণার মাধ্যমে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত তিন-চার দিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত কয়েক হাজার জনের ভাতার টাকা তুলে নিয়েছেন চক্রের সদস্যরা। তিন মাস পরপর প্রতিবন্ধীদের ২ হাজার ৫৫০ টাকা করে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে পান। বিধবা ও বয়স্করা তিন মাস পরপর পান ১৬শ থেকে ১৮শ টাকা। কিন্তু ঈশ্বরদীতে প্রতিবন্ধীদের দেওয়া ভাতার টাকা আসার পরই অ্যাকাউন্ট শূন্য হয়ে যাচ্ছে।
জয়নগর গ্রামের রহিম খন্দকার প্রতি মাসে ৮৫০ টাকা হিসেবে তিন মাস পরপর ২ হাজার ৫৫০ টাকা করে ভাতা পান। কিন্তু বৃহস্পতিবার টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন অ্যাকাউন্ট শূন্য। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে ভাতা পেয়ে বাজার করব বলে আশায় ছিলাম। কিন্তু টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। এবার ঈদের আগেই শেষ হয়ে গেছে আমার ঈদ।’
সমাজসেবা অফিস থেকে জানা গেছে, পৌর এলাকা ছাড়াও লক্ষ্মীকুন্ডা, সাহাপুর, পাকশী, সলিমপুর, মুলাডুলি, সাঁড়া, দাশুড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বয়স্ক ভাতাভোগী আছেন ১১ হাজার ৫৬১ জন। প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী ৬ হাজার এবং বিধবা ভাতাভোগী রয়েছেন ৫ হাজার ৩০০ জন। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ৬১ জনসহ মোট ভাতাভোগী ২২ হাজার ৯২২ জন।
সুবিধাভোগীরা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ পান। তিন মাস পরপর অর্থ এলে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ফোন করে নানা কৌশলে পিন নাম্বার নিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা তুলে নিচ্ছে। তাদের ব্যবহৃত কয়েকটি মোবাইল ফোন থেকে কল করে ভাতার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেতে অ্যাকাউন্টের পিন নাম্বার না দিতে ভাতাভোগীদের সচেতন করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ইউএনওর মাধ্যমে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে ভাতাভোগীদের সচেতন হওয়া ছাড়া তেমন কিছু করার নেই। নানাভাবে চেষ্টা চলছে, কিন্তু এখনও কিছু করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাশ বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসক, পুলিশ ও র‍্যাবকে জানানো হয়েছে। তারা মোবাইল ফোন নাম্বার ধরে ধরে অনুসন্ধান করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। ওসি আ স ম আব্দুন নূর বলেন, বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ন ম স পরপর অ য ক উন ট উপজ ল অসহ য় বয়স ক

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ