ক্রেতা বলছেন দাম চড়া বিক্রেতার ভাষ্য কম
Published: 31st, May 2025 GMT
নওগাঁর মহাদেবপুর হাটে কোরবানির জন্য গরু কিনতে এসেছিলেন সদরের দয়ালের মোড় এলাকার এমদাদুল হক। তিনি বলছিলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি মনে হচ্ছে। মাঝারি সাইজের একটি গরুর জন্য ৯০ হাজার থেকে লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য একটু চাপই হয়ে যাচ্ছে।’
ঈদুল আজহা সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন হাটে জমে উঠেছে পশুর বেচাকেনা। গরু, ছাগল ও মহিষ নিয়ে আসছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। শনিবার সরেজমিন একাধিক হাট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। ছোট-বড় আকারের প্রচুর গরু বিক্রির জন্য আনা হয়েছে। রয়েছে ছাগলসহ কোরবানিযোগ্য অন্য পশুও।
বিক্রেতারা জানান, ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরু কেউ কিনতে চাইছেন না। বড়গুলোর ক্রেতা কম থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। গরুর সরবরাহ বেশি হওয়ায়
খরচের তুলনায় তেমন দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের। যদিও গরুর দাম বেশি অভিযোগ করে ক্রেতা বলছেন, এখন গরু কিনলে লালনপালন কষ্টসাধ্য। ঈদের দু-এক দিন আগে কিনলে তাদের সুবিধা হবে। শেষ দিকে পশু কেনার অপেক্ষায় আছেন তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে জানা গেছে, জেলায় ৩৮ হাজার ৫৭৩টি খামারে দেশি, অস্ট্রেলিয়ান, ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩২০টি গবাদি পশু লালনপালন করা হয়েছে। ঈদে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪৩৭টি। পশু বেচাকেনার জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী ৩৬টি হাট বসানো হয়েছে। উদ্বৃত্ত পশু ব্যবসায়ীরা অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করবেন।
জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট মান্দার চৌবাড়িয়া, সতিহাট, নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া, মহাদেবপুরের মাতাজি, রানীনগরের আবাদপুকুর ঘুরে দেখা যায়, দুপুরের পর থেকে পশু নিয়ে আসছেন খামারি, প্রান্তিক চাষি ও বেপারিরা। দুপুর পেরোতেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় হাটগুলো। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে দরদাম করে কিনছেন পছন্দের পশু। ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীও এসব হাটে আসছেন।
জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট চৌবাড়িয়ায় এসেছিলেন মান্দার গণেশপুর থেকে খামারি কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, গোখাদ্য, খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি গরু লালনপালনে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। সে তুলনায় দাম বলছে না। বড় গরুর দাম কম দিতে চাচ্ছেন ক্রেতা। ফিরে গেলে খরচ আছে। তাই কিছুটা লোকসানেও গরু বিক্রি করে দেবেন তিনি।
আরেক বিক্রেতা মোজাম্মেল হকের ভাষ্য, চারটি গরু বাড়িতে লালনপালন করে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন তিনি। কিন্তু দামে হচ্ছে না বলে বিক্রি করতে পারছেন না। বড় গরুর দামই বলছেন না অনেকে। খরচ বাড়লেও দাম আগের মতোই। তাঁর মতো কাজী আব্দুল কাদের হীরার একটি গরু ১ লাখ ৪০, আরেকটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দাম ওঠে। ফিরিয়ে নিয়ে গেলে খরচ বাড়বে বলে বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দেন। আরেকটি দেড় লাখ টাকা চাইলেও ক্রেতারা বিভিন্ন দাম বলছেন। গোখাদ্যের দাম বেশি থাকায় ততটা লাভ হয়নি বলে দাবি তাঁর।
বিক্রেতার এমন দাবির সঙ্গে একমত নন ক্রেতা। আবুল কাসেম বলেন, হাটে প্রচুর দেশি গরু উঠেছে। দাম বেশি মনে হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে। লুৎফর রহমান নামে আরেক ক্রেতার ভাষ্য, ‘বাড়িতে অনেক সময় কোরবানির গরু রাখার জায়গা থাকে না। তাই ঈদের দু-তিন দিন আগেই পশু কিনি। এখন ঘুরে ঘুরে দরদাম করছি।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’