ঈদুল আজহার বাকি আর এক সপ্তাহ। তবে আরও ২০ দিন আগে থেকেই লোহাগাড়ায় অনলাইনে গরু খোঁজা শুরু হয়েছে। বিক্রেতারা গরু বিক্রির জন্য দিচ্ছেন চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাট বসে গেছে। অনলাইনে পছন্দ করলেও সরেজমিন দেখে কেনাবেচা হচ্ছে বেশি। 
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাট ঘুরে পছন্দের গরু-ছাগল কেনার চল বহু দিনের। বর্তমান সময়ে কোরবানির পশুর হাটগুলোয় সশরীরে গিয়ে পশু কেনা এবং তা বাসায় নিয়ে আসা অনেক ঝক্কি-ঝামেলার ব্যাপার; তাই ভুক্তভোগীরা অনলাইনে পছন্দ করে মালিকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে পশু কিনছেন। এতে অনলাইনে গরু কেনা সহজ ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপজেলাভিত্তিক বেশ কয়েকটি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ করা হয়েছে। ‘কোরবানি গরুর হাট, লোহাগাড়া কোরবানি পশুর বাজার, লোহাগাড়া গরু বেচাকেনা, গরুর বাজার, গরুর হাট-বাজার’ নামে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। নিজস্ব আইডি, পেজ ও গ্রুপে পোস্ট দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানা যায়, লোহাগাড়ায় এবার পশুর চাহিদা ৩৮ হাজার ৫৯টি। প্রস্তুত রয়েছে ৪০ হাজার ৬২টি পশু। এর মধ্যে গরু ২৫ হাজার ৫০৬টি, মহিষ ১ হাজার ১৭০টি, ছাগল ১২ হাজার ৮৩৩টি, ভেড়া ৫৫৩টি। মোট উদ্বৃত্ত থাকবে ২ হাজার ৩টি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.

সেতু ভূষণ দাশ বলেন, ‘লোহাগাড়ায় ৪৪০ জন খামারিকে নিরাপদ গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ৯৮টি গরুর খামার পরিদর্শন করে প্রাণীসেবা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। বিজ্ঞানসম্মত ও লাভজনক খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ৪৮টি উঠান বৈঠক পরিচালনা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানির পশুর মাংস যেন ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ থাকে সে লক্ষ্যে প্রশাসনের সহায়তায় নিরাপদ পশুখাদ্য নিশ্চিতে মোবাইল কোর্ট চলমান রয়েছে। আসন্ন কোরবানির হাটে সুস্থ পশু ক্রয়-বিক্রয় নিশ্চিত করতে মোবাইল ভেটেরিনারি সেবা চালু করা হবে। এজন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমের মোবাইল নম্বর ০১৩২৪২৯০৯৫৭তে যোগাযোগ করা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে মানুষ অনলাইনে যোগাযোগ করে গরু বেচাকেনা করতে আগ্রহী হচ্ছেন বেশি।’
ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপ ঘুরে দেখা যায়, দরবেশ হাটের জিয়াউল হক, চুনতির রেজাউল বাহার, চরম্বার শাকিব, লোহাগাড়া সদরের ইমাম উদ্দিন ও মহিউদ্দিন, আমিরাবাদের আবুল কালাম, পদুয়ার নাছির, বড়হাতিয়ার জামাল মৌলভী কোরবানির গরু বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। 
এ ছাড়াও ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়েছে বিভিন্ন এগ্রো ফার্মের মালিক। সেখানে বিভিন্ন সাইজের গরু প্রদর্শন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ‘গুডকাউ’ নামে অনলাইনে একটি লাল রঙের গরুর বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। দুই দাঁতের ২২৩ কেজি ওজনের ৩ বছর বয়সী গরুটির উচ্চতা ৪ ফুট ৫ ইঞ্চি। লম্বা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। পাশ প্রায় ৩ ফুট। গরুটির দাম হাঁকা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কালামানিক নামের একটি কালো রঙের ১২৭ কেজি ওজনের গরুর দাম হাঁকা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। রফিকুল আলম একটি ষাঁড় বিক্রির জন্য ছবিসহ পোস্ট দিয়েছেন। লাল-কালো এ গরুটির ওজন ২৪২ কেজি। দুই দাঁতের এ গরুটির দাম চাওয়া হচ্ছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা।
বিভিন্ন পেজের পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘মোটাতাজা, দেখতেও সুন্দর, নিজ বাড়িতে লালন-পালন করা। গ্রামের খাবার যেমন– বিচালি, গাছের পাতা, গমসহ কয়েক রকম ভুসি, সরিষার খৈল, খড় ও মাঠের কাঁচা ঘাস, ভাতের মাড় খাওয়ানো হয়। মোটাতাজার ইনজেকশন দেওয়া হয়নি।’
ব্যাংক কর্মকর্তা মো. মুসা বলেন, তিন বছর ধরে তিনি অনলাইনে গরু কিনে কোরবানি দিচ্ছেন। এবার তার ১০ বছর বয়সী মেয়ে মোবাইলে গরু দেখে পছন্দ করেছেন। দাম ঠিক করে কিনে গরুর মালিকের কাছে রেখে দেবেন। কোরবানির একদিন আগে গরুটি বাসায় পৌঁছে দেবেন খামারিরা।
জানা যায়, কোরবানির হাটে মানুষের ভিড়, দালালদের খপ্পর, বাজারের অস্থিরতা, বায়ুদূষণের বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকে আগেভাগে গরু কেনায় বেছে নিচ্ছেন পশুর ভার্চুয়াল হাটকে। গত ২০ দিন ধরে কোরবানির পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, অনলাইন ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে গরু-ছাগলের 


ছবি, পশুর দাম, বয়স, দাঁতের সংখ্যা, ওজন, চামড়ার রঙ, জাত, জন্মস্থান এবং প্রাপ্তিস্থানের উল্লেখ আছে । হাটের ভিড় ও ঝক্কি-জামেলা এড়াতে অনলাইনে গরুর দরদাম চলছে। ক্রেতারা বলছেন, এবার বাড়তি দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা।
অনলাইন গরুর হাট সম্পর্কে জানতে চাইলে অনলাইন এক্টিভিটিস শিহাব উদ্দিন ও নজরুল ইসলাম মানিক বলেন, অনলাইনে গরু বিক্রি এখন খুবই জনপ্রিয়। ক্রেতা-বিক্রেতারা ফেসবুকে যোগাযোগ স্থাপন করেন। অনেকে গরুর জন্য সাইটে সার্চ দিতে শুরু করেছেন। অনেকে আগেভাগেই গরু কিনতে চান অনেকেই। আমাদের পরিচিত ১৭টি গরু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গর ক রব ন র র জন য ফ সব ক উপজ ল পছন দ

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ