Prothomalo:
2025-07-30@10:40:30 GMT

দ্রুত অচলাবস্থার নিরসন হোক

Published: 1st, June 2025 GMT

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সংঘর্ষের জেরে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ থাকার ঘটনাটি কেবল উদ্বেগজনক নয়, আমাদের চিকিৎসাসেবার বেহাল চিত্রও তুলে ধরে। হাসপাতালটির অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলমের ভাষ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার পরিচালকের কক্ষে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা প্রবেশ করে নিজেদের মধ্যে তর্কে জড়িয়ে পড়েন, একপর্যায়ে হাতাহাতি করেন। এতে হাসপাতালের কর্মীরাও আহত হন। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) থেকেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা এসে যোগ দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও স্বীকার করেছে, নিরাপত্তাহীনতার কারণেই সেখানে চিকিৎসক ও কর্মীরা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ঢাকার বাইরে থেকে গত কয়েক দিনে নতুন করে অনেক রোগী এসে বিপদে পড়েছেন। তাঁরা অপেক্ষায় আছেন, কখন চিকিৎসাসেবা আবার চালু হবে।

সেবাদানকারী ও সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে আস্থার সম্পর্কের ওপরই হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা টিকে থাকে। সেবাপ্রার্থী কিংবা সেবাদানকারী যেকোনো পক্ষের বা উভয় পক্ষের অনাস্থা থাকলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তার চাক্ষুষ প্রমাণ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।

শনিবার প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো.

সায়েদুর রহমানের সরকারি বাসভবনে চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হয়। একাধিক উপদেষ্টা, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দুজন নেতা, ইনস্টিটিউটের পরিচালকসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সেখানে যেসব চিকিৎসক ও নার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাঁদের হাসপাতালে না পাঠানো এবং বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে ফেরত আসা রোগীদের ফলোআপ চিকিৎসা, বিদেশে আর কোন কোন রোগীকে পাঠানো হতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশেষ সহকারী হাসপাতাল পুরোপুরি শুরু হতে একটু সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন।

কিন্তু সরকারের জানা উচিত যে জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবা তো এক দিনের জন্যও বন্ধ থাকতে পারে না। সেখানে চিকিৎসাসেবারও ঘাটতি ছিল না। আর চিকিৎসাসেবার ঘাটতি থাকলেও কেউ চিকিৎসক ও কর্মীদের ওপর চড়াও হতে পারেন না। এখানে কর্মবিরতি কিংবা ‘বর্জন’ কোনো সমাধান দেবে না।  চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো, জুলাই যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি, মাসিক ভাতা ও পুনর্বাসন করতে হবে বলে যে দাবি জানানো হয়েছে, সেসব পূরণ করার এখতিয়ার তো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেই। এ বিষয়ে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা নিয়ে এর আগেও একাধিকবার অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। উন্নত চিকিৎসাসেবার দাবিতে তাঁদের রাস্তা অবরোধ করতে হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বারবার ধরনা দিতে হয়েছে। এটা কোনোভাবে কাম্য ছিল না।

চক্ষু হাসপাতালের ঘটনার পরও কয়েক দিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারের নীরবতা ছিল দুর্ভাগ্যজনক। মারামারির কারণে একটি হাসপাতালের পরিচালককে কর্মস্থল ত্যাগ করতে হলো, চিকিৎসক ও কর্মচারীদের কর্মবিরতি পালন করতে হলো, তারপরও শুরুতে সংশ্লিষ্টদের ঘুম ভাঙেনি। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অচলাবস্থা নিরসনে অবিলম্বে সরকারের কাছ থেকে কার্যকর ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ প্রত্যাশিত। চক্ষুরোগের চিকিৎসায় সবচেয়ে নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম দিনের পর দিন বন্ধ থাকতে পারে না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক ও সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে ডিসির বাসভবনে হামলার ঘটনায় ১০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের জেরে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বাসভবনে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করেন।

মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ পৌর পার্ক, লঞ্চঘাট, কাঁচাবাজার এলাকাসহ সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে জনগণের মনে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে যান চলাচল ব্যাহত করা হয়। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের পক্ষে মিছিল করা হয়। আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে ও এনসিপির পথসভা নস্যাৎ করতে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করতে জনসাধারণের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।

এ নিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা ও ককটেল নিক্ষেপ, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, জেলা কারাগারে হামলা, জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ১৪টি‌ মামলা করা হলো। সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। ১৪টি মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ১৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৪ হাজার ৫৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৬ জুলাই থেকে গত সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেদিন প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। রাতেই কারফিউ জারি করা হয়। পরে কারফিউর মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। পরে ২০ জুলাই রাত আটটায় কারফিউ ও ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গোপালগঞ্জে ডিসির বাসভবনে হামলার ঘটনায় ১০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা