জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সংঘর্ষের জেরে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ থাকার ঘটনাটি কেবল উদ্বেগজনক নয়, আমাদের চিকিৎসাসেবার বেহাল চিত্রও তুলে ধরে। হাসপাতালটির অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলমের ভাষ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার পরিচালকের কক্ষে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা প্রবেশ করে নিজেদের মধ্যে তর্কে জড়িয়ে পড়েন, একপর্যায়ে হাতাহাতি করেন। এতে হাসপাতালের কর্মীরাও আহত হন। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) থেকেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা এসে যোগ দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও স্বীকার করেছে, নিরাপত্তাহীনতার কারণেই সেখানে চিকিৎসক ও কর্মীরা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ঢাকার বাইরে থেকে গত কয়েক দিনে নতুন করে অনেক রোগী এসে বিপদে পড়েছেন। তাঁরা অপেক্ষায় আছেন, কখন চিকিৎসাসেবা আবার চালু হবে।
সেবাদানকারী ও সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে আস্থার সম্পর্কের ওপরই হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা টিকে থাকে। সেবাপ্রার্থী কিংবা সেবাদানকারী যেকোনো পক্ষের বা উভয় পক্ষের অনাস্থা থাকলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তার চাক্ষুষ প্রমাণ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো.
কিন্তু সরকারের জানা উচিত যে জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবা তো এক দিনের জন্যও বন্ধ থাকতে পারে না। সেখানে চিকিৎসাসেবারও ঘাটতি ছিল না। আর চিকিৎসাসেবার ঘাটতি থাকলেও কেউ চিকিৎসক ও কর্মীদের ওপর চড়াও হতে পারেন না। এখানে কর্মবিরতি কিংবা ‘বর্জন’ কোনো সমাধান দেবে না। চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো, জুলাই যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি, মাসিক ভাতা ও পুনর্বাসন করতে হবে বলে যে দাবি জানানো হয়েছে, সেসব পূরণ করার এখতিয়ার তো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেই। এ বিষয়ে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা নিয়ে এর আগেও একাধিকবার অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। উন্নত চিকিৎসাসেবার দাবিতে তাঁদের রাস্তা অবরোধ করতে হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বারবার ধরনা দিতে হয়েছে। এটা কোনোভাবে কাম্য ছিল না।
চক্ষু হাসপাতালের ঘটনার পরও কয়েক দিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারের নীরবতা ছিল দুর্ভাগ্যজনক। মারামারির কারণে একটি হাসপাতালের পরিচালককে কর্মস্থল ত্যাগ করতে হলো, চিকিৎসক ও কর্মচারীদের কর্মবিরতি পালন করতে হলো, তারপরও শুরুতে সংশ্লিষ্টদের ঘুম ভাঙেনি। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অচলাবস্থা নিরসনে অবিলম্বে সরকারের কাছ থেকে কার্যকর ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ প্রত্যাশিত। চক্ষুরোগের চিকিৎসায় সবচেয়ে নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম দিনের পর দিন বন্ধ থাকতে পারে না।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে হামলা হয়েছে: সংবাদ সম্মেলনে ‘তথ্য আপা’
পুলিশের নির্মম হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তথ্য আপার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এই হামলার আগে তাঁদের ‘টেররিস্ট ট্যাগ’ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে নিরস্ত্র নারীদের ওপর হামলা করা হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
দুই দফা দাবিতে গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালিত ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়। কাকরাইল মসজিদের মোড়ে পৌঁছালে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা করে।
দুই দফা দাবি হলো ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মরত সব জনবলকে সমান গ্রেডে পদ সৃজন করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা এবং কর্তন করা বেতন-ভাতা দ্রুত পরিশোধ করা। এই দুই দাবিতে তাঁরা গত ২৮ মে থেকে অনশন করছিলেন।
‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের অনশন আন্দোলন কমিটির সভাপতি সংগীতা সরকার বলেন, গত ২৮ মে থেকে তাঁরা অনশন আন্দোলন করলেও অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এরপর তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যমুনা অভিমুখে রওনা দিলে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
‘টেররিস্ট’ আখ্যা দিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশেই তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে এমন অভিযোগ করে সংগীতা সরকার বলেন, ‘দেশের প্রশাসনিক আইনি ব্যবস্থা ও সরকার কতটা দুর্বল হলে এ রকম ঘটনা ঘটানো সম্ভব।’ সংগীতার অভিযোগ, মিছিল চলাকালে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের লাথি মারেন এবং মারধর করেন।
ঝালকাঠির সদর উপজেলার তথ্যসেবা কর্মকর্তা সুমাইয়া আক্তার বলেন, তাঁদের ওপর হয়ে যাওয়া এই হামলার ভিডিও, ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে তাঁদের ফোন করে সে কথা বলছেন। এটা তাঁদের জন্য লজ্জাকর। তাঁরা দাবি আদায় না হলে বাড়ি ফিরতে চান না। এই লজ্জার মুখ কাউকে দেখাতে চান না।
নারীর জন্য তথ্যপ্রযুক্তি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, অধিকার বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি, আইন, কৃষি ও ব্যবসায় সুবিধা দিতে ১৪ বছর আগে শুরু হয়েছিল ৬০৩ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘তথ্য আপা’ প্রকল্প। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি পরিচালনা করে।
তথ্য আপাদের অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ প্রকল্পের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন পাননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে গত মাসে জুলাইয়ের বেতন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো বকেয়া রয়েছে পাঁচ মাসের। ইতিমধ্যে তাঁদের জানানো হয়, প্রকল্পের অফিস গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পরে প্রকল্প চালু রাখার দাবিতে ১৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা ও ১৯ আগস্ট সচিবালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন তাঁরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের।
তবে অর্থ ছাড় না হওয়ায় পাঁচ মাস ধরে প্রকল্পের বেতন-ভাতা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। মাসের পর মাস বেতন না পাওয়ায় এ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাই তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মীরা গত বুধবার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন।