মাদারীপুর সদর হাসপাতালে দুদকের অভিযান
Published: 1st, June 2025 GMT
মাদারীপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে রবিবার (১ জুন) দুপুরে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম।
অভিযানকালে হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট পরিদর্শন, সিটিস্ক্যান মেশিন পর্যবেক্ষণ, বিগত অর্থ বছরের তেলের বিল ভাউচার পর্যালোচনা, খাবারের ক্যান্টিন পরিদর্শন, বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শন ও রোগীদের সরকারি সেবা গ্রহণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলেন দুদকের মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আক্তরুজ্জামান ও উপসহকারী পরিচালক মো.
সহকারী পরিচালক আক্তরুজ্জামান জানান, আইসিইউ ইউনিট পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৩ সালে আইসিইউ ইউনিটে সকল প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ইন্সটল করা হয়েছে। পাঁচ জন চিকিৎসক ও ১৪ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তবে এখনো আইসিইউ ইউনিট চালু করা হয়নি। অচল অবস্থায় পরে আছে।
আরো পড়ুন:
ডাসারে মাইজপাড়া খাল উদ্ধারে অভিযান
ঝালকাঠিতে বিআরটিএ’র কার্যালয়ে দুদকের অভিযান
তিনি জানান, সিটিস্ক্যান মেশিন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সিটিস্ক্যান মেশিনের বেড প্রায় ১ মাস ধরে নষ্ট। এ বিষয়ে মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ শুরু করতে পারবে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তিনি আরো জানান, বিগত অর্থ বছরে সদর হাসপাতালের তৎকালীন প্রধান সহকারী কাউছার মিয়া জেনারেটরের তেল বরাদ্দ বাবদ ২৬ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল/ভাউচার সরবরাহ করতে পারেনি। সমুদয় অর্থ পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ হয়েছে মর্মে টিমের নিকট প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।
সহকারী পরিচালক আক্তরুজ্জামান জানান, খাবারের মান উন্নয়ন, রোগীদের যথাযথ সেবা প্রদানে কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট টিম।
অভিযানকালে উদ্ঘাটিত ও সংগৃহীত তথ্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দুদক কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
ঢাকা/বেলাল/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য ন সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)