শিক্ষার পাশাপাশি রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক, অর্থনৈতিকসহ দেশের বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বিশেষ মর্যাদা’ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল শিক্ষক। এ দাবি জানিয়ে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা।

৮৩টি বিভাগের পক্ষ থেকে দেওয়া স্বাক্ষরিত এ স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিশেষ মর্যাদা প্রদান করে শিক্ষা ও গবেষণায় বিশেষ বরাদ্দ দান, স্বতন্ত্র বেতনকাঠামোসহ শিক্ষকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা সময়ের দাবি।

স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুস সালাম, স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম এ কাউসার, স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবা সুলতানা, শামসুন্নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো.

আনোয়ারুল আজিম, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ প্রমুখ।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের প্রাচীন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শতবর্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার পাশাপাশি এই জনপদের রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক অগ্রগতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বুদ্ধিভিত্তিক দিকনির্দেশনা, রাজপথের নেতৃত্ব এবং সম্মুখসমরে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনন্যসাধারণ ভূমিকা সুবিদিত।’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘নব্বইয়ের সফল স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানসহ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন–সংগ্রামে চালকের আসনে ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। তারই ধারাবাহিকতায় ফ্যাসিবাদী সরকারের জুলুম-নির্যাতন ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সূচনা এবং স্বৈরাচারী সরকার উৎখাত করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নবযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাই নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রেখেছেন। ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশের সরকার পরিচালনায়ও নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রাক্তনীরা।’

স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়, ‘জ্ঞানের বিকাশ, নতুন জ্ঞান সৃজন ও মুক্তবুদ্ধিচর্চার মাধ্যমে আলোকিত মানবসম্পদ তৈরির পাশাপাশি জাতি বিনির্মাণে সব ক্ষেত্রে অবদান রাখার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা ক্ষেত্রে উপেক্ষার শিকার হয়ে চলেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের পদচারণ থাকলেও মেধার লালন ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরিতে পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বরাবরই অনীহা পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঙ্ক্ষিত মানের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ ও অবকাঠামো তৈরি করা কখনোই সম্ভব হয়নি।’

এ জন্য ‘বিশেষ মর্যাদা’ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কারণ, জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার মধ্যেই এ বিশ্ববিদ্যালয় তার ভূমিকা সীমাবদ্ধ রাখেনি। বাংলাদেশ নামক একটি জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয়, এর রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় এ বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিক অবদান রেখে চলছে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অধিকতর বিকাশ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য একে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করে শিক্ষা ও গবেষণায় বিশেষ বরাদ্দ দান, স্বতন্ত্র বেতনকাঠামোসহ শিক্ষকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা সময়ের দাবি।’

এ বিষয়ে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে যত গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন হয়েছে, সব আন্দোলনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান ছিল অগ্রগামী। শুধু তাই নয়, শিক্ষা ও গবেষণায়ও এই বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তিনি বলেন, ‘এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিশেষ মর্যাদা নেই। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার নজির রয়েছে। আমরা চাই, সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ম রকল প ত শ ক ষকদ র অবদ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে ভবন থেকে পড়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের লিংক রোড স্টেশন এলাকায় পাঁচতলা একটি ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম শেখ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী (৪৮)। আজ বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মেজবাহ উদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাতারিয়া এলাকায়। তিনি ওই এলাকার শেখ আমান উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে। তিনি কক্সবাজারের লিংক রোড এলাকার বিসিক শিল্পনগরীর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে জ্বালানি সরবরাহ করতেন। পরিবার নিয়ে ওই ভবনেরই দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি।

নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের দাবি, আজ ফজরের নামাজ শেষে তিনি বাসার ছাদে গিয়েছিলেন। পরে ভবনের নিচে মেজবাহ উদ্দিনের মরদেহ পাওয়া যায়। কেউ পরিকল্পিতভাবে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে নিচে ফেলে মেজবাহকে হত্যা করেছেন।

জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস খান প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের দাবি, এটি পরিকল্পিত হত্যা। ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে মেজবাহ উদ্দিনকে একাই ছাদে উঠতে দেখা গেছে। তাঁর মাথার টুপি, পরনের জামা, প্যান্ট, জুতা সবই ঠিকঠাক ছিল। কেউ পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন কি না, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ