জকিগঞ্জে কুশিয়ারার তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে লোকালয়ে
Published: 2nd, June 2025 GMT
সিলেটের জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। গতকাল রোববার রাত আড়াইটার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রাম ও আজ সোমবার ভোরের দিকে বাখরশাল গ্রাম ও সকাল আটটার দিকে খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল গ্রামের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।
পৌর শহরের কাছে কেছরী গ্রামের বাঁধের ওপর দিয়ে কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকছে। এ ছাড়া সদর ইউনিয়নের ছবড়িয়া, সেনাপতিরচক, সুলতানপুর ইউপির ইছাপুর, খলাছড়া ইউপির একাধিক স্থান, বারঠাকুরী ইউপির পিল্লাকান্দীসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক জায়গায় বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। স্থানীয় লোকজন বালুভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষায় চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামে কুশিয়ারা নদীর প্রায় ১০০ ফুট ও বাখরশাল গ্রামে প্রায় ৪০ ফুট বাঁধ, খলাছড়া ইউপির লোহারমহল এলাকায় প্রায় ৩০ ফুট বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ওই সব এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদসহ বাড়িঘর তলিয়ে যাচ্ছে। এলাকার লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছেন।
এদিকে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তীরবর্তী এলাকার লোকজনের বসতঘরে ইতিমধ্যে পানি ঢুকে গেছে। গতকাল রাত থেকে তীরবর্তী এলাকার লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বেরিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করেছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, উপজেলায় ৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া নৌকাসহ উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে কতটি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত নন। বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড ভালো বলতে পারবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার দেড় থেকে মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় পানি ‘আউট অব কন্ট্রোল’। এ কারণে বাঁধ ভেঙেই হোক বা উপচেই হোক, পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এল ক র ইউপ র উপজ ল ল কজন
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।