ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের সঙ্গে শাহরিয়ারের পরিবারের সাক্ষাৎ
Published: 2nd, June 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যর পরিবারের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আজ সোমবার উপাচার্যের সভাকক্ষে এ সাক্ষাতের সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের বিস্তারিতভাবে অবহিত করেন উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মো.
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছে।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে—সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেন্দ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার, মামলার অগ্রগতি তদারকি ও নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ, সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় সভার আয়োজন প্রভৃতি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃঢ়ভাবে আশ্বাস দিয়েছে যে এই মর্মান্তিক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে তাদের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবেশ রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এখানকার বনজ, জলজ ও খনিজ সম্পদের বৈচিত্র্য আমাদের জীবনধারার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। তবে শিল্পায়ন, নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অসচেতনতা পরিবেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এই প্রেক্ষাপটে পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এসব আইন কতটা কার্যকর, কতটুকই-বা প্রয়োগ করা হচ্ছে? এসব আইন সম্পর্কে জনসচেতনতার যেমন অভাব, তেমনি আছে প্রায়োগিক সীমাবদ্ধতা।
পরিবেশ রক্ষায় আইনের মধ্যে আছে– বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত)। এটি পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ), শিল্পকারখানার অনুমোদন প্রভৃতি বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। দ্বিতীয়ত, বন আইন, ১৯২৭ ও সংশোধনীসমূহ, যা বনভূমি সংরক্ষণ এবং অবৈধ বন উচ্ছেদ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তা ছাড়া ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ বায়ুদূষণ রোধে ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩-ও প্রাসঙ্গিক। এটি নদী, খাল, জলাশয় সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আইন, যা জনগণের পানির অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। তা ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১ কঠিন ও বিপজ্জনক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
উল্লিখিত আইনগুলোতে পুলিশ বা অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সরাসরি কর্তৃত্ব আংশিকভাবে উল্লেখ রয়েছে, তবে তা সাধারণত সহায়ক ভূমিকার পর্যায়ে সীমাবদ্ধ। যেমন বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুসারে পরিবেশ অধিদপ্তরই পরিবেশ সংরক্ষণের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে এ আইনের ৪ক(১) উপধারা অনুসারে, এই আইনের অধীন কোনো ক্ষমতা প্রয়োগ বা কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক বা তাঁর কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা অন্য কোনো সরকারি বা সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করতে পারবেন এবং এইরূপ অনুরোধ করা হলে এই সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ সহায়তা প্রদান করবে।
বন আইন, ১৯২৭-এর ৫২ ধারা অনুসারে পুলিশ কর্মকর্তা বাজেয়াপ্তযোগ্য সম্পত্তি জব্দ করতে পারবেন; ৬৪ ধারা অনুসারে পরোয়ানা ব্যতীত অপরাধ সংঘটনকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন; ৬৬ ধারা অনুসারে যে কোনো বন অপরাধ সংঘটনে বাধা প্রদান করতে পারবেন। এই আইনের ৭৯ ধারা অনুসারে বন সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় জনগণ পুলিশ অফিসারকে তথ্য প্রদান এবং গ্রেপ্তারে সহায়তা করবে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-তে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক স্বয়ং বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট জেলার কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বা তৎকর্তৃক মনোনীত কোনো বন কর্মকর্তাকে আইন প্রয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এ আইনের অধীন অনুসন্ধান কমিটি, ইট প্রস্তুত নিষিদ্ধকরণ, লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্সের শর্ত ও মেয়াদ পর্যবেক্ষণ, লাইসেন্স স্থগিত ও বাতিলকরণ, ইটভাটা পরিদর্শন এবং আইনের ধারা লঙ্ঘন ও অপরাধ আমলে নেওয়া, তদন্ত করা;
সর্বোপরি এ আইন প্রয়োগের কোনো ক্ষেত্রেই পুলিশ তথা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩-তে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সদস্য কর্তৃক নির্বাচিত নির্বাহী কমিটিকে আইন প্রয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এ আইনের ৯ নম্বর ধারা বিশ্লেষণে দেখা যায়, নির্বাহী কমিটিতে ১৫টি মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন অধিদপ্তর সদস্য থাকলেও আইন প্রয়োগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থাকে এ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১-এ পরিবেশ অধিদপ্তর এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে এই বিধিমালা প্রয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, যেখানে পুলিশের ভূমিকার উল্লেখ নেই।
সার্বিকভাবে দেখা যায়, পরিবেশসংশ্লিষ্ট অধিকাংশ আইনে পুলিশকে পরোক্ষভাবে সহায়ক ভূমিকায় রাখা হয়েছে, তবে সরাসরি ক্ষমতা সীমিত। এ কারণে এসব আইন বাস্তবায়নে প্রশাসনিক সমন্বয় অপরিহার্য।
প্রচলিত পরিবেশ আইনগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিতকল্পে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ক্ষমতা প্রদান করে যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিবেশ আইনের কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় সরকার ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে পরিবেশ সংরক্ষণের কাজকে শক্তিশালী করতে হবে। শিক্ষা ও প্রচারের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাজেট ও প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষ, আইনজীবী, ভুক্তভোগী কর্তৃক সরাসরি অভিযোগ এবং পুলিশ কিংবা সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিবেশ আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ গ্রহণ, তা অনুসন্ধান এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মামলা করার বিধান প্রবর্তন করা যেতে পারে।
মো. শাহ্জাহান হোসেন, পিপিএম: উপ-পুলিশ কমিশনার ,সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন
বিভাগ, ডিএমপি, ঢাকা
princeofbuilders@gmail.com