পাবনার চাটমোহরে নদের পাড় থেকে ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে রাখা পাঁচ মাসের শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনা নাটকীয় মোড় নিয়েছে। পুলিশের দাবি, বাল্যবিবাহের শিকার শিশুটির মা (১৫) সাংসারিক অশান্তি থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্তানকে নদে ফেলে হত্যা করেছেন। ঘটনার পর ওই নারী জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে এ কথা স্বীকার করেছেন। আদালতেও জবানবন্দি দিয়েছেন।

আজ সোমবার দুপুরে সহকারী পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) আরজুমা আক্তার সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান। এ সময় চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলমসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুনবারান্দায় ঘুমিয়ে রাখা ৫ মাসের শিশুর লাশ মিলল নদের পাড়ে৩১ মে ২০২৫

ঘটনাটি পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের একটি গ্রামে। গত শনিবার সকালে বাড়িতে ঘরের বারান্দায় শিশুটি ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। এরপর বাড়ির পাশের বড়াল নদ থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার হয়। ঘটনাটি নিয়ে ওই দিনই প্রথম আলো অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা আরজুমা আক্তার বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছিল। শিশুটির পরিবারের সঙ্গে কারও বিরোধ আছে কি না, তা জানার চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে শিশুটির মায়ের কথাবার্তার মধ্যে কিছু অসংগতি পাওয়া যায়। পরে থানায় এনে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি নিজেই তাঁর শিশুকন্যাকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেন।

শ্রাবন্তী রানীর স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার আরজুমা আক্তার বলেন, মেয়েটি বাল্যবিবাহের শিকার। পরিবারের সব কাজ তাঁকে করতে হয়। চারটি গরু, ছাগল ও হাঁস–মুরগি দেখাশোনা করতে হয়। এর মধ্যেই তাঁর মেয়েশিশুর জন্ম হয়। শিশুটির কান্নায় রাতে তিনি ঘুমাতে পারতেন না। দিনে সংসারের কাজ করতে হতো। এসব কারণেই মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে নিজের সন্তানকে বড়াল নদে ফেলে হত্যা করেন। পরে নিজেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন নাটক সাজান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, ঘটনার পর শিশুটির বাবা বাদী হয়ে চাটমোহর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলাটিতেই কিশোরী মাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। ওই আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সন্তানের লাশ উদ্ধারের পর ওই কিশোরী মা বলেছিলেন, সকাল ছয়টার দিকে তিনি শিশুমেয়েকে ঘরের বারান্দায় ঘুম পাড়িয়ে বাড়ির বাইরে গরুর খড় আনতে যান। ফিরে দেখেন মেয়ে বিছানাতে নেই। তিনি চিৎকার–চেঁচামেচি করে বাড়ির এদিক–ওদিক মেয়েকে খুঁজতে থাকেন। ঘণ্টাখানেক খোঁজাখুঁজি করেও মেয়ের সন্ধান পাননি। সকাল সাতটার দিকে বাড়ির পাশের বড়াল নদের পাড়ে কচুরিপানার ভেতর স্থানীয় লোকজন শিশুটির লাশ দেখতে পান। পরে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

২২ অনাথ কাশ্মীরি শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী

অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানি গোলায় ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরে যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের ২২ অনাথ শিশুর লেখাপড়ার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওই শিশুরা পুঞ্চ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা।

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠে স্নাতক হওয়া পর্যন্ত ওই শিশুদের পড়াশোনার সব খরচ রাহুল গান্ধী বহন করবেন। সেই খরচের প্রথম কিস্তির টাকা বুধবার ওই পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন জম্মু–কাশ্মীরের কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা।

পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল কয়েকজন জঙ্গি। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন মোট ২৬ জন পর্যটক। প্রত্যাঘাতের জন্য ভারত শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। চার দিনের সেই লড়াইয়ের সময় জম্মুর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবল গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তান। সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন গ্রামবাসী। আহত হয়েছিলেন ৭০ জনের বেশি। যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, ওই ২২ শিশু ওইসব পরিবারেরই সন্তান। তাদের কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ–বা দুজনকেই হারিয়েছে। কারও পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

রাহুল গত মে মাসে ওইসব এলাকায় গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনাথ শিশুদের স্কুলেও গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন অনাথ শিশুদের তালিকা তৈরি করতে। সরকারি নথির সঙ্গে সেই নাম মিলিয়ে ২২ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়। পুঞ্চ জেলা সফরের সময় রাহুল তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ওই শিশুদের স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনার সব খরচ তিনি দেবেন।

পাকিস্তানের গোলার আঘাতে মারা গিয়েছিলেন ১২ বছরের দুই যমজ ভাই–বোন জাইন আলি ও উরবা ফতিমা। রাহুল তাঁদের স্কুলে গিয়েছিলেন। সেই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের বন্ধুদের হারিয়েছ। সে জন্য তোমাদের মন খারাপ। ওই মৃত্যু আমাকেও দুঃখ দিয়েছে। তোমাদের দুঃখ আমি বুঝি। কিন্তু তোমাদের জন্য আমি গর্বিত। তোমরা ভয়কে জয় করেছ। রাহুল ওই শিশুদের বলেছিলেন, ভয়কে জয় করতে হবে। সুদিন আসবে। সব আবার স্বাভাবিক হবে।

ওই ২২ জনের জন্য বছরে কত খরচ হবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তা জানাননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ