গাজীপুরে ৭ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ
Published: 2nd, June 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরে দুই সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের জন্য সাতজন সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
সোমবার (২ জুন) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ ভূঁইয়া।
তদন্তে প্রমাণিত হয়, শ্রীপুর উপজেলার তৎকালীন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ এবং সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিকদার মো.
আরো পড়ুন:
হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার জবির অধ্যাপকের জামিন
জবির ওয়েবসাইটে শিক্ষকদের প্রোফাইল হালনাগাদের দাবি
এ সংক্রান্ত পত্র গত ১৯ মে স্বাক্ষর করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহফুজা খাতুন। পত্রে সাত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে অধিদপ্তরকে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়।
শাস্তির মুখে পড়া সহকারী শিক্ষকরা হলেন, লুৎফর রহমান ফরহাদ (মুলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), জহিরুল হক (মাওনা ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), মো. আনিছুর রহমান (টেপিরবাড়ি দেওচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), আবু কাইয়ুম (ধনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), আবুল কালাম ফকির (বেলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), মো. আনোয়ার হোসেন (সিংগারদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) ও মো. জসিম উদ্দিন (পূর্ব নিজ মাওনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)।
গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ ভূঁইয়া বলেন, “বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা অধিদপ্তর থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। নির্দেশনার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’
অভিযোগকারী শিক্ষকরা নূর মোহাম্মদ ও হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ আনেন, যা তদন্তে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়।
ঢাকা/রফিক/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত ব যবস থ সহক র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)