মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট সাধারণ মানুষ– একথা স্বীকার করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। মূল্যস্ফীতি কমাতে নানা উদ্যোগের কথা বললেও তাদের করভার লাঘবে আগামী অর্থবছরের জন্য তিনি কোনো সুখবর দেননি, দিয়েছেন পরের দুই বছরের জন্য। 
আবার ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপসহ অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক কারণে ব্যবসায়িক কোম্পানির পরিচালন খরচ বেড়েছে, কমেছে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা। তা সত্ত্বেও মার্চেন্ট ব্যাংকের করভার ১০ শতাংশ কমালেও অন্য সব কোম্পানির করপোরেট বা প্রাতিষ্ঠানিক করহার চলতি বছরের মতো অপরিবর্তিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। যদিও কৌশলে তালিকাভুক্ত ও অতালিতাভুক্ত কোম্পানির প্রাতিষ্ঠানিক করহারের ব্যবধান সামান্য বাড়িয়েছেন।
গতকাল ঘোষিত বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা ২০২৬-২৭ এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার ঘোষণা দিয়েছেন। জুলাইযোদ্ধাদেরও করমুক্ত আয়সীমা মুক্তিযোদ্ধাদের সমপর্যায়ে (সোয়া ৫ লাখ টাকা) নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে আগামী নয়, পরের দুই অর্থবছরের জন্য।
তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ এবং অতালিকাভুক্ত হলে ৪০ শতাংশ করহার বহাল থাকছে। সিগারেট বা বিড়ি প্রস্তুতকারক এবং মোবাইল অপারেটর কোম্পানির করহার বর্তমানের ৪৫ শতাংশ বহাল থাকছে। তবে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ১০ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে করহার ৪০ শতাংশ করহার বহাল রেখেছেন। তবে আইপিওতে ২০ শতাংশ শেয়ার ছাড়লে সংশ্লিষ্ট বছরে ১০ শতাংশ রেয়াত নেওয়ার নতুন সুযোগ দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এসব কোম্পানির বাইরে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার সাড়ে ২২ শতাংশ, অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার সাড়ে ২৭ শতাংশ বহাল রেখেছেন তিনি। 
কর ব্যবধান বাড়াতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করভার আড়াই শতাংশ কমাতে চলতি বাজেটের তুলনায় কিছুটা ছাড় দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। চলতি বাজেট অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানি যদি পুরো আয়ের পাশাপাশি একক ব্যয়ে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা এবং বছরের সর্বোচ্চ ৩৬ লাখ টাকার ব্যয়ের অতিরিক্ত সব ব্যয় ব্যাংকিং মাধ্যমে সম্পন্ন করে, তবে কর দিতে হবে ২০ শতাংশ। এই আড়াই শতাংশ কর ছাড় নিতে নতুন বাজেটে তিনি আয়ের পুরোটা ব্যাংকিং মাধ্যমে গ্রহণের শর্ত দিয়েছেন।
একইভাবে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিরও ব্যাংকিং মাধ্যমে লেনদেনের মাধ্যমে আয়, ব্যয় ও বিনিয়োগে স্বচ্ছতা এনে বিদ্যমান সাধারণ করহারের থেকে আড়াই শতাংশ করছাড় নেওয়ার সুযোগ চলতি বাজেটে আছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র ন র করহ র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

শেষে এসে ‘বিপদে’ ওয়াসা

একের পর এক জটিলতায় পড়ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পটি। অর্থ বরাদ্দের সংকট, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বকেয়া নিয়ে বিরোধ, কাজের ধীরগতি—সব মিলিয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ বর্ধিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

প্রায় ৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ২২টি ওয়ার্ডের ২০ লাখ মানুষের জন্য আধুনিক পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। এই সময়ে এসে নানা জটিলতায় ‘বিপদে’ পড়েছে ওয়াসা।

‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এরপর প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। মেয়াদ বেড়েছে তিন দফা। ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি।

বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।প্রকল্প পরিচালক, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিং

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই নির্বাচনী মৌসুমে প্রকল্প বরাদ্দে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। অর্থ না এলে প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পড়বে। ২০২৭ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শেষ না হলে এই পরিকল্পনা পিছিয়ে যাবে।

জানতে চাইলে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছরই অর্থ বরাদ্দের অভাবে অনেক কাজ আটকে ছিল। এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পেলে সময়সীমা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের বিষয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা।

প্রকল্পের নথিতে বলা হয়, দৈনিক ১০ কোটি লিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পয়োশোধনাগার, দৈনিক ৩০০ ঘনমিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেপটিক ট্যাংকের বর্জ্য শোধনাগার, ২০০ কিলোমিটার পয়োনালা নির্মাণ করা হবে। এতে চট্টগ্রাম নগরের ২২টি ওয়ার্ডের ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্রকল্পের আওতায় আসবে। আর উন্নত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার সুফল পাবেন ২০ লাখ মানুষ।

এখনো কাজ বন্ধ, অর্থের টানাপোড়েন

প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড উপঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ না করায় সাতটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছে।

হালিশহর এলাকায় পাইপ বসানোর কাজ করছে মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিং, জাহান এন্টারপ্রাইজ, দেশ কন্ট্রাক্টরস অ্যান্ড ডেভেলপার লিমিটেড, ইনাস এন্টারপ্রাইজ, পোর্ট হারবার ইন্টারন্যাশনাল ও পাওয়ার বাংলা করপোরেশন। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তাদের প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার তাইয়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় উপঠিকাদাররা দুটি শর্তে কাজ শুরুতে রাজি হয়েছেন—আগামী সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি।

জানতে চাইলে এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকল্প পরিচালক আহাদুজ্জামান বাতেন বলেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।’

আহাদুজ্জামান জানান, ‘মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় আমরা দুটি শর্ত দিয়েছি—সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিল পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি। এ দুই শর্তে কাজ আবার শুরু করছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টানা দুই মাস আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে
  • তিন মাসে গৃহকর আদায় কমেছে ৩০ কোটি টাকা
  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন
  • সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 
  • ২৯ দিনে প্রবাসী আয় ২৪৩ কোটি ডলার
  • শেষে এসে ‘বিপদে’ ওয়াসা