ঢাকার সাভারের ঢাকা-আরিচা, আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে বেড়েছে গাড়ির চাপ। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে গাড়ির ধীরগতি থাকলেও কোথাও কোনো যানজটের চিত্র দেখা যায়নি।

মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ কাজ করতে দেখা যায়।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বারবাড়িয়া, কালামপুর, ধামরাই, নবীনগর, রেডিও কলোনী, সাভার বাসস্ট্যান্ড, হেমায়েতপুর, আমিনবাজার এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, নবীনগর, সাভার বাসস্ট্যান্ড ও হেমায়েতপুর এলাকায় সার্ভিস লেনে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। তবে মূল লেনে কোনো যানজটের চিত্র দেখা যায়নি।

একই অবস্থা আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের আশুলিয়া, জামগড়া, ইউনিক এলাকায়। এসব রাস্তায় জলাবদ্ধতা ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ চলার কারণে যান চলাচলে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। জামগড়া ও বাইপাইলে কিছু পরিবহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

অন্যদিকে নবীনগর-চন্দ্রা সড়কের বাইপাইল, জিরানি, চক্রবর্তীসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কোনো যানজটের চিত্র দেখা যায়নি।

শিল্পাঞ্চল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক কারখানাগুলো ছুটি না হওয়ায় এখনও সড়কে যাত্রীর ভিড় বৃদ্ধি পায়নি। দুই এক দিনের মধ্যেই বাড়তি যাত্রীর চাপ দেখা যাবে। তখন কিছুটা যানজট ও ধীরগতি বাড়তে পারে।

এদিকে ঈদযাত্রাকে সামনে রেখে সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রস্তুতি নিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।

সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছালেহ আহমেদ বলেন, “গতকাল রাতে গাড়ির কিছুটা চাপ ছিল। সকাল থেকে আছে, তবে কোনো সমস্যা নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চলছে। গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। সাভার হাইওয়ে থানা আমিনবাজার থেকে জিরানী পর্যন্ত ও নবীনগর, বাইপাইলে ২৪ ঘণ্টা ট্রাফিক ডিউটি, মোবাইল ডিউটিতে কাজ করছে। আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি, যাতে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে ঈদ যাত্রা করতে পারে।”

ঢাকা/সাব্বির/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক র ব এল ক য় ধ রগত য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

নভেম্বরে বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির

বাড়ির সামনে ১৫ শতক জমিতে সবজি আবাদ করেছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বয়রা গ্রামের কৃষক শাম্মত আলী (৬০)। পালংশাক, মুলা, ডাঁটা ও মরিচের বীজ বুনেছেন তিনি। মরিচের বীজ বোনার দুই দিন পর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে বীজ পচে গেছে। নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে তিনি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

ইতিমধ্যে ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান কাটতে শুরু করেন কৃষকেরা। এ ছাড়া শীত মৌসুমকে সামনে রেখে কৃষকেরা সবজি চাষ শুরু করেছেন। ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলগুলোতে বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়। তবে নভেম্বরের শুরুতে টানা বৃষ্টি এসব ফসলের ওপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর প্রভাব বাজারেও পড়তে পারে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ১৩টি ‍উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার শর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে শর্ষে আবাদ করা যাচ্ছে না। ২১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বাঁধাকপি, ফুলকপি, করলা, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়ার কিছুটা সমস্যা হতে পারে। বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।

নভেম্বরের বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. পারভেজ আনোয়ার বলেন, নিম্নচাপের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। নভেম্বরে এমন বৃষ্টি অপ্রত্যাশিত। ইতিমধ্যে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকেরা ধান শুকাতে সমস্যায় পড়বেন। যাঁরা কাটতে পারেননি, তাঁদের জমিতে পানি ওঠায় ধানের অপচয় বেশি হবে। রবি ফসলের ক্ষেত্রে ভুট্টা, ডাল-জাতীয় শস্য ও শর্ষে লাগানো দেরি হয়ে যাবে। ফসল লাগাতে দেরি হলে পরে বোরো ফসল লাগাতেও দেরি হয়ে যাবে।

অধ্যাপক পারভেজ আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, শীতকালীন সবজি যাঁরা দেরিতে লাগাচ্ছেন, তাঁদের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। আগাম যাঁরা আবাদ করেছেন, অতিবৃষ্টির কারণে পচে যাবে এবং রোগবালাই ও পোকার আক্রমণও বাড়বে। সব মিলিয়ে ধান, রবি শস্য ও শীতকালীন সবজি—সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে অসময়ের বৃষ্টির কারণে।

কৃষক শাম্মত আলী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মরিচ বুনছিলাম। বৃষ্টিতে সব পইচ্চা গেছে। আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সব গাইব হয়ে গেছে। আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি হইছে। এমন বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছিন না। এমন সময়ে ছিডাছাডা বৃষ্টি হইলেও এমন বৃষ্টি আর কখনো হয় নাই।’

গতকাল শনিবার রাত আড়াইটা থেকে রোববার সকাল ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ময়মনসিংহ আবহাওয়া কার্যালয়ের উচ্চ পর্যবেক্ষক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৪টা ২৫ মিনিট থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

ময়মনসিংহ শহরের দীঘারকান্দা এলাকার লাল মিয়া বলেন, ‘২ কাডা জমিতে শাকসবজি করছিলাম। বৃষ্টিতে সব ক্ষতি হইয়া গেছে। এমন টাইমে তো বৃষ্টি হয় না।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর মাসের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় সবজি লাগানো কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। শর্ষে আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, বৃষ্টির কারণে লাগাতে দেরি হলে অর্জন কিছুটা কম হবে। এখন শর্ষে আবাদের ভালো সময়। এ সময় শর্ষের বীজ বুনতে না পারলে আবাদ কমে যাবে। বৃষ্টি কয়েক দিনের মধ্যে থেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ