ঈদযাত্রায় গণপরিবহনগুলোকে সরকার নির্ধা‌রিত ভাড়া নেওয়ার নি‌র্দেশনা দি‌য়ে‌ছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। একইস‌ঙ্গে তি‌নি যাত্রাপথে ডাকা‌তি ও চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর ব‌্যবস্থা নেওয়ার কথাও জা‌নি‌য়ে‌ছেন।

মঙ্গলবার (৩ জুন) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা জানান।

উপ‌দেষ্টা ব‌লেছেন, ঈদযাত্রায় চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর অবস্থানে আছে সরকার। চাঁদাবাজি যে-ই করুক, তার দলীয় পরিচয় বিবেচনায় না নিয়েই ক‌ঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তি‌নি ব‌লেন, ঈদের যাতায়া‌তে বাস ডাকা‌তি ব‌ন্ধে আইনশৃঙ্খলা বা‌হিনীর কড়া নজরদা‌রির পাশাপা‌শি বা‌সে যাত্রী‌দের ছ‌বি তোলার নি‌র্দেশনা দেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, অনেক সময় যাত্রীর ছদ্মবেশে অনেক ডাকাত বাসে ওঠে। এ সমস্যা এড়াতে দূরপাল্লার সব পরিবহনে যাত্রীদের ছবি নেওয়া হবে। বাসের প্রথম স্টপেজ থেকে শেষ স্টপেজ পর্যন্ত যারা উঠবে, সবার ছবি নিতে হবে। 

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ধরেন, আমিনবাজারে যাত্রী ওঠানো বন্ধ হবে। সেখানেই সব যাত্রীর ছবি তুলে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। কিছু বাস আছে সাভারেও যাত্রী ওঠায়। তাদেরকে সাভার থেকেও ছবি তুলতে হবে। প্রতিটি বাসে তিনজন করে লোক থাকে। যদি আমার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তারা সঙ্গে সঙ্গে মালিকপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করবে।

ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যা‌বে না, জা‌নি‌য়ে উপ‌দেষ্টা ব‌লেন, আমরা এবং বাস মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা বসেছিলাম। গতবার নির্বিঘ্নে ঈদযাত্রা করতে পেরেছি। এটা আপনারাও (সাংবাদিক) প্রচার করেছেন। আমরা আশা করছি, এবারের ঈদযাত্রাও নির্বিঘ্ন হবে। গতবার তারা যাওয়ার সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিয়েছিল। কিন্তু, ফেরার পথে অল্প কিছু জায়গায় নির্ধারিত ভাড়া নেয়নি। এবার যেন আসা এবং যাওয়ার পথে সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হয়, সেজন্যই আমরা বসেছিলাম। মালিকপক্ষ সম্মত হয়েছে, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেওয়া হবে না।

“আমরা অনেক সময় দেখেছি, ঈদের মৌসুমে যেসব ড্রাইভার দক্ষ না, তাদেরকেও বাস চালাতে দেওয়া হয়। কিন্তু, আমরা তাদের অনুরোধ করেছি, অদক্ষ ড্রাইভাররা কোনোভাবেই যেন বাস চালাতে না পারেন। তাদেরকে বাস চালাতে দিলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে,” যোগ ক‌রেন উপ‌দেষ্টা। 

দেশের কোনো জায়গায় যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখছে, জা‌নি‌য়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ব‌লেন, আশা করছি, কোনো সমস্যা হবে না। আপনারা নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করুন।

এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদাবক্স চৌধুরী, মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান খান শিমুল বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র ন র ধ ঈদয ত র য়

এছাড়াও পড়ুন:

অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ

চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।

এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।

বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।

এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেই

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা

অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।

সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল