কোরবানীর পশুর হাটের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে র্যাব-১১
Published: 3rd, June 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জে সড়ক ও নদী পথে জোরপূর্বক গরুর ট্রাক বা ট্রলারে দুষ্কৃতিকারীরা কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সেটির দৃষ্টিগোচর হওয়ায় ইতোমধ্যে র্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি এ ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রেখে আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। হাটগুলোতে চাঁদাবাজি বন্ধে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় র্যাব এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি জাল টাকা সনাক্ত করতে প্রত্যেকটি হাটে র্যাবের পক্ষ থেকে মেশিন দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে সিদ্ধিরগঞ্জের ২নং ঢাকেশ্বরী ইব্রাহিম টেক্সটাইল মিলের বালুর মাঠের অস্থায়ী কুরবানীর পশুর হাট পরিদর্শন শেষে র্যাব-১১’র অধিনায়ক লে.
এসময় অধিনায়ক লে. কর্ণেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে আমাদের দায়িত্বকে তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে।
প্রথমে ঈদের পূর্বে ঈদের দিন একটা স্পেশাল ঈদ জামাতকে কন্দ্রে করে এবং ঈদের পরে বিশেষ করে সব জায়গায় হাটকে কেন্দ্র করে রোড প্রোটেকশন, রাস্তায় জ্যাম এবং ঘরমুখো মানুষরা গ্রামের বাড়িতে যাবে তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এগ্রেসিভ পেট্রোল, এক্সটেনসিভ পেট্রোল পরিচালনা করা হবে মহাসড়কগুলোতে।
ঈদের দিন জামাতকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা দেয়া হবে এবং ঈদের পরেও বাজার ম্যানেজমেন্ট ঠিক মত পরিষ্কার করছে কিনা ও মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করা এগুলো আমাদের দায়িত্বের মধ্যে এনে পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং সে মোতাবেক কাজ করা হবে।
তারই অংশ হচ্ছে হাটের চাঁদাবাজি, অতিরিক্ত ইজারা আদায়, এ ধরণের অভিযোগ গ্রহণের জন্য প্রত্যেকটি হাটে র্যাবের সাপোর্ট সেন্টার এবং জাল টাকা সনাক্তের জন্য প্রত্যেক হাটে মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ গর র হ ট দ র কর
এছাড়াও পড়ুন:
মব ভায়োলেন্সের চ্যালেঞ্জ
গত বছরের ৫ আগস্ট একদিকে যেমন দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক স্থবিরতা ভেঙে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি মব সন্ত্রাস বা গণপিটুনির মতো এক গভীর সামাজিক ব্যাধি নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১১৯ জন নিহত হয়েছেন; আহত ৭৪ জন। গত ১০ বছরে গণপিটুনিতে মোট ৭৯২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ২০২৪ সালে। গত বছর এ ধরনের ঘটনায় ১৭৯ জন নিহত হয়েছেন।
সারাদেশে মব ভায়োলেন্সের যে চিত্র উন্মোচিত হয়েছে, তা কেবল আইনশৃঙ্খলার সংকট নয়, বরং রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, সামাজিক সংহতির অভাব এবং মানবিক মূল্যবোধের এক গভীর অবক্ষয়কে নির্দেশ করে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গণরোষ বা স্বতঃস্ফূর্ত জনতার প্রতিক্রিয়া নতুন নয়। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে, বিশেষ করে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে আইনের শাসনের দুর্বলতা এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থাহীনতা গণপিটুনির মতো ঘটনাকে ইন্ধন জুগিয়েছে। ঔপনিবেশিক আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন সরকার পরিবর্তনের সময়েও এমন প্রবণতার নজির পাওয়া যায়।
৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে মব সন্ত্রাসের যে ব্যাপকতা ও নির্মমতা দেখা গেছে, তা পূর্ববর্তী সব ঘটনাকে ছাড়িয়ে গেছে।
এটা দুঃখজনক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে নির্ভয়ে রাজপথে যে তরুণ সমাজ নেমেছিল, তাদেরই একটি অংশকে গণপিটুনির মতো অমানবিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। এটি যেমন তাদের মহান ত্যাগের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তেমনি আইনের শাসনের প্রতি তাদের নিজেদেরই বিশ্বাসের দুর্বলতা ফুটিয়ে তোলে। সম্ভবত দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, বিচারহীনতার হতাশা এবং তাৎক্ষণিক আবেগের বশবর্তী হয়ে তারা এমন কাজ করেছে, যা তাদের মূল লক্ষ্য ও আদর্শের পরিপন্থি।
এটি গভীর সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক সংকট, যেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা নিজেই অন্যায়ের পথে পরিচালিত হচ্ছে। মব ভায়োলেন্স থেকে পরিত্রাণের পথ প্রথমত, সুসংহত রাজনৈতিক ও সামাজিক রোডম্যাপ। দ্বিতীয়ত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ ও সহনশীলতার বার্তা প্রদান। চতুর্থত, গুজব ও ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে কার্যকর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়ানো ও সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে উস্কানিমূলক বা মিথ্যা তথ্য দ্রুত চিহ্নিত করে অপসারণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সাইবার অপরাধ দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা বাড়ানো এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
মব ভায়োলেন্স ঠেকাতে সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা নাগরিক সমাজ, মানবাধিকারকর্মী এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।
এটা সত্য, ৫ আগস্টের ঘটনা প্রবাহ বাংলাদেশকে কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এ সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা এবং সাধারণ জনগণের সুরক্ষায় জনতার পাশে থেকে কাজ করে গেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
সম্প্রতি জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের মবতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান সাধারণ মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তির আভাস দিয়েছে। বিশেষ করে রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বাসায় হামলার পর সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থানকে অনেকেই মব সংস্কৃতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী বার্তা হিসেবে মনে করছেন।
আশা করা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম, সঠিক আইনি অবকাঠামো, সংবাদমাধ্যমের জোরালো ভূমিকা, একই সঙ্গে ব্যাপক জনসচেতনতা মব ভায়োলেন্সের ক্ষত সারিয়ে তুলবে।
রাজু আলীম: কবি ও লেখক