প্রস্তাবিত বাজেট নব্য ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন: জিএম কাদের
Published: 3rd, June 2025 GMT
“বাজেট একটি সরকারের রাজনৈতিক দর্শন এর প্রতিফলন ও বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান বাহন হিসেবে গণ্য করা যায়। সে হিসেবে সার্বিক মূল্যায়নে বর্তমান বাজেট ‘ফ্যাসিবাদের দোসর ও নব্য ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দর্শনের’ প্রতিফলন বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।”
জাতীয় পার্টির চেয়ারমান গোলাম মোহাম্মদ কাদের মঙ্গলবার (৩ জুন) বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “পতিত ফ্যাসিবাদ সরকারের বিগত বছরের বাজেটকে মোটামুটি অনুসরণ করে, ওই বাজেটের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে বর্তমান বাজেটে। বিগত বাজেটকে বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে কিছু কাটছাট করা হয়েছে ও কিছু বাড়িয়ে রাখা হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
মূল্যস্ফীতি কমলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সুদহার কমানো হবে: গভর্নর
বাজেটে জন-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হয়নি: নাহিদ
বাজেটে মূল কাঠামো বা নীতির বা রাজনৈতিক দর্শনের তেমন কোন নতুনত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, “মূল্যবোধের জায়গা থেকে প্রাক্তন সরকারের ভাবধারার বাইরে তেমন কিছু চোখে পড়ছে না। রুটিন কাজ, বাজেট দিতে হবে তাই দেওয়া, গতানুগতিক ধারাবাহিকতা রক্ষা। গত বাজেট কাঠামো থেকে এবারের বাজেটে তেমন কোনো ব্যত্যয় বা সংস্কার লক্ষ্যণীয় নয়। বর্তমান বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়। রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয়েছে তা অবাস্তব বা কাছাকাছি যাওয়াও সম্ভব নয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে। যতদিন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, ততদিন বিদেশি ঋণ বা সাহায্য পাওয়া নিয়ে সংশয় আছে। ফলে বাজেট ঘাটতি আকার অনেক বড় হবে এবং অনেক প্রয়োজনীয় খরচ মেটানো সরকারের জন্য বড় ধরনের সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করি।”
মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য কোন স্বস্তির ব্যবস্থা নেই মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, “প্রবৃদ্ধির নিম্নগামী অবস্থানের কারণে কর্মসংস্থান ও ব্যবসা বাণিজ্যের মন্দাভাব দেখা দেবে। প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব হবে মনে হয় না। ফলে সাধারণ মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর অবস্থায় পৌঁছাবে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে অর্ধভুক্ত ও অভূক্ত মানুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছি।”
সার্বিকভাবে দেশের মানুষের জন্য এ বাজেট কোন সু-খবর বা স্বস্তি আনছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এই বাজেটের প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, “প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী হলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সম্ভব হবে না, স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হবে এবং কম রাজস্ব আদায় হবে। মূল্যস্ফীতির হার ৬.
বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ খাতের কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি দাবি করে কাদের বলেন, “বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২২ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে যার বেশিরভাগই ভর্তুকি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে তা বোঝা যাচ্ছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমলেই সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে, তখন সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াবে।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার ও বর্তমান সরকারের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। গ্যাসের বিষয়ে বাজেটে বায়বীয় কথা বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে গ্যাসের দামও বাড়ানো হবে।”
কালো টাকা সাদার করতে দেওয়া নীতি বহির্ভূত বা গর্হিত কাজ উল্লেখ করে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “বর্তমান সরকারও দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেছে। বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো পরিকল্পনা পরিস্কারভাবে বলা হয়নি বাজেটে।রাজস্ব দিয়ে সরকার পরিচালনা করতে হবে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে কিভাবে? সামাজিক নিরাপত্তা খাতে যেসব কথা বলা হয়েছে তা কিভাবে বাস্তবায়ন করবে? বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে এই বাজেট দিয়ে সরকার কিভাবে কাজ করবে তা পরিস্কার নয়।”
“উদ্যোক্ততা তৈরির বিষয়টি আগেও ছিল, এবার বাজেট দেখে মনে হচ্ছে ছাত্ররা সবাই লেখাপড়া বাদ দিয়ে উদ্যোক্তা হবেন। ছাত্ররা ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতিতে যোগ দিবেন তাই মনে হচ্ছে। উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি আমরা শিক্ষিত জাতি গড়ে বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় যাব এই পরিকল্পনা থাকা উচিত,” বলেও মনে করেন জিএম কাদের।
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বাজেট অনুকরণে এই বাজেট তৈরি হয়েছে। কোথাও বাড়ানো হয়েছে কোথাও কমানো হয়েছে। বৈষম্য হ্রাস ও সামাজিক নিরাপত্তা এড়িয়ে গেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট কমানো ঠিক হয়নি। আয় ইনকামের খবর নেই, খরচ বাড়ানো হয়েছে। ট্যাক্স আদায় করে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের লালন করার নিশ্চয়তা আছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনা করা হয়নি।”
“আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকার বিভিন্ন ব্যাংক ও সংস্থা থেকে ধার করে দেশ চালাতে পেরেছেন কিন্তু বর্তমান সরকার তা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশি-বিদেশি কোন প্রতিষ্ঠানই ধার দেবে না বর্তমান সরকারকে। সাধারণ মানুষের জন্য এই বাজেটে কোন সুখবর বা স্বস্তি নেই,” বলেও মন্তব্য করেন দলটির চেয়ারম্যান।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র এই ব জ ট সরক র র র জন য জ এম ক লক ষ য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের সঙ্গে শাহরিয়ারের পরিবারের সাক্ষাৎ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যর পরিবারের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আজ সোমবার উপাচার্যের সভাকক্ষে এ সাক্ষাতের সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের বিস্তারিতভাবে অবহিত করেন উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার, মুহসীন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনশী শামস উদ্দিন আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছে।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে—সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেন্দ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার, মামলার অগ্রগতি তদারকি ও নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ, সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় সভার আয়োজন প্রভৃতি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃঢ়ভাবে আশ্বাস দিয়েছে যে এই মর্মান্তিক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে তাদের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।