“বাজেট একটি সরকারের রাজনৈতিক দর্শন এর প্রতিফলন ও বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান বাহন হিসেবে গণ্য করা যায়। সে হিসেবে সার্বিক মূল্যায়নে বর্তমান বাজেট ‘ফ্যাসিবাদের দোসর ও নব্য ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দর্শনের’ প্রতিফলন বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।”

জাতীয় পা‌র্টির চেয়ারমান গোলাম মোহাম্মদ কাদের মঙ্গলবার (৩ জুন) বা‌জেট প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব‌্য ক‌রেন।

তি‌নি ব‌লেন, “পতিত ফ্যাসিবাদ সরকারের বিগত বছরের বাজেটকে মোটামুটি অনুসরণ করে, ওই বাজেটের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে বর্তমান বাজেটে। বিগত বাজেটকে বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে কিছু কাটছাট করা হয়েছে ও কিছু বাড়িয়ে রাখা হয়েছে।”

আরো পড়ুন:

মূল্যস্ফীতি কমলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সুদহার কমানো হবে: গভর্নর 

বাজেটে জন-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হয়নি: নাহিদ

বা‌জে‌টে মূল কাঠামো বা নীতির বা রাজনৈতিক দর্শনের তেমন কোন নতুনত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না জা‌নি‌য়ে জিএম কা‌দের ব‌লেন, “মূল্যবোধের জায়গা থেকে প্রাক্তন সরকারের ভাবধারার বাইরে তেমন কিছু চোখে পড়ছে না। রুটিন কাজ, বাজেট দিতে হবে তাই দেওয়া, গতানুগতিক ধারাবাহিকতা রক্ষা। গত বাজেট কাঠামো থেকে এবারের বাজেটে তেমন কোনো ব্যত্যয় বা সংস্কার লক্ষ্যণীয় নয়। বর্তমান বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়। রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয়েছে তা অবাস্তব বা কাছাকাছি যাওয়াও সম্ভব নয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে। যতদিন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, ততদিন বিদেশি ঋণ বা সাহায্য পাওয়া নিয়ে সংশয় আছে। ফলে বাজেট ঘাটতি আকার অনেক বড় হবে এবং অনেক প্রয়োজনীয় খরচ মেটানো সরকারের জন্য বড় ধরনের সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করি।”

মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য কোন স্বস্তির ব্যবস্থা নেই মন্তব‌্য ক‌রে জিএম কা‌দের ব‌লেন, “প্রবৃদ্ধির নিম্নগামী অবস্থানের কারণে কর্মসংস্থান ও ব্যবসা বাণিজ্যের মন্দাভাব দেখা দেবে। প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব হবে মনে হয় না। ফলে সাধারণ মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর অবস্থায় পৌঁছাবে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে অর্ধভুক্ত ও অভূক্ত মানুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছি।”

সার্বিকভাবে দেশের মানুষের জন্য এ বাজেট কোন সু-খবর বা স্বস্তি আনছে না ব‌লেও মন্তব‌্য ক‌রেন তি‌নি।

এই বাজেটের প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী উল্লেখ ক‌রে জাপা চেয়ারম‌্যান ব‌লেন, “প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী হলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সম্ভব হবে না, স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হবে এবং কম রাজস্ব আদায় হবে। মূল্যস্ফীতির হার ৬.

৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত এই হার ৯.১৭ পর্যন্ত আনা সম্ভব হয়েছে। সামনের দিকে মূল্যস্ফীতির হার কমবে এর কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না। এই বাজেটে ক্ষুধার্ত ও অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়বে।”

বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ খাতের কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি দা‌বি ক‌রে কা‌দের ব‌লেন, “বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২২ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে যার বেশিরভাগই ভর্তুকি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে তা বোঝা যাচ্ছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমলেই সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে, তখন সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াবে।”

তি‌নি ব‌লেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার ও বর্তমান সরকারের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। গ্যাসের বিষয়ে বাজেটে বায়বীয় কথা বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে গ্যাসের দামও বাড়ানো হবে।”

কালো টাকা সাদার করতে দেওয়া নীতি বহির্ভূত বা গর্হিত কাজ উল্লেখ ক‌রে সা‌বেক বি‌রোধীদলীয় নেতা ব‌লেন, “বর্তমান সরকারও দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেছে। বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো পরিকল্পনা পরিস্কারভাবে বলা হয়নি বাজেটে।রাজস্ব দিয়ে সরকার পরিচালনা করতে হবে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে কিভাবে? সামাজিক নিরাপত্তা খাতে যেসব কথা বলা হয়েছে তা কিভাবে বাস্তবায়ন করবে? বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে এই বাজেট দিয়ে সরকার কিভাবে কাজ করবে তা পরিস্কার নয়।”

“উদ্যোক্ততা তৈরির বিষয়টি আগেও ছিল, এবার বাজেট দেখে মনে হচ্ছে ছাত্ররা সবাই লেখাপড়া বাদ দিয়ে উদ্যোক্তা হবেন। ছাত্ররা ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতিতে যোগ দিবেন তাই মনে হচ্ছে। উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি আমরা শিক্ষিত জাতি গড়ে বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় যাব এই পরিকল্পনা থাকা উচিত,” ব‌লেও ম‌নে ক‌রেন জিএম কা‌দের।

তি‌নি ব‌লেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বাজেট অনুকরণে এই বাজেট তৈরি হয়েছে। কোথাও বাড়ানো হয়েছে কোথাও কমানো হয়েছে। বৈষম্য হ্রাস ও সামাজিক নিরাপত্তা এড়িয়ে গেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট কমানো ঠিক হয়নি। আয় ইনকামের খবর নেই, খরচ বাড়ানো হয়েছে। ট্যাক্স আদায় করে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের লালন করার নিশ্চয়তা আছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনা করা হয়নি।”

“আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকার বিভিন্ন ব্যাংক ও সংস্থা থেকে ধার করে দেশ চালাতে পেরেছেন কিন্তু বর্তমান সরকার তা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশি-বিদেশি কোন প্রতিষ্ঠানই ধার দেবে না বর্তমান সরকারকে। সাধারণ মানুষের জন্য এই বাজেটে কোন সুখবর বা স্বস্তি নেই,” ব‌লেও মন্তব‌্য ক‌রেন দল‌টির চেয়ারম‌্যান।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র এই ব জ ট সরক র র র জন য জ এম ক লক ষ য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি

‎নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল  সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।

সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে  একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য। 

সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের  গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি,  সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।

‎‎মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর)  শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

‎দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।

‎‎জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।

‎‎এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।

‎‎তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।

‎‎এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
  • নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
  • ১৭ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ, নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই হাজার সদস্য
  • ফরিদপুরে অবরোধ শনিবার পর্যন্ত স্থগিত
  • আসন্ন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের