খুলনার রাজনীতিতে ১৯ বছর পর সক্রিয় হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি আলী আসগার লবী। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে খুলনায় এসে দুইটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন তিনি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি খুলনার কোনো একটি আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন এমন গুঞ্জন জোরালো হয়েছে। 

রাজনীতিতে আলী আসগার লবীর প্রত্যাবর্তনে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া তৃণমূলের। বিশেষ করে বিগত সাড়ে ১৫ বছর রাজপথে দাঁড়িয়ে ফ্যাসিবাদের অত্যাচার, নির্যাতন ও জুলুম সহ্য করে যারা বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন তারা ক্ষুদ্ধ হয়েছেন।

হাই কমান্ডের নির্দেশে রাজনীতিতে ফিরছেন লবী- এই ধারণা পাওয়ার পর বিএনপি নেতারা মুখ না খুললেও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন দলটির তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলেছে সমালোচনার ঝড়।

আরো পড়ুন:

শপথের ব্যবস্থা না করলে নিজেই শপথ নিয়ে চেয়ার দখল করব: ইশরাক

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন
নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে যাওয়ার একটি কারণও নেই

আলী আসগার লবী খুলনা নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক।

রাজনীতিতে ফেরা প্রসঙ্গে আলী আসগার লবী বলেন, “আমি দলের কর্মী। দলের নির্দেশ পেয়ে খুলনায় কর্মসূচিতে এসেছি। দল যদি মনে করে আমাকে নির্বাচন করতে হবে, আমি করব। খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) বা খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) জানি না। সিদ্ধান্ত দলের। দল মনে না করলে নির্বাচন করব না। সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত নয়।”

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অন্তত চারজন সম্ভাব্য প্রার্থী খুলনা-৫ আসনে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় বছরব্যাপী কাজ করে চলেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ডুমুরিয়া বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মোল্লা মোশারফ হোসেন মফিজ, জেলা যুবদলের সভাপতি ইবাদুল হক রুবায়েদ, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা শফি মোহাম্মদ খান এবং প্রবাসী বিএনপি নেতা টিকু রহমান।

খুলনা-৫ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ডুমুরিয়া বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মোল্লা মোশারফ হোসেন মফিজ বলেন, “গত ১৫ বছর হামলা-মামলার শিকার নেতাকর্মীদের জামিন, হাসপাতালের ট্রিটমেন্ট আর পরিবারের বাজার করে দিয়ে সর্বস্ব উৎসর্গ করেছি।”

তিনি বলেন, “সব রাজনীতিবীদেরই প্রত্যাশা থাকে। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলাম, উপজেলা নির্বাচন করেছি। আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না। তবে মনে ভীষণ কষ্ট থেকে যাবে।”

অপরদিকে, শেখ হাসিনা শানসামলে পুলিশ প্রশাসনের কাছে ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিলেন যুবদল সভাপতি ইবাদুল হক রুবায়েদ। প্রচণ্ড কর্মী বান্ধব এই নেতা রাজপথের আন্দোলনে চরম ভীতি সৃষ্টিতে সক্ষম ছিলেন। মামলা জর্জরিত ছিলেন রুবায়েদ। গত বছরের ৫ আগস্টের পর খুলনা-৫ নির্বাচনী এলাকায় প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন তরুণ এই নেতা। 

আলী আসগার লবীর সক্রিয় হওয়ার সংবাদে রুবায়েদের অনুসারীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো বিপ্লব করছেন। নানা সমালোচনার ঝড় বইছে সেখানে।

শাহাদাত বার্ষিকীর কর্মসূচির বক্তব্যে লবী বলেন, “আওয়ামী সরকারের সীমাহীন চাপের কারণেই সরাসরি জনগণের কাছে আসতে পারিনি। আমার তিন বছরের বেশি সময় ফ্যাসিস্ট সরকারের জেলে কেটেছে। এ সময় আয়না ঘরের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল চারবার। আমার ব্যাংক হিসাবগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে। দলীয় কর্মকাণ্ড তো দূরের কথা, আমাকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দেয়নি হাসিনা সরকার।”

তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রাব্বি আহমেদ জোভান নামে এক বিএনপির সমর্থক ফেসবুকে লিখেছেন, “চাপ যখন সহ্য করতে পারেননি তখন আপনি কিসের নেতা। আপনি অবসর নিয়েছিলেন সেটাই থাকেন। যারা এই চাপনি নিয়েছিল তারাই নেতা, তারাই রাজনীতি করবে। আপনি দয়া করে মাঠে আইসেন না, যারা চাপ সহ্য করেছে তারা কিন্তু আপনারে মেনে নিবে না। সুযোগ সন্ধানীর একটা লিমিট থাকা দরকার।”

অনিক আহমেদ নামে একজন লেখেন, “দলে তখন মধু ছিল না এজন্য পদত্যাগ।” 

রাজনীতির এহেন চর্চ্চায় মনোক্ষুন্ন হয়ে সাংবাদিক হাসান হিমালয়ের লেখা একটি পোস্ট ফেসবুকে রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। মাত্র ১৮ ঘণ্টায় ২৬২ বার শেয়ার হয়েছে পোস্টটি। ১৩২ কমেন্টের ৯৯ ভাগই তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছে।

হিমালয় লিখেছেন, ‘নানা ইস্যুতে সরকারের ভেতরে বাইরে অস্থিরতা। নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিলে অনিশ্চয়তা দূর হবে সবাই এমনটি ভাবছেন। কিন্ত কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তন না আনলে সবকিছু আগের মতো হয়ে যাবে। জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, রাজনৈতিক কর্মীরাও বাদ যাবে না।”

বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, ‘১৫ বছরে দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়েছে, কিন্ত কর্মীরা রাজপথ ছাড়েননি। অনেকেই মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলটির ক্ষমতায় যাওয়া শুধু নির্বাচনের অপেক্ষামাত্র। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর মনোনয়ন প্রত্যার্শীদের আনাগোনা বেড়েছে। বিত্তশালী, ব্যবসায়ী ও মৌসুমী নেতারা এলাকায় আসছেন।”

এ পর্যায়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দি হওয়ার দিনের স্মৃতিচারণ করেন তিনি। লেখেন, “সেদিন রাজপথে যখন কর্মীর শূন্যতা, ঠিক সেই মুহূর্তে পুলিশের উদ্যত বন্দুকের নলের সামনে মিছিল নিয়ে বুক চিতিয়ে এগিয়ে আসেন ইবাদুল হক রুবায়েদ। নেত্রীকে জেলে নেওয়ার আগে তাদের বুকে গুলি চালানোর আহ্বান জানান।”

হিমালয় লেখা শেষ করেন এভাবে- “রাজনীতিতে সংস্কার আনতে হবে। না হলে বন্দুকের নলের সামনে চিতিয়ে দেওয়া বুক এবং টাকার মধ্যে ওজন হলে রুবায়েদরা হেরে যাবেন। রাজনীতিও হেরে যাবে।”

ডুমুরিয়ার রঘুনাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রব আকুঞ্জি বলেন, “এই আসনে (খুলনা-৫) ধানের শীষের ভোট বেশি। কর্মী-সমর্থক বেশি। শুধুমাত্র জোটের কারণে জামায়াতকে ছাড়া দিতে হয়েছে। আমাদের একজন হেভিওয়েট প্রার্থী দরকার ছিল। লবী সাহেব উচ্চ বংশীয়, প্রায় প্রতিটা গ্রামে তার আত্মীয় স্বজন আছে। এলাকার উন্নয়নে তার পরিবারের অবদান ব্যাপক। ফলে জামায়াত যাকেই প্রার্থী করুক, লবী সাহেব ধানের শীষ পেলে আমাদের জেতার সম্ভাবনা শতভাগ।”

খুলনা জেলা বিএনপি আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, “দলের হাই কমান্ডের নির্দেশেই আলী আসগর লবী খুলনা-৫ আসনে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন।” সংসদ নির্বাচনে তার অংশ গ্রহণের বিষয়টি জানতে তিনি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে খুলনা-২ (সদর) আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সংসদ সদস্য হন আলী আসগার লবী।

মূলত বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনের সময় খুলনার সর্বস্তরের মানুষ প্রথমবারের মতো লবীকে চেনেন। এরপর তিনি বিসিবি’র সভাপতি হন। ২০০৫ সালে মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আলী আসগার লবীকে আহ্বায়ক করে কমিটি দেওয়া হয়। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের পর বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন তিনি।

একই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার গুলশানের বাসা থেকে যৌথবাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ, স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ও কয়েকটি গাড়ি জব্দ হয়। 

ওই বছরের জুলাই মাসে একটি মামলার রায়ে ১৩ বছরের সাজা হয় লবীর। ২০০৯ সালে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি  প্রতাপশালী এবং হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি দলের মহাসচিবের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান লবী। সে সময় তিনি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। 

থাইরয়েড ক্যান্সারের অপারেশন হয়েছিল লবীর। সে সময় মিডিয়াকে তিনি বলেছিলেন, ২০০৬ সালের পর আমি তো দলে নেই। কোথাও নেই, কারো সঙ্গে যোগাযোগ নেই।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র স র জন ত ত সরক র র র পর ব বছর র র জপথ

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ রেল চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ‍রুটে রেল চলাচল হটাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। আসান্ন ইদুল আযাহ ঘরমুখো মানুষেরা ভোগান্তিতে পরেছে। 

বৃহস্পতিবার ( ৫ জুন) সকালে নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন, চাষাড়া স্টেশন ঘুরে যাত্রীদের এমনি ভোগান্তিত চিত্র দেখা যায়।

সকাল ৫.৪৫ টায় ও ৮টায় নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন ছেঁড়ে ঢাকার উদ্দেশ্য ট্রেনটি রওনা দেয়। সকাল সাড়ে ১০টার ট্রেনটি নিদিষ্ট সময় বাইরে রেল স্টেশন ছেঁড়ে যায়।

এই বিষয় নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন মাস্টারকে স্টেশন পাওয়া যায়নি। মুঠো ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায় নাই।

এদিকে রেল স্টেশনের আসা টিপু তার ভোগন্তির বিষয় বলেন, হুট করে এমন সিদ্ধান্ত আমাদের মত যাত্রীদের জন্য খু্বি ভোগান্তিতে পরতে হয়। 

মো রুবেল জানান. ঈদের ছুটিতে পরিবারকে নিয়ে দিনাজ পুর যাবো ।কিন্তু এখানে এসে জানতে পারলাম ট্রেন আসবো না। ঝুঁকি এড়াতে সড়ক পথ ছেড়ে রেল পথে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেই সড়ক পথে যেতে হলো।

এবিষয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পয়েন্ট ম্যান জানান, আমাদের জানানো হয়েছে রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকবে। আমারা যতটুকু জানতে পারছি ঢাকায় ইঞ্জিনের সংকট থাকার কারণে রেল চলাচল বন্ধ আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ