নির্বাচনে সব দল থেকে ২০ শতাংশ নারী প্রার্থী রাখার প্রস্তাব গণসংহতি আন্দোলনের
Published: 3rd, June 2025 GMT
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল থেকে ন্যূনতম ২০ শতাংশ নারী প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। আজ মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে বিকেলে সাংবাদিকদের কাছে দলের এমন অবস্থান তুলে ধরেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
এর আগে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন দলের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়। কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে রাজনৈতিক দলগুলো পৃথকভাবে ব্রিফিং করে।
ব্রিফিংয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন যেহেতু আগের পদ্ধতিতেই হবে, সেখানে অন্তত নির্বাচন কমিশনের জায়গা থেকে একটি সুনির্দিষ্ট বিধান করা, আগামী পার্লামেন্টে প্রতিটি দল থেকে অন্ততপক্ষে শতকরা ২০ ভাগ নারী প্রার্থী দিতে হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘আমরা ১০০ আসনে নারীর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনকে সমর্থন দিয়েছি।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি জরুরি: জামায়াতের নায়েবে আমির
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে। তা না হলে আলোচনার ফল আসবে না।
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপের বিরতির সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন মোহাম্মদ তাহের।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘আজকের আলোচনায় আমরা সাতটি এজেন্ডা পেয়েছি, তবে এখন পর্যন্ত আলোচনা চলছে একটি বিষয়—নারীদের আসন নিয়ে।’ এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীসহ সব ইসলামি দল একমত হয়েছে।
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘দেশি-বিদেশি প্রোপাগান্ডা চালানো হয় যে আমরা নাকি নারীর অধিকার মানি না। অথচ আমরা ইউরোপ-আমেরিকায় গেলে বা ডেলিগেশন এলে তারা কমনলি যে তিনটা প্রশ্ন তোলে, তার মধ্যে একটি নারীর অবস্থান নিয়ে। এবার আমরা একমত হয়েছি যে নারীদের জন্য ১০০টি আসন সংরক্ষণের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী ইন প্রিন্সিপাল একমত।’
বর্তমান কিছু প্রস্তাব নিয়ে দলের দ্বিমত রয়েছে বলে জানান তাহের। তিনি বলেন, ‘যদি ৫ শতাংশ কোটায় ১০টি দল ক্যান্ডিডেট (প্রার্থী) দেয়, তাহলে দেখা যাবে, হয়তো নারী জয়ী হলেন না, এমপি হলেন না, তখন নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়বে না। তাই এমন নিরাপদ কাঠামো দরকার, যাতে নারীরা নিয়মিত জিতে আসতে পারেন।’
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে জামায়াতের এই নেতা বলেন, অনেক জায়গায় তাঁরা একমত হয়েছেন। কিছু রিজার্ভেশন রয়েছে, যা দলের পক্ষ থেকে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আকারে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ঐকমত্যের ভবিষ্যৎ কী? জামায়াত মনে করে এই ঐকমত্যের ভিত্তিতে আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে। তা না হলে এই আলোচনার ফল আসবে না।
কোনো কোনো রাজনৈতিক দল প্রস্তাব দিয়েছে, কিছু বিষয় জাতীয় সংসদে আলোচনা করা হবে। এমন প্রস্তাবে জামায়াতে ইসলামী দ্বিমত পোষণ করেছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘কেউ কেউ বলছে, আগামী পার্লামেন্টে গিয়ে আইন হবে। এটা অবাস্তব বক্তব্য। কারণ, পরবর্তী পার্লামেন্ট গঠিত হবে এই সংস্কারের ভিত্তিতে, না হলে আবার পুরোনো নিয়মে নির্বাচন হবে।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ইতিমধ্যে তাঁরা প্যানেল আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আইনি ভিত্তি তৈরির কয়েকটি বিকল্প পথ খুঁজে পেয়েছেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় গণভোট ও প্রোক্লেমেশনের (ঘোষণা) মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে পার্লামেন্টে র্যাটিফাই (অনুমোদন) করে তা সাংবিধানিক মর্যাদা পেয়েছে। এরশাদের সময়ও একই হয়েছে।’
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আরও বলেন, ‘এই সরকারের মেয়াদ বা বৈধতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করছেন। কিন্তু ৫ আগস্ট জনগণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়েছে, আর ৮ আগস্ট সরকার গঠিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট কখনো বলে দেয়নি সরকারের মেয়াদ কত দিন। অতএব জনগণের অভিপ্রায়ই হচ্ছে সুপ্রিম ল। সবশেষে আমরা চাই এই সনদ ও প্রোক্লেমেশনকে সাংবিধানিক ঘোষণা হিসেবে প্রকাশ করা হোক। পরবর্তী সংসদে এটি র্যাটিফাই হলে কেউ আর আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। এর মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্যের চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।’
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমাদের হাতে দুটি কাগজ আছে—একটি হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্র, আরেকটি হচ্ছে জুলাই সনদ। সনদ হলো এই সংলাপের আউটকাম। তবে এর খসড়া এখনো অসম্পূর্ণ এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যের বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আমরা আজ অথবা কালকের মধ্যে এর লিখিত জবাব দেব। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই সনদকে আইনি মর্যাদা কীভাবে দেওয়া যাবে। আমাদের মতে, যেভাবে অতীতে পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোট ও প্রোক্লেমেশন র্যাটিফাই হয়েছে, একইভাবে এই সনদ ও ঘোষণাপত্রকেও সংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে।’
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা চেয়েছি, চূড়ান্ত আলোচনার সময় জাতীয় ঐক্য কমিটির প্রেসিডেন্টের (প্রধান উপদেষ্টা) উপস্থিতি নিশ্চিত করা হোক, যাতে আমরা সরাসরি তাঁর সঙ্গে পয়েন্টগুলো বিনিময় করতে পারি।’