জার্মানিতে যোগ্যতার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে শাস্ত্রীয় জ্ঞান এবং হাতে-কলমে কাজের অভিজ্ঞতাকে। শুধু তা–ই নয়, এই কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে দেশটিতে। তেমনি একটি ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার নাম আউসবিল্ডুং। এ সুযোগ গ্রহণে আন্তর্জাতিক চাকরিপ্রার্থীদের সাদরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ইউরোপীয় দেশটি। চলুন, আউসবিল্ডুংয়ে আবেদনের যোগ্যতা, সুযোগ-সুবিধা, আবেদন ও ভিসা প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক জ্ঞানসমৃদ্ধ জার্মানির ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কর্মসূচির নাম আউসবিল্ডুং। শিক্ষাব্যবস্থায় তরুণ শিক্ষককেরা একই সঙ্গে স্কুলের ক্লাসরুম পাঠ্যক্রম এবং করপোরেট পরিবেশ দুই অভিজ্ঞতারই সম্মুখীন হন। এর নেপথ্যে যৌথভাবে কাজ করে দেশটির সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো।

হাতে-কলমে এ প্রশিক্ষণের সময়কাল সাধারণত কমপক্ষে ২ থেকে সর্বোচ্চ ৪ বছর পর্যন্ত। প্রার্থীরা নিজেদের দক্ষতা ও পছন্দ অনুযায়ী নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচন করতে পারেন। শুধু জার্মান ভাষায় পাঠদান করা এই প্রোগ্রামে বিদেশি নাগরিকেরা জার্মানদের মতো একই সুযোগ-সুবিধাসহ একটি নির্দিষ্ট জার্মান কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। এ চুক্তির জন্য বিদেশি প্রার্থীরা জার্মানির বাইরে থেকে ট্রেনিং কোম্পানি ঠিক করে আসতে পারেন অথবা জার্মানিতে এসেও কোম্পানির খোঁজ করতে পারেন।

জার্মানির আউসবিল্ডুং কাদের জন্য

বয়স, একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এবং দেশ নির্বিশেষে যেকোনো ব্যক্তি আউসবিল্ডুংয়ে অংশ নিতে পারেন। তবে যাঁরা জার্মানিতে গিয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য কোম্পানি খুঁজতে চান, তাঁদের অবশ্যই অনূর্ধ্ব ৩৫ বছর বয়সী হতে হবে। জার্মানির বাইরে থেকে যাঁরা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আসবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বয়সের এই বাধ্যবাধকতা নেই। তবে এই প্রোগ্রামে নিবন্ধিত হওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে জার্মান ভাষাদক্ষতা। সিইএফআর (কমন ইউরোপীয়ান ফ্রেমওয়ার্ক অব রেফারেন্স) অনুযায়ী ন্যূনতম যোগ্যতা লেভেল বি১।

দ্বিতীয়ত, যাঁরা একাডেমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৯ বা ১০ বছর অতিবাহিত করেছেন, তাঁরা এই প্রোগ্রামে নিবন্ধিত হতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের সনদপত্র বা মার্কশিটগুলো অবশ্যই জার্মান একাডেমিক যোগ্যতার সমতুল্য হতে হবে। এর জন্য জেডএবি (সেন্ট্রাল অফিস ফর ফরেন এডুকেশন) (https://zab.

kmk.org/en/app/zeugnisbewertung) থেকে শংসাপত্রগুলোর মূল্যায়ন বা তুলনামূলক বিবৃতি নিতে হবে।

আউসবিল্ডুংয়ের সুবিধা

এই দ্বৈত শিক্ষাপদ্ধতিতে প্রশিক্ষণার্থীরা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক ভাতা পান। এর পরিমাণ সাধারণত প্রতি মাসে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ইউরো বা ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৬ থেকে ১ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫ টাকার (১ ইউরো = ১৩১ দশমিক ৭৭ টাকা) মতো। এর কমবেশি হওয়াটা নির্ভর করে মূলত নিয়োগকর্তা, কোম্পানির শহর এবং প্রশিক্ষণের বিষয়ের ওপর। নিয়োগকর্তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বাসা ভাড়া বাবদ আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে।

জার্মানির বাইরে থেকে কোম্পানি ঠিক করা অথবা জার্মানিতে পৌঁছে ট্রেনিং কোম্পানি খোঁজা; উভয় ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত পৃথক খণ্ডকালীন চাকরি করার সুযোগ রয়েছে। এমনকি সর্বোচ্চ ২ সপ্তাহ পর্যন্ত ট্রায়াল জবও করা যাবে।

আর কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে আসার পর পুরো ট্রেনিং প্রোগ্রামের সময়কালের জন্য দেওয়া হবে রেসিডেন্ট পারমিট। এর বাইরে অতিরিক্ত উপযোগিতা হিসেবে রয়েছে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ শেষে চাকরির সম্ভাবনা। প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করার পর সংশ্লিষ্ট কোর্সের ওপর ভিত্তি প্রায় ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ ইউরোর (৩ লাখ ১৬ হাজার ২৪৯ থেকে ৪ লাখ ৬১ হাজার ১৯৭ টাকা) মাসিক বেতনের কাজ পাওয়া যেতে পারে। এগুলোর মধ্যে তালিকার শীর্ষে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষত নার্সিং পেশা। তথ্য ও প্রযুক্তির ক্রমশ অগ্রসর হওয়ায় উচ্চ চাহিদা রয়েছে দক্ষ আইটি (ইনফরমেশন টেকনোলজি) পেশাদারদের। সবচেয়ে আকর্ষণীয় পেশা হচ্ছে নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং সফটওয়্যার ডেভেলপার। এ ছাড়া যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল এবং অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জার্মানির নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ায় এর স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিকাশের জন্য শত শত দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। এই জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশের জোগানদাতা হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে এই আউসবিল্ডুং।

তা ছাড়া প্রোগ্রামের পরীক্ষাগুলোয় সাফল্যের সঙ্গে কৃতকার্য হওয়ায় পর প্রশিক্ষণের কোম্পানিতেই থাকছে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ। এমনকি উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীরা এই ফলাফল নিয়ে জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হতে পারবেন।

আবেদনপদ্ধতি

এই ভোকেশনাল প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশি নাগরিকেরা প্রধাণত দুইভাবে আবেদন করতে পারেন।

এক, বাংলাদেশে থেকেই আউসবিল্ডুংয়ের জন্য জার্মান কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া। এরপর ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য এন্ট্রি ভিসায় আবেদন করা।

দুই, জার্মানিতে পৌঁছে ভোকেশনাল ট্রেনিং কোম্পানি খোঁজার জন্য নির্ধারিত এন্ট্রি ভিসায় আবেদন করা।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য য গ যত ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ