কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের ১ লাখ ২০ হাজার পরিবারের ৮ লাখ রোহিঙ্গাকে এবারও কোরবানির মাংস বিতরণ করা হচ্ছে। ২৩টির বেশি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) দেওয়া কোরবানির পশুগুলো শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) মাধ্যমে রোহিঙ্গা পরিবারে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি পরিবার দেড় কেজি করে মাংস পেতে পারে।

আরআরআরসির কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরের প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার জন্য ১ হাজার ৭০০ গরু, ৩৫০ ছাগল ও ৫০ হাজার কেজি গরু-মহিষের মাংস পাওয়া গেছে। ৭ জুন (ঈদুল আজহার দিন) সকালে কোরবানির পশুগুলো জবাই করে রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়শিবিরে বিভিন্ন সেবা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত বহু এনজিও তহবিল সংকটে রয়েছে। এ কারণে অনেকের পক্ষে রোহিঙ্গাদের জন্য কোরবানির পশু কিনে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ২৩টির বেশি এনজিও শুধু উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে থাকা প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার জন্য কোরবানির ১ হাজার ৭০০ গরু, ৩৫০ ছাগল ও ৫০ হাজার কেজি মাংস সরবরাহ করবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে আশ্রয়শিবিরের মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতা) মাধ্যমে মাংসগুলো ঈদের দিন সকালে রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে বণ্টন করে দেওয়া হবে। বেসরকারি কোনো সংস্থা রাজি না হওয়ায় টেকনাফের আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গার জন্য কোরবানির পশু কিংবা মাংস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, যে পরিমাণ পশু ও মাংস পাওয়া গেছে, তাতে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবার এক কেজির কিছুটা বেশি মাংস পেতে পারে।

এ নিয়ে টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। টেকনাফের শালবাগান আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জামাল হোসেন বলেন, গত কোরবানির ঈদেও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এবারও মাংস থেকে বঞ্চিত হওয়ার খবরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

একই আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা আবদুল জব্বার বলেন, রোহিঙ্গাদের বহু আত্মীয়স্বজন সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। তাঁরা কোরবানির পশু কেনার জন্য আশ্রয়শিবিরে থাকা আত্মীয়স্বজনের (রোহিঙ্গা পরিবার) জন্য টাকা পাঠাচ্ছেন। সেই টাকায় বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবার টেকনাফ ও হ্নীলার পশুর বাজার থেকে ৩০-৩৫টি গরু-মহিষ কিনে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই আশ্রয়শিবিরে প্রায় ২২ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস। গত বছর বিদেশ থেকে পাঠানো স্বজনদের টাকায় এখানকার রোহিঙ্গারা ৭০টির বেশি গরু-মহিষ কোরবানি দিয়েছিলেন।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ২০২০ সালে ৩৩ আশ্রয়শিবিরে কোরবানির জন্য প্রায় পাঁচ হাজার গরু-মহিষ বিতরণ করা হয়েছিল। ২০২২ সালে ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নানা অজুহাতে পশুর সংখ্যা অর্ধেক কমিয়ে ৩ হাজারে আনা হয়। এখন পশুর সংখ্যা আরও অর্ধেক কমে গেল।

আরআরআরসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, কোরবানির মাংস বণ্টন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তদারকির জন্য প্রতিটি আশ্রয়শিবিরে ক্যাম্প ইনচার্জের তত্ত্বাবধানে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির লোকজন মাঝিদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা পরিবারে মাংস পৌঁছে দেবেন। ঈদের দিন বৃষ্টি হলে পশু জবাইয়ের বিকল্প ব্যবস্থা, বর্জ্য অপসারণ ও কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বছর পশুর চামড়াগুলো উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এতিমখানায় বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক রব ন র ম ব তরণ কর র জন য পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ