উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের ৮ লাখ রোহিঙ্গা পাচ্ছেন কোরবানির মাংস
Published: 4th, June 2025 GMT
কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের ১ লাখ ২০ হাজার পরিবারের ৮ লাখ রোহিঙ্গাকে এবারও কোরবানির মাংস বিতরণ করা হচ্ছে। ২৩টির বেশি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) দেওয়া কোরবানির পশুগুলো শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) মাধ্যমে রোহিঙ্গা পরিবারে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি পরিবার দেড় কেজি করে মাংস পেতে পারে।
আরআরআরসির কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরের প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার জন্য ১ হাজার ৭০০ গরু, ৩৫০ ছাগল ও ৫০ হাজার কেজি গরু-মহিষের মাংস পাওয়া গেছে। ৭ জুন (ঈদুল আজহার দিন) সকালে কোরবানির পশুগুলো জবাই করে রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়শিবিরে বিভিন্ন সেবা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত বহু এনজিও তহবিল সংকটে রয়েছে। এ কারণে অনেকের পক্ষে রোহিঙ্গাদের জন্য কোরবানির পশু কিনে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ২৩টির বেশি এনজিও শুধু উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে থাকা প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার জন্য কোরবানির ১ হাজার ৭০০ গরু, ৩৫০ ছাগল ও ৫০ হাজার কেজি মাংস সরবরাহ করবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে আশ্রয়শিবিরের মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতা) মাধ্যমে মাংসগুলো ঈদের দিন সকালে রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে বণ্টন করে দেওয়া হবে। বেসরকারি কোনো সংস্থা রাজি না হওয়ায় টেকনাফের আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গার জন্য কোরবানির পশু কিংবা মাংস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, যে পরিমাণ পশু ও মাংস পাওয়া গেছে, তাতে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবার এক কেজির কিছুটা বেশি মাংস পেতে পারে।
এ নিয়ে টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। টেকনাফের শালবাগান আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জামাল হোসেন বলেন, গত কোরবানির ঈদেও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এবারও মাংস থেকে বঞ্চিত হওয়ার খবরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
একই আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা আবদুল জব্বার বলেন, রোহিঙ্গাদের বহু আত্মীয়স্বজন সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। তাঁরা কোরবানির পশু কেনার জন্য আশ্রয়শিবিরে থাকা আত্মীয়স্বজনের (রোহিঙ্গা পরিবার) জন্য টাকা পাঠাচ্ছেন। সেই টাকায় বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবার টেকনাফ ও হ্নীলার পশুর বাজার থেকে ৩০-৩৫টি গরু-মহিষ কিনে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই আশ্রয়শিবিরে প্রায় ২২ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস। গত বছর বিদেশ থেকে পাঠানো স্বজনদের টাকায় এখানকার রোহিঙ্গারা ৭০টির বেশি গরু-মহিষ কোরবানি দিয়েছিলেন।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ২০২০ সালে ৩৩ আশ্রয়শিবিরে কোরবানির জন্য প্রায় পাঁচ হাজার গরু-মহিষ বিতরণ করা হয়েছিল। ২০২২ সালে ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নানা অজুহাতে পশুর সংখ্যা অর্ধেক কমিয়ে ৩ হাজারে আনা হয়। এখন পশুর সংখ্যা আরও অর্ধেক কমে গেল।
আরআরআরসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, কোরবানির মাংস বণ্টন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তদারকির জন্য প্রতিটি আশ্রয়শিবিরে ক্যাম্প ইনচার্জের তত্ত্বাবধানে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির লোকজন মাঝিদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা পরিবারে মাংস পৌঁছে দেবেন। ঈদের দিন বৃষ্টি হলে পশু জবাইয়ের বিকল্প ব্যবস্থা, বর্জ্য অপসারণ ও কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বছর পশুর চামড়াগুলো উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এতিমখানায় বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রব ন র ম ব তরণ কর র জন য পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় বিএনপি কার্যালয়ে গুলি ও বোমা হামলা, নিহত ১
খুলনা নগরের আড়ংঘাটায় কুয়েট আইটি গেট–সংলগ্ন বিএনপির কার্যালয়ে দুর্বৃত্তরা গুলি ও বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে ইমদাদুল হক (৫৫) নামের এক শিক্ষক নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত সোয়া নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মামুন শেখসহ আরও তিনজন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, রাতে মামুন শেখ স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে ওই কার্যালয়ে বসে ছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলে করে আসা দুর্বৃত্তরা অফিস লক্ষ্য করে পরপর দুটি বোমা ও চারটি গুলি ছোড়ে। এরপর তারা পালিয়ে যায়। প্রথম গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পাশে থাকা শিক্ষক ইমদাদুল হকের শরীরে লাগে। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে আবার গুলি চালালে মামুন শেখসহ অন্য দুজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে দলীয় নেতা-কর্মী ও স্বজনেরা তাঁদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
নিহত ইমদাদুল বছিতলা নুরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। এলাকাবাসীর ভাষ্য, তিনি একটি মাহফিলের অনুদান সংগ্রহের জন্য ওই কার্যালয়ে গিয়েছিলেন।
আড়ংঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল বাসার বলেন, মামুন শেখ প্রায়ই স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে কার্যালয়ে বসে আড্ডা দেন। গতকাল রাতেও তিনি আড্ডা দিচ্ছিলেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছিল। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান চলছে।