তুরস্কে বিরোধী সিএইচপি–দলীয় আরও পাঁচ মেয়র গ্রেপ্তার
Published: 4th, June 2025 GMT
তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) আরও পাঁচ মেয়রসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে দুর্নীতির অভিযোগে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। সিএইচপির একজন মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।
সিএইচপির গ্রেপ্তার পাঁচ মেয়রের মধ্যে তিনজন ইস্তাম্বুলের জেলা মেয়র। অন্য দুজন দক্ষিণাঞ্চলীয় আদানা প্রদেশের মেয়র। এ ছাড়া দলটির সাবেক এক সংসদ সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নতুন গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নিয়ে এখন পর্যন্ত সিএইচপির মোট ৯ মেয়রকে গ্রেপ্তার করা হলো। তাঁদের মধ্যে ইস্তাম্বুল নগরের মেয়র একরেম ইমামোগলুও রয়েছেন। জনপ্রিয় এই রাজনীতিবিদ দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী।
ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হয় গত ১৯ মার্চ। তাঁকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তুরস্কে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভে সিএইচপির সমর্থকদের পাশাপাশি সমাজের নানা অংশ ও গোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইস্তাম্বুলের চারটি পৃথক দুর্নীতি মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে গত শনিবার গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করছে কর্তৃপক্ষ। ওই দিনই ৪৭ জন পৌর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
পুলিশ এরই মধ্যে ইস্তাম্বুল সিটি হলের দুর্নীতির অভিযোগে প্রায় ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে ইমামোগলুর ব্যক্তিগত সচিব ও তাঁর নিরাপত্তা কর্মকর্তাও রয়েছে।
সিএইচপি ইতিমধ্যে ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইমামোগলুকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিভিন্ন জরিপে তিনি এরদোয়ানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তবে নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারবেন কি না, তা বিচার কার্যক্রমের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে।
২২ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ান পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন। পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে হলে তা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে এগিয়ে আনতে হবে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এরদোয়ান পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর স এইচপ র এরদ য় ন
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।