Samakal:
2025-09-18@01:19:15 GMT

মব ভায়োলেন্সের চ্যালেঞ্জ

Published: 5th, June 2025 GMT

মব ভায়োলেন্সের চ্যালেঞ্জ

গত বছরের ৫ আগস্ট একদিকে যেমন দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক স্থবিরতা ভেঙে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি মব সন্ত্রাস বা গণপিটুনির মতো এক গভীর সামাজিক ব্যাধি নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। 

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১১৯ জন নিহত হয়েছেন; আহত ৭৪ জন। গত ১০ বছরে গণপিটুনিতে মোট ৭৯২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ২০২৪ সালে। গত বছর এ ধরনের ঘটনায় ১৭৯ জন নিহত হয়েছেন।

সারাদেশে মব ভায়োলেন্সের যে চিত্র উন্মোচিত হয়েছে, তা কেবল আইনশৃঙ্খলার সংকট নয়, বরং রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, সামাজিক সংহতির অভাব এবং মানবিক মূল্যবোধের এক গভীর অবক্ষয়কে নির্দেশ করে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গণরোষ বা স্বতঃস্ফূর্ত জনতার প্রতিক্রিয়া নতুন নয়। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে, বিশেষ করে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে আইনের শাসনের দুর্বলতা এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থাহীনতা গণপিটুনির মতো ঘটনাকে ইন্ধন জুগিয়েছে। ঔপনিবেশিক আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন সরকার পরিবর্তনের সময়েও এমন প্রবণতার নজির পাওয়া যায়।

৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে মব সন্ত্রাসের যে ব্যাপকতা ও নির্মমতা দেখা গেছে, তা পূর্ববর্তী সব ঘটনাকে ছাড়িয়ে গেছে। 

এটা দুঃখজনক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে নির্ভয়ে রাজপথে যে তরুণ সমাজ নেমেছিল, তাদেরই একটি অংশকে গণপিটুনির মতো অমানবিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। এটি যেমন তাদের মহান ত্যাগের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তেমনি আইনের শাসনের প্রতি তাদের নিজেদেরই বিশ্বাসের দুর্বলতা ফুটিয়ে তোলে। সম্ভবত দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, বিচারহীনতার হতাশা এবং তাৎক্ষণিক আবেগের বশবর্তী হয়ে তারা এমন কাজ করেছে, যা তাদের মূল লক্ষ্য ও আদর্শের পরিপন্থি।

এটি গভীর সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক সংকট, যেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা নিজেই অন্যায়ের পথে পরিচালিত হচ্ছে। মব ভায়োলেন্স থেকে পরিত্রাণের পথ প্রথমত, সুসংহত রাজনৈতিক ও সামাজিক রোডম্যাপ। দ্বিতীয়ত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ ও সহনশীলতার বার্তা প্রদান। চতুর্থত, গুজব ও ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে কার্যকর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়ানো ও সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে উস্কানিমূলক বা মিথ্যা তথ্য দ্রুত চিহ্নিত করে অপসারণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সাইবার অপরাধ দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা বাড়ানো এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। 

মব ভায়োলেন্স ঠেকাতে সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা নাগরিক সমাজ, মানবাধিকারকর্মী এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। 

এটা সত্য, ৫ আগস্টের ঘটনা প্রবাহ বাংলাদেশকে কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এ সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা এবং সাধারণ জনগণের সুরক্ষায় জনতার পাশে থেকে কাজ করে গেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সম্প্রতি জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের মবতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান সাধারণ মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তির আভাস দিয়েছে। বিশেষ করে রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বাসায় হামলার পর সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থানকে অনেকেই মব সংস্কৃতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী বার্তা হিসেবে মনে করছেন।

আশা করা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম, সঠিক আইনি অবকাঠামো, সংবাদমাধ্যমের জোরালো ভূমিকা, একই সঙ্গে ব্যাপক জনসচেতনতা মব ভায়োলেন্সের ক্ষত সারিয়ে তুলবে। 

রাজু আলীম: কবি ও লেখক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মব ভ য় ল ন স গণপ ট ন র র জন ত ক আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি

‎নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল  সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।

সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে  একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য। 

সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের  গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি,  সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।

‎‎মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর)  শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

‎দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।

‎‎জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।

‎‎এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।

‎‎তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।

‎‎এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
  • নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
  • ১৭ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ, নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই হাজার সদস্য
  • ফরিদপুরে অবরোধ শনিবার পর্যন্ত স্থগিত
  • আসন্ন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের