আগামী শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। এখন পর্যন্ত অনেক শিল্পকারখানার শ্রমিক বেতন-বোনাস পাননি। যেসব কারখানা বেতন দিয়েছে, তাদের কেউ কেউ আবার অর্ধেক দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কিছু কারখানায় এপ্রিল মাসের বেতনও বকেয়া রয়েছে।
শিল্প পুলিশের সদস্য, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এবং শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। যদিও গত মাসে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস ৩১ মের মধ্যে এবং মে মাসের বেতন ৩ জুনের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়।
সাভার-আশুলিয়া, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটের বিভিন্ন খাতের ৯ হাজার ৬৮৩ কারখানা তদারকি করে শিল্প পুলিশ বলেছে, গতকাল বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত ১৯ শতাংশ বা ১ হাজার ৮৭৪টি কারখানা ঈদ বোনাস পরিশোধ করেনি।
শিল্প পুলিশের তদারকিতে থাকা ৯ হাজার ৬৮৩ কারখানার মধ্যে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র কারখানা রয়েছে ২ হাজার ৪৫৭টি। এসব কারখানার মধ্যে ১৯ শতাংশ বা ৪৬৪টিতে গতকাল বিকেল পর্যন্ত বোনাস পরিশোধ হয়নি। তার মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য ২৭৯, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর ১৩০ এবং বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর ৮১টি সদস্য কারখানা বোনাস দেয়নি।
অন্যদিকে মে মাসের বেতন ৬০ শতাংশ শিল্পকারখানা গতকাল রাত নয়টা পর্যন্ত দেয়নি। শিল্প পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ৯ হাজার ৬৮৩ শিল্পকারখানার মধ্যে ৫ হাজার ৮৬৪টি মে মাসের বেতন পরিশোধ করেনি। শুধু তা-ই নয়, ৩৭৫টি কারখানা গত এপ্রিলের বেতন পরিশোধ করেনি।
শিল্প পুলিশের তথ্যানুযায়ী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭২ শতাংশ কারখানা এখনো গত মাসের বেতন পরিশোধ করেনি। বিজিএমইএর সদস্য ৯৮২, বিকেএমইএর ৪৯৮ এবং বিটিএমএর ৭০টি সদস্য কারখানা গতকাল রাত নয়টা পর্যন্ত বেতন দেয়নি।
অবশ্য বিজিএমইএর প্রতিবেদন বলছে ভিন্ন কথা। সংগঠনটির দাবি, ঢাকা ও চট্টগ্রামে তাদের সদস্যভুক্ত ২ হাজার ৯২ সচল কারখানার প্রায় ৯৬ শতাংশ কারখানা গতকাল পর্যন্ত বোনাস দিয়েছে। এ ছাড়া মে মাসের বেতন দিয়েছে ৫৮ শতাংশ কারখানা। অন্যদিকে গত এপ্রিল মাসের বেতন প্রক্রিয়াধীন আছে ১২ কারখানার। গতকাল ৭৭০ কারখানা ছুটি হয়েছে।
বর্তমানে বিজিএমইএর তিনটি কারখানায় বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে বসুন্ধরা অ্যাপারেলস, সেজেনস ড্রেস ও সেইন অ্যাপারেলস। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকে (গতকাল) পর্যন্ত ৪৮ শতাংশ কারখানা বেতন-ভাতা দিয়ে ছুটি দিয়েছে। বাকিরা বৃহস্পতিবার শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করে ছুটি দেবে।’
এদিকে নারায়ণগঞ্জের ১৪টি শিল্পকারখানায় বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান। কারখানাগুলো হচ্ছে হামিদ ফেব্রিকস, তোহা নিট ফ্যাশন, স্টারলেট কম্পোজিট, স্টারলেট অ্যাপারেলস, জননী ফ্যাশন, ইয়াং থ্রি ফ্যাশন, এশিয়ান টেক্সটাইল মিলস, ফ্যাশন ওয়ার্ল্ড, টোটাল ফ্যাশন, অবন্তি কালার টেক্স, ক্রোনি অ্যাপারেলস, এলসন ফুডস ও সাম্পান সুজ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদমজীতে অবস্থিত শিল্প পুলিশ-৪ পরিদর্শক (গোয়েন্দা) সেলিম বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, কারখানাগুলো বেতন-ভাতা কালকের (আজ) মধ্যে পরিশোধের কথা রয়েছে। তারা যথাযথভাবে বেতন-ভাতা দিচ্ছে কি না, সেটি নজরদারিতে আছে।
নারায়ণগঞ্জের বেতন-ভাতা বকেয়া থাকা ১৪টি কারখানার মধ্যে ৯টি বিকেএমইএর সদস্য। তবে বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মনসুর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেতন-ভাতা পরিশোধে কোনো সমস্যা নেই। অধিকাংশ কারখানা আজকে (গতকাল) বেতন-ভাতা দিয়ে ছুটি দিয়েছে। আমরা কারখানার মালিকদের ঈদের আগে গত মাসের অন্তত অর্ধেক বেতন পরিশোধের পরামর্শ দিয়েছিলাম। অধিকাংশ কারখানা সেভাবেই বেতন দিয়েছে।’
এদিকে ঢাকার অদূরে সাভার ও ধামরাই উপজেলায় ৩২টি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই, বেতন ও বোনাস পরিশোধ নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এই এলাকার ১ হাজার ৮৬৩ শিল্পকারখানার মধ্যে ৬০ শতাংশ গতকাল ছুটি হয়েছে। এসব তথ্য দিয়ে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যাগ্রস্ত ৩২ কারখানার সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন তাঁরা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন বলেন, বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকের বেতন-ভাতা এখনো বাকি। ছুটির আগে যদি শ্রমিকেরা তাঁদের পাওনা বুঝে না পান, তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করবেন কীভাবে। প্রতি ঈদেই এমন ঘটনা খুবই দুঃখজনক।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার এবং প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ব জ এমইএর ব ক এমইএর অ য প র লস প রথম আল এমইএর স পর শ ধ ক স গঠন ব র সদস য বস ত র গতক ল সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ, কুমিল্লায় যানজটে ভোগান্তি
পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে। তবে এর আগেই ঘরমুখী মানুষের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে; যানবাহনের চাপ বেড়েছে সড়কে। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। আজ বুধবার সকাল আটটায় চট্টগ্রামগামী লেনে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ধীরে ধীরে যানজট কমছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা দিয়ে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করেন। একসঙ্গে অসংখ্য যানবাহন পারাপারের কারণে টোল প্লাজায় অনেক সময় যানবাহন পারাপারে ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যায়। সেখানেও যানজট তৈরি হয়।
গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। আজ বুধবার ভোর চারটায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা সেতু এলাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারে যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল আটটায় যানজট কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটারে পৌঁছায়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে যানজট কমতে থাকে। সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কের ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারে যানজট ছিল।
সকাল আটটায় যানজট কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটারে পৌঁছায়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে যানজট কমতে থাকে। সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কের ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারে যানজট ছিল।সকাল ৯টায় মহাসড়কের কানড়া এলাকায় কথা হয় কুমিল্লার হোমনা উপজেলার দুলালপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী কমল চন্দ্র সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোর পাঁচটায় ঢাকার কাজলা থেকে সায়মুন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে উঠে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিই। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ মেঘনা সেতু এলাকায় পৌঁছার পর থেকেই যানজটে আটকা পড়ি। এতে এক ঘণ্টার পথ চার ঘণ্টায় অতিক্রম করতে হয়েছে।’
দাউদকান্দি উপজেলার পেন্নাই বাজারের মাছ ব্যবসায়ী, উপজেলার সিঙ্গুলা গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন সকাল সোয়া ৯টায় মহাসড়কের দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে ছিলেন। তিনি বলেন, ঢাকার যাত্রাবাড়ি আড়ত থেকে মাছ কিনে, ভোর পাঁচটায় সেন্ট মার্টিন পরিবহনের বাসে উঠেন। মেঘনা সেতু এলাকায় পৌঁছার পর যানজটে আটকা পড়েন। এতে সাড়ে তিন ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় নষ্ট হয়েছে। মাছ নিয়ে যথাসময়ে পৌঁছাতে না পারায় লাভের বিপরীতে লোকসানও হতে পারে।
ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসা মতলব দক্ষিণ উপজেলার শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী সৃজন চন্দ্র মজুমদার একই অভিজ্ঞতার কথা জানান।
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদ খান চৌধুরী বলেন, মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ যানজটমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি, দাউদকান্দি মডেল থানা–পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।