বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে সৃষ্ট গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। বিগত সরকারের আমলে দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য ব্যাপক
মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ যুক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল এই বৈষম্য থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। গণ-অভ্যুত্থানের দেয়াললিখনেও এর ছাপ ফুটে উঠেছিল। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর পদক্ষেপ থাকবে, এটাই প্রত্যাশিত।

বাজেটে যেসব খাতের সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করা যায়, তার মধ্যে রয়েছে করব্যবস্থা এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ। দেশে বিদ্যমান করব্যবস্থা বৈষম্যমূলক। কারণ, ধনীদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ কর আহরণের বদলে দেশের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভ্যাট ও শুল্কের মতো পরোক্ষ কর আদায়ে জোর দেওয়া হয়।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় ও বরাদ্দ করা অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করতে না পারায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যয়ের বেশির ভাগটা আসে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে, যা দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের পক্ষে বহন করা কঠিন। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ অপ্রতুল, অদক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্ত। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত বিভিন্ন কমিশন, কমিটি ও টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে এসব খাতে বৈষম্য দূর করতে বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ করা হয়েছিল। প্রশ্ন হলো এবারের বাজেটে এসব সুপারিশ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে?

আরও পড়ুনসংসদ ছাড়া বাজেট: জবাবদিহির ঘাটতি পূরণের পথ কী২২ ঘণ্টা আগে

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে প্রগতিশীল করব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করা হয়। এ ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পরোক্ষ কর আদায়ের বদলে ধনীদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ কর আদায়ে জোর দেওয়া হয়। কিন্তু এবারের বাজেটে এই সুপারিশের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।

বাজেটে বিভিন্ন ধরনের কর, শুল্ক, ভ্যাটের হ্রাস–বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হলেও সব মিলিয়ে পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা আগের মতোই রয়ে গেছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকার যত কর আহরণ করবে, তার ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশই পরোক্ষ কর, যা ভ্যাট ও শুল্ক হিসেবে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে যাবে। আওয়ামী লীগ সরকার ঘোষিত বিগত বাজেটে পরোক্ষ করের হার ছিল ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের ১৫ শতাংশ বা জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া ব্যয়বহুল চিকিৎসায় আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সামাজিক ‘স্বাস্থ্যকবচ’ নামে স্বাস্থ্যবিমা চালু করার সুপারিশ করেছে।

এবারের বাজেটে এসব সুপারিশের কোনোটাই রক্ষা করা হয়নি। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা, যা বাজেটের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় ৫০০ কোটি টাকা বাড়লেও জিডিপির অনুপাতে কমেছে। গত অর্থবছরের বরাদ্দ ছিল জিডিপির শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ, যা এবারের বাজেটে আরও কমে হয়েছে জিডিপির শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ।

আমরা একদিকে দেখছি, সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। গভীর সংস্কার করার জন্য নির্বাচন দেরিতে করার কথা বলা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের কাজে সংস্কারের কোনো ছাপ পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি সরকারের নিজের গঠিত কমিশন, কমিটি ও টাস্কফোর্সের বৈষম্যবিরোধী সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে পর্যন্ত অগ্রগতি নেই। প্রত্যাশা ছিল বাজেটে তার একটা প্রতিফলন পাওয়া যাবে। কিন্তু সেটাও দেখা গেল না।

শিক্ষা বিষয়ে কোনো কমিশন গঠন করা না হলেও প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি প্রাথমিক শিক্ষায় বৈষম্য দূরীকরণে বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল, যার মধ্যে রয়েছে ‘মিড-ডে মিল’ চালু, খাতা-কলম-ব্যাগ ইত্যাদি শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য বর্ধিত হারে অর্থসহায়তা প্রদান ইত্যাদি। কিছু উপজেলায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালুর জন্য ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রাথমিক শিক্ষায় বরাদ্দ গত বাজেটের তুলনায় ৩ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা কমে গেছে।

বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ এমনিতেই জিডিপির ২ শতাংশের কম। ইউনেসকোর পরামর্শ অনুসারে, জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সুযোগ ছিল শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে এবং তার দুর্নীতিমুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে পরবর্তী সরকারগুলোর জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাওয়ার। দেখা যাচ্ছে, এবারের বাজেটে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষা—সব মিলিয়ে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ টাকার অঙ্কে কিছুটা বাড়লেও জিডিপির অনুপাতে বরাবরের মতোই কমেছে। বাজেটে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ৯৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

অর্থনৈতিক কৌশল–সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়—এমন কর্মসূচিকে সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচির আওতা থেকে বাদ দেওয়া, একই বিষয়ে আলাদা অনেকগুলো কর্মসূচি না রেখে একত্র করে ব্যয় হ্রাস ও অদক্ষতা দূর করা, শহুরে দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা, যথাযথভাবে সুবিধাভোগী বাছাই করা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ভাতার পরিমাণ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয়ের ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করা হয়।

এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কোনো কোনো কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ টাকা এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা কিছুসংখ্যক বাড়ানো হলেও
তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। যেমন বয়স্ক ভাতার মাসিক হার ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা কিংবা বিধবা ভাতা ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা করা হলেও
তা জাতীয় দারিদ্র্যসীমার আয়ের মাত্র ১৫ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সংখ্যা ১৪০টি থেকে কমিয়ে ৯৫টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে; বরাদ্দ গত বছরের ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন যেসব কর্মসূচি অর্থনীতি–সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছিল, তার মধ্যে রয়েছে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, কৃষি খাতে ভর্তুকি, সঞ্চয়পত্রের সুদ, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিনা মূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ ইত্যাদি। সঞ্চয়পত্রের সুদ ছাড়া বাকিগুলো বরাবরের মতো এবারের বাজেটেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসেবে দেখানো হয়েছে।

সরকারি কর্মচারীদের পেনশন বাবদ ৩৫ হাজার ২৮২ কোটি, কৃষি ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার কোটি, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বাবদ ৪ হাজার ৮০০ কোটি এবং পাঠ্যবই বিতরণ বাবদ ২ হাজার ১৯২ কোটি টাকা বাদ দিলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ। এই হার বিশ্বের অনেক নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ তো বটেই, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সামাজিক নিরাপত্তা খাতে গড় বরাদ্দের (৩ দশমিক ৮ শতাংশ) মাত্র চার ভাগের এক ভাগ।

আমরা একদিকে দেখছি, সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। গভীর সংস্কার করার জন্য নির্বাচন দেরিতে করার কথা বলা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের কাজে সংস্কারের কোনো ছাপ পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি সরকারের নিজের গঠিত কমিশন, কমিটি ও টাস্কফোর্সের বৈষম্যবিরোধী সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে পর্যন্ত অগ্রগতি নেই। প্রত্যাশা ছিল বাজেটে তার একটা প্রতিফলন পাওয়া যাবে। কিন্তু সেটাও দেখা গেল না।

আগের ধারাবাহিকতাতেই বাজেটে কর আহরণের কাঠামো পরোক্ষ করনির্ভর রাখা হলো, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে জিডিপির অনুপাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির বদলে উল্টো কমানো হলো। অথচ এসব খাতে জনমুখী সংস্কারের জন্য সংবিধান সংস্কার কিংবা রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছানোর মতো কোনো জটিলতা ছিল না। সরকারের সদিচ্ছাই বিদ্যমান তীব্র অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারত। নিজের আয়ত্তের মধ্যে থাকা এই সংস্কারটুকু যে সরকার করার চেষ্টা করল না, সে সরকার যে সংস্কার বিষয়ে আসলেই আন্তরিক, দেশের মানুষ তা বুঝবে কী করে!

কল্লোল মোস্তফা লেখক ও বিশ্লেষক

মতামত লেখকের নিজস্ব

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প র শ কর ছ র স প র শ কর ব যবস থ সরক র র র জন য বর দ দ দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 

বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না।  মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন  করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও  এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?

ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো।  বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে। 

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার ‍বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ

রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা 

রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে। 
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। 

১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত। 

জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। 

বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই। 

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।  

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঝগড়া থেকে দেয়ালে মাথা ঠোকা, সালমান-ঐশ্বরিয়ার সম্পর্কের বিষয়ে প্রকাশ্যে আনলেন প্রতিবেশী
  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের কাজ কি শুধু ভাইভা নেওয়া
  • কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-গ্রামবাসীতে বিদ্বেষ কেন
  • চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: ট্রাম্প কি দাঙ্গা–ফ্যাসাদকেই নীতি হিসেবে নিয়েছেন