বেকারত্ব: প্রবহমান সমস্যাটির সমাধান কী
Published: 6th, June 2025 GMT
আজ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ২৭ লাখ মানুষ কর্মহীন এবং এ অর্থনীতিতে বেকারত্বের হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি। বর্তমান অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২০ লাখ কাজ বিলুপ্ত হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। তবে এসব সংখ্যার ক্ষেত্রে বলে নেওয়া ভালো, যে নিয়মে বেকারত্ব সংজ্ঞায়িত এবং গণনা করা হয়, তাতে বেকারত্বের সরকারি উপাত্ত কর্মহীনতার বাস্তব অবস্থাকে অবপ্রাক্কলিত করে।
আদতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সত্যিকারের বেকারত্বের হার সরকারি ভাষ্যের চেয়ে বেশি। যেমন সরকারি তথ্য বলে, বাংলাদেশে নারী বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু বেসরকারি প্রাক্কলিত সংখ্যাটি হচ্ছে ৯ শতাংশ।
বর্তমান অর্থবছরে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। মহামারির বছরগুলো বাদ দিলে এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল গত ৩৪ বছরে বাংলাদেশের শ্লথতম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার। খাতওয়ারি প্রবৃদ্ধির নিরিখে, বর্তমান অর্থবছরে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ—গত বছরের প্রবৃদ্ধি হার ৩ দশমিক ৩০ শতাংশের প্রায় অর্ধেক। দেশের বহু অঞ্চলে বিস্তৃত বন্যার কারণে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সময়কালে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ০৯ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৫১ শতাংশে নেমে এসেছে। ভোগ-চাহিদার হ্রাস, শিল্পোৎপাদনের সংকোচন, রপ্তানি-শ্লথের কারণে বিভিন্ন সেবার চাহিদা কমে গেছে। যেহেতু কৃষি ও সেবা খাত মিলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ৮৩ শতাংশ কর্ম নিয়োজন নিশ্চিত করে, তাই এই দুই খাতের হ্রাসকৃত প্রবৃদ্ধির কারণে অর্থনীতিতে কর্মহীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্বিতীয় যে কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, সেটা হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিনিয়োগের অনুপস্থিতি এবং বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মোট বিনিয়োগ ছিল জাতীয় আয়ের ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ। বর্তমান বছরে সে অনুপাত কমে এসে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৪ শতাংশে। বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংখ্যাদ্বয় হচ্ছে যথাক্রমে ২৪ শতাংশ এবং ২২ দশমিক ৫ শতাংশ।
বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ হ্রাসের নানান কারণ আছে, যেমন অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সংকোচনশীল মুদ্রানীতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, শ্রমিক অসন্তোষ এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাব।
রাজনৈতিক অগ্রযাত্রার একটি পরিষ্কার রূপরেখার অনুপস্থিতিতে দেশি–বিদেশি কোনো বিনিয়োগকারীই নতুনভাবে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসছেন না। ফলে বেসরকারি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাংলাদেশে বাড়ছে না। এ জন্য অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান বাড়ছে না।
উচ্চ মূল্যস্ফীতিও বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ওপরে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তিনটি উপায়ে বিনিয়োগের ওপরে মূল্যস্ফীতির বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হয়েছে। প্রথমত, উৎপাদনের ব্যয় বাড়িয়ে দিয়ে; দ্বিতীয়ত, ভোগ-চাহিদা কমিয়ে দিয়ে এবং তৃতীয়ত, ঋণসুবিধার সংকোচন ঘটিয়ে।
মূল্যস্ফীতির ফলে উৎপাদন উপকরণগুলোর ব্যয়ভার বেড়ে যায়। ফলে বিনিয়োগ উৎসাহিত হয়নি। একইভাবে চাহিদার ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির কারণে ভোগ–চাহিদা সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। ফলে বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে উৎসাহিত হননি। দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। সুদের হারকে বাড়িয়ে চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ চাহিদাও নিরুৎসাহিত হচ্ছে। সুতরাং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অর্থনীতিতে বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে, ব্যবসা প্রসারিত হচ্ছে না এবং কর্ম সংযোজন হচ্ছে না।
বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা যে ধরনের দক্ষতা তৈরি করছে, তার সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে ও ভবিষ্যতে যে ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হবে, তার কোনো মিল নেই। যে ধরনের দক্ষতা বাজারে লভ্য, তা শ্রমবাজারে উদ্যোক্তাদের চাহিদার জন্য প্রাসঙ্গিক নয়। যেমন কম্পিউটার জানা, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বর্তমান শ্রমবাজারের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
কিন্তু বহু কর্মানুসন্ধানী মানুষের কম্পিউটারের এবং তথ্যপ্রযুক্তির প্রায়োগিক সাক্ষরতা নেই। ফলে তাঁরা কর্ম নিয়োজিত হতে পারেন না। কর্মানুসন্ধানে শিক্ষার মানও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুর্নীতি, মেধামানকে উপেক্ষা করার মতো নানান প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ও দেশে কর্মহীনতাকে বাড়িয়ে তুলেছে।
এই সবকিছুর পটভূমিতে মৌলিক প্রশ্নটি হচ্ছে বাংলাদেশে কর্ম নিয়োজন বাড়ানোর জন্য ও মানুষের কর্মহীনতা কমানোর জন্য কী কী করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে নীতিমালা এবং প্রাতিষ্ঠানিক আঙ্গিক—দুই জায়গাতেই ব্যবস্থা নিতে হবে। নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে গৎবাঁধা চিন্তাভাবনার বাইরে আমাদের ভাবতে হবে। যেমন প্রথাগত কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অনুসরণ বেকারত্ব সমস্যার সমাধানে কিছুটা সাহায্য করবে নিশ্চয়ই, কিন্তু সেসব পন্থা আজকের জগতের কর্মহীনতা সমস্যা সমাধানে নিতান্তই অপারগ।
তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের ফলে কর্মের জগৎ দ্রুত বদলাচ্ছে এবং প্রথাগত ধারণা নিয়ে কর্মসৃষ্টির চিন্তাচেতনা অচল হয়ে পড়েছে। তাই ভবিষ্যৎ কাজের জগতের ধ্যানধারণা নতুন নতুন দক্ষতা এবং ভিন্নভাবে কাজের সংগঠন ও প্রক্রিয়া দাবি করবে।
প্রথমেই বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে কী কী ধরনের দক্ষতা তৈরি করা হয়, তার একটা বিশদ মূল্যায়ন প্রয়োজন। সে মূল্যায়নে বের করতে হবে, কোথায় কোথায় বর্তমান দক্ষতা ব্যবহারের সুযোগ আছে এবং কোথায় কোথায় দক্ষতার ঘাটতি আছে। এ–জাতীয় একটি মূল্যায়নে দেশজ উদ্যোক্তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মানবসম্পদের চাহিদাকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। বাইরের জগতে কী ধরনের সুযোগ উদ্ভূত হবে এবং সেসব সুযোগের জন্য কী ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন হবে, তারও একটি তালিকা প্রস্তুত করা জরুরি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের নতুন বাস্তবতাকে ভুলে গেলে চলবে না। এই মূল্যায়ন দক্ষ জনশক্তির অভিবাসনকে অগ্রাধিকার দেবে। এই তিনটি বিষয়কে সমন্বিত করে বাংলাদেশের জন্য একটি জনশক্তি পরিকল্পনা করতে হবে। সেই পরিকল্পনাকে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা প্রয়োজন।
বর্তমানের জাতীয় কর্ম নিয়োজন পরিকল্পনা ২০২২–কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সংশোধন এবং সময়োপযোগী করা দরকার, যাতে বর্তমান শ্রমবাজার এবং ভবিষ্যৎ শ্রমবাজারের সম্ভাবনা, প্রয়োজন ও অন্তরায়গুলো প্রতিফলিত হয়।
দ্বিতীয়ত, দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বিশদ একটি মূল্যায়ন এবং সে আলোকে এর কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন। এ মূল্যায়নে শিক্ষাব্যবস্থার পাঠক্রম, পাঠ্যসূচি, শিক্ষাদান ও শিক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি, ভৌত এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সুবিধাদি পর্যালোচিত হবে। এই মূল্যায়নের লক্ষ্য হবে উপর্যুক্ত জনশক্তি পরিকল্পনায় যে জাতীয় দক্ষতা চাহিদা চিহ্নিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাকাঠামো সে চাহিদা মেটাতে পারে কি না, তা পর্যালোচনা করা।
এই পর্যালোচনার আলোকে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। এই পরিবর্তনে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত শিক্ষাকে যথাযথ স্থান দেওয়া দরকার। সেই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়গুলোকে সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ রকম একটি শিক্ষাকাঠামো বাংলাদেশের জন্য প্রণয়ন করতে গিয়ে দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সামঞ্জস্য বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার।
সেই সঙ্গে প্রস্তাবিত শিক্ষাকাঠামো অন্যান্য দেশের সাফল্যের অভিজ্ঞতাকেও বিবেচনায় আনবে। বাংলাদেশের শ্রমবাজারের দক্ষতা চাহিদা ও দক্ষতা জোগানের মধ্যে অসামঞ্জস্য দূর করা এবং ভবিষ্যৎ শ্রমবাজারের প্রয়োজনীয় দক্ষতার জোগান দিতে হলে বাংলাদেশের শিক্ষাকাঠামোর এই প্রস্তাবিত পরিবর্তন অপরিহার্য। এই কাঠামো দক্ষ জনশক্তির জন্ম দেবে, শুধু সনদপ্রাপ্ত মানুষ তৈরি করবে না।
তৃতীয়ত, কর্মদক্ষতা ক্রমাগতভাবে বাড়াতে হলে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। এর ফলে শিক্ষার মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জিত হয়েছে এবং এ পর্যন্ত যে দক্ষতা লাভ করা গেছে, সেগুলোকে সময়োপযোগী, আধুনিক এবং প্রাসঙ্গিক করে রক্ষণ করা যাবে। দক্ষতা উন্নীতকরণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে, যেমন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা, কাজে থাকাকালীন প্রশিক্ষণ, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে সুলভ প্রশিক্ষণ, দক্ষতাভিত্তিক প্রণোদনা, ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা, সরকারি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সুযোগ গ্রহণ, বেসরকারি সাহায্য সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা ইত্যাদি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা দরকার।
যদিও বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যান্য সামষ্টিক সমস্যাগুলোর সঙ্গে একই দৃষ্টিতে কর্মহীনতাকে আলোচনা করা হয় না, কিন্তু এটি একটি নীরব সমস্যা হিসেবে দ্বারে টোকা দিয়ে যাচ্ছে। কর্ম নিয়োজন বিষয়টি আমাদের প্রবৃদ্ধি কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা দরকার। এত দিনের প্রচলিত প্রবৃদ্ধি-চালিত কর্ম নিয়োজন কৌশলের বিপরীতে আমরা হয়তো এখন কর্ম নিয়োজন-চালিত প্রবৃদ্ধি কৌশলের কথা ভাবতে পারি।
বাংলাদেশের কর্মহীনতা সমস্যা মেটাতে হলে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ, অতীতের পন্থা দিয়ে ভবিষ্যতের সমস্যার মোকাবিলা করা যাবে না।
ড.
সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের ভূতপূর্ব পরিচালক।
মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষ ব যবস থ শ রমব জ র র কর ম ন য় জ র প রব দ ধ প রব দ ধ র ব সরক র জনশক ত র জন য ত হয় ছ আম দ র গ রহণ সমস য দরক র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
হাদিকে গুলিবর্ষণের নিন্দা, সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি মির্জা ফখরুলের
ঢাকায় সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে আসন্ন নির্বাচনে সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে ওসমান হাদিকে গুলি করার পর বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে এ আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অবিলম্বে প্রকৃত দোষীকে খুঁজে বের করে নিয়ে আইনের আওতায় আনার জন্য দাবি জানাচ্ছি এবং এই সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’
জুলাই অভ্যুত্থানের পর গড়ে ওঠা আলোচিত সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে প্রচার চালাচ্ছেন। আজ দুপুরে বিজয়নগরে একটি মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তি তাঁকে গুলি করে পালিয়ে যায়। হাদি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে ‘লাইফ সাপোর্টে’ রয়েছেন।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন রেখে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিনই এই হামলাকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র মনে করছেন বিএনপির নেতারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি একটা অশনিসংকেত দেখতে পাচ্ছি যে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য সেই শক্তি আবার চক্রান্ত শুরু করেছে। কিছুদিন আগে দেখেছেন, চট্টগ্রামে আমাদের একজন ক্যান্ডিডেটকে গুলি করেছিল।’
নির্বাচনকে সম্পূর্ণভাবে সন্ত্রাসমুক্ত করতে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি যে এটা চক্রান্তের অংশ। এটাকে এখনই বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
সম্ভাব্য প্রার্থী হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামীকাল শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন বলেও জানান মির্জা ফখরুল।
আমি একটা অশনিসংকেত দেখতে পাচ্ছি যে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য সেই শক্তি আবার চক্রান্ত শুরু করেছে। কিছুদিন আগে দেখেছেন, চট্টগ্রামে আমাদের একজন ক্যান্ডিডেটকে গুলি করেছিল। —মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপিনির্বাচনের পর একটি জাতীয় সরকার গঠনের কথা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের কমিটমেন্ট আছে যে এই নির্বাচন এবং নির্বাচনের পরে আমরা সকল দলকে নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করব, সে ব্যাপারে আমাদের কমিটমেন্ট শক্তিশালী রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকেই রায় দেবেন। এখানে আমরা মনে করি উগ্রতার স্থান থাকবে না।’
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ১৪৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভাসানী জনশক্তি পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল মাওলানা ভাসানীকে স্মরণ করে বলেন, ‘মাওলানা ভাসানীর নাম বাদ দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা—এক অনন্য রাজনৈতিক চরিত্র। ধর্ম ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে তিনি কোনো বিভেদ দেখেননি। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্র।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবলু। বক্তব্য দেন দলটির মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিমসহ অন্য নেতারা।
আরও পড়ুনওসমান হাদি ‘লাইফ সাপোর্টে’: ঢাকা মেডিকেলের পরিচালকের দপ্তর২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনদেশ অত্যন্ত সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে: তারেক রহমান১০ মিনিট আগে