ফেরদৌসী রহমানের বনানীর বাড়িতে গিয়েছিলাম ৪ জুন ২০২৫। সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেদক মনজুর কাদের। গিয়েছিলাম গল্প করতে, আর ভিডিওতে কিছু কথা ধারণ করে রাখতে। একদিন আমি থাকব না, একদিন তিনি থাকবেন না; কিন্তু কথাগুলো হয়তো প্রযুক্তি ধরে রাখবে, অনন্তের ইথারে। ফেরদৌসী রহমানের বয়স এখন ৮৪।

ফেরদৌসী আপার দুই ছেলে, রুবাইয়াত আর রাজিন, দেশের বাইরে থাকেন। গত বছর তাঁর স্বামী প্রকৌশলী শিল্পোদ্যোক্তা রেজাউর রহমানও চলে গেছেন সংসারের মায়া ছেড়ে, পরপারে।

ফেরদৌসী রহমান এখন একাই থাকেন। কিংবদন্তি বললে কম বলা হয় তাঁকে। সারা ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী প্রবাদপ্রতিম আব্বাসউদ্দীন আহমদের মেয়ে। স্কুলে পড়ার আগে আব্বার সঙ্গে মঞ্চে গান করেছেন, রেডিওতে বড়দের গান গাওয়ার জন্য ১৮ বছর বয়স হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল, তিনি গেয়েছেন ১৫ বছর বয়সে, গ্রামোফোন রেকর্ড বেরিয়েছে তাঁর কৈশোরে। আধুনিক গান গেয়ে বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগে ছিলেন দেশজোড়া প্রিয়তম কণ্ঠশিল্পী। ভাওয়াইয়া গান জনপ্রিয় হয়েছে তাঁরই কণ্ঠে। ‘ও কি গাড়িয়াল ভাই’, কিংবা ‘ওকি ও বন্ধু কাজলভোমরা রে’-- আহা, সেই সব গান, এখনো বুকের মধ্যে যেন ছুরি চালিয়ে দেয়, চোখ ভিজে আসে-- যখন ইউটিউবে শুনি ফেরদৌসী রহমানের কণ্ঠে ‘নোলক’ সিনেমার গান। ম্যাট্রিকে মেয়েদের মধ্যে ফার্স্ট।

এখন এই নিঃসঙ্গ বয়স্বী জীবনে ফেরদৌসী রহমান কার কথা ভেবে সবচেয়ে বেশি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, আপনারা আন্দাজ করুন তো! স্বামী চলে গেছেন গত বছর, ছেলেরা থাকে দূর পরবাসে, দুই ভাই বিচারপতি মোস্তাফা কামাল আর মুস্তাফা জামান আব্বাসীও চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। তারপরেও ফেরদৌসী রহমান তাঁর ৮৪ বছর বয়সে সবচেয়ে বেশি মিস করেন তাঁর আব্বাকে। যে আব্বাকে তিনি হারিয়েছেন ১৯৫৯ সালে, মানে ফেরদৌসীর ১৮ বছর বয়সে। ৬৬ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেছিলেন আব্বাসউদ্দীন, তখন তাঁর বয়স ৫৮, কেন তিনি এত আগে চলে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে আফসোস করেন ফেরদৌসী রহমান। তাঁর চোখ ভিজে যায়, কণ্ঠ ধরে আসে!

আমরা গল্প করি। কাজী নজরুল ইসলাম আর আব্বাসউদ্দীন আহমদ, অবিভক্ত ভারতে গানের হিল্লোল বয়ে দিয়েছিলেন। মুসলমানেরা তো বটেই, হিন্দু–মুসলিম–বৌদ্ধ–খ্রিষ্টান সবাই কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আর আব্বাসউদ্দীন আহমদের কণ্ঠের গানে পাগল হয়ে গিয়েছিল। সে যে কী উন্মাদনা, তা আমরা বিভিন্ন স্মৃতিকথায় পড়ে কল্পনা করে নিতে পারি। ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে’, কিংবা ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে’, ‘ফান্দে পড়িয়া বড়া কান্দে রে’-- প্রত্যেকের মুখে মুখে ছিল সেই গান।

আব্বাসউদ্দীন আহমদের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের পরিচয় হয়েছিল কোচবিহারে। আব্বাসউদ্দীন নজরুল ইসলামকে বলেছিলেন ইসলামী গান লিখতে, আব্বাস গাইবেন আর গ্রামোফোন রেকর্ড বের হবে। কিন্তু রেকর্ড কোম্পানি এই গান চলবে কি না, সন্দিগ্ধ ছিল। মালিকের মন ভালো দেখে একদিন আব্বাসউদ্দীন গ্রামোফোন কোম্পানির মালিককে বলে-কয়ে রাজি করালেন। নজরুল লিখে ফেললেন, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ’। সেই গান যখন বেরোল, ছড়িয়ে পড়ল মুখে মুখে। আজও বাংলাদেশের চানরাতে এই গান যখন বেজে ওঠে, তখনই সব হৃদয়ে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়।

ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর পল্টনের বাসায় আব্বার সঙ্গে ফেরদৌসী রহমান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নজর ল ইসল ম বছর বয়স রহম ন র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয়েছে। সেই খসড়ায় বলা হয়েছে, দুই বছরের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা যেটা পেয়েছি, এটা জুলাই জাতীয় সনদ নামে একটা খসড়া পেয়েছি। সেটা ভূমিকা, বিস্তারিত বিষয়গুলো নেই। এই খসড়ার সঙ্গে আমরা মোটামুটি একমত। কিন্তু খসড়ার কিছু বাক্য, শব্দ ও গঠনপ্রণালি নিয়ে কারও কোনো মতামত আছে কি না, তা জানতে রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়াটি দিয়েছে কমিশন। আমাদের যে সংশোধনী থাকবে, আমরা তা কাল জমা দেব।’

খসড়ায় যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে বিএনপি একমত বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘খসড়ায় দুই বছরের ভেতরে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা একমত।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ আইনের মাধ্যমে করতে চাই। এতে আইনি ত্রুটি থাকলে সংশোধন সহজ হবে।’ তিনি বলেন, ‘কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজন। তবে সেই নির্বাহী বিভাগকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে রাখতে হবে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংবিধানে যত বেশি যুক্ত করা হবে, সংশোধন তত বেশি জটিল হয়ে পড়বে। তাই আমরা চাই, আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা হোক এবং সেই আইনে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন আনা সহজ হবে।’

নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে প্রস্তাব করেছি, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫টি আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। পরবর্তী নির্বাচনে তা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০টি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, নারীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হোক। কিন্তু সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে চাই।’

সংস্কার কমিশনের ৭০০–এর বেশি সুপারিশ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এর মধ্যে প্রায় ৬৫০টির মতো প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে পরামর্শ বা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সব প্রস্তাব সনদে আসবে না। তবে যেগুলো মৌলিক, যেমন সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত, সেগুলো অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদে আমাদের যে সম্মতি সেটি আইনের ঊর্ধ্বে: সালাহউদ্দিন
  • ওসমানী বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রিজের চাকা ফেটে তরুণের মৃত্যু
  • সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর চালুর প্রস্তাব কমিশনের, আলোচনায় উত্তেজনা
  • টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
  • মানিব্যাগ তুলতে সেপটিক ট্যাংকে নেমে বড় ভাইয়ের মৃত্যু, ছোট ভাই হাসপাতালে
  • সিলেটে সহপাঠীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ
  • ৪ কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২১টি স্থাপনার নাম বদল
  • ২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
  • জুলাই সনদের খসড়ায় ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের চিত্র নেই: ইসলামী আন্দোলন
  • কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে এল অজ্ঞাতনামার লাশ, এখনো নিখোঁজ অরিত্র