কয়রার যে গ্রামে ৫৫০ বছরেরও আগে বসতি গড়েন খানজাহান আলীর শিষ্য
Published: 7th, June 2025 GMT
খুলনা জেলা শহর থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রার সবুজ-শ্যামল ছবির মতো গ্রাম ‘আমাদী’। গ্রামটির মেঠো পথ, সারি সারি গাছপালা, ফসলের খেত, শানবাঁধানো পুকুরঘাট দেখলে মনে হয়, এ যেন শিল্পীর রংতুলি দিয়ে আঁকা কোনো ছবি। ৫৫০ বছরেরও আগে খানজাহান আলীর (রহ.) বিশ্বস্ত সহচর বোরহান খাঁ ওরফে বুড়া খাঁ ও তাঁর ছেলে ফতে খাঁ এই গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁরা জঙ্গল কেটে আবাদ শুরু করার পর সেখানে নতুন জনগোষ্ঠীর মানুষের আগমন হওয়ায় গ্রামের নাম ‘আমাদী’ হয়েছে বলে ইতিহাসবিদেরা তাঁদের বইয়ে উল্লেখ করেছেন।
লিখিত ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৪১৮ থেকে ১৪৩৩ সালে বাংলার সুলতান ছিলেন জালাল উদ্দীন মুহাম্মদ শাহ। ওই সময় হজরত খানজাহান আলী (রহ.
আমাদী গ্রামে বুড়া খাঁর বসতি স্থাপনের ধারণা পাওয়া যায় সতীশ চন্দ্র মিত্রের ‘যশোহর খুলনার ইতিহাস’ বইয়ে। তিনি লিখেছেন, বুড়া খাঁ খানজাহান আলীর প্রধান সহচর ছিলেন। আমাদী গ্রামের পশ্চিম দিকে নদীর কূলে বুড়া খাঁ ও ফতে খাঁ উভয়ের কবর ছিল। কবরের অনতিদূরে বসতবাড়ির ভগ্নাংশের নানা চিহ্ন আছে।
সাড়ে পাঁচ শ বছরেরও আগে বোরহান খাঁ যখন আমাদী এলাকায় এসেছিলেন, তখন ছিল সুলতানি যুগ। এর পরের সময়টা ছিল মোগল যুগ। সুলতানি আমলের সেই ইটগুলো এখনো আমাদী গ্রামে আছে।ইদ্রিস আলী, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়‘কয়রা উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ বইয়ে কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আ ব ম আবদুল মালেক লিখেছেন, ‘পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বোরহান খাঁ ওরফে বুড়া খাঁ ও তাঁর ছেলে ফতে খাঁ আমাদী এলাকায় আসেন। তাঁরা সেখানে মসজিদকুঁড় মসজিদটি নির্মাণ করেন। বর্তমানে আমাদী ভূমি অফিসের দক্ষিণ পাশে তাদের বসতভিটার নিদর্শন আছে। এর পাশে কালের সাক্ষী হয়ে আছে তাঁদের খনন করা চাল ধোয়ার দীঘি, ডাল ধোয়ার দীঘি, হাতি বান্ধার দীঘিসহ নানা কিছু। আমাদী বাজারের পূর্ব পাশে আছে আমাদীর দীঘি।’
কয়রা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে আমাদী গ্রামের অবস্থান। বোরহান খাঁ ওরফে বুড়া খাঁর বসতভিটার স্থানে গিয়ে দেখা যায়, বসতভিটা বলতে সেখানে কোনো ঘরবাড়ি নেই, আছে শুধু একটি উঁচু ঢিবি। তার ওপরে বড় বটগাছের ভেতর থেকে একটি খেজুরগাছ বেরিয়ে বটগাছের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডালপালাসহ ওপরের দিকে উঠেছে। খেজুরগাছের গোড়ার অংশ বটগাছের কাণ্ডের মধ্যে ঢাকা পড়েছে। ঢিবির আশপাশে প্রাচীন বসতির ইট–পাথরের খণ্ডগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
উঁচু ঢিবির ছবি তুলতে দেখে ফিরোজা বেগম নামের এক নারী এগিয়ে এসে বলেন, ‘পীরের বাড়ির ছবি তুলছেন নাকি?’ এরপর বলতে থাকলেন, পাশেই তাঁর বাড়ি। এখানে আগে বড় বড় গাছ ছিল। স্তূপ করা ছিল পুরোনো আমলের ছোট ছোট ইট। ১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে গাছগুলো সব ভেঙে পড়ে। পীর বুড়ো খাঁর ইবাদতখানা দরগা আর মাজার ছিল মূল সড়কের পাশে। কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে সেসব হারিয়ে গেছে।
বোরহান খাঁ ওরফে বুড়া খাঁর বসত ভিটার সবচেয়ে কাছের বাড়ির বাসিন্দা শেখ তৌহিদুল ইসলাম এগিয়ে এসে জানান, তাদের পূর্বপুরুষেরা বোরহান খাঁর খাদেম ছিলেন। তাঁর সম্পদও দেখাশোনা করতেন। পরে বংশপরম্পরায় বসতভিটার জমি ও দিঘিগুলোর মালিক হন শেখ বংশের লোকেরা।
কয়রার আমাদী গ্রামে খানজাহান আলীর (রহ.) শিষ্য বোরহান খাঁর বসতভিটার পাশে চাল ধোয়া দীঘিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বসতভ ট র ব রহ ন খ র বসত কয়র র
এছাড়াও পড়ুন:
কয়রার যে গ্রামে ৫৫০ বছরেরও আগে বসতি গড়েন খানজাহান আলীর শিষ্য
খুলনা জেলা শহর থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রার সবুজ-শ্যামল ছবির মতো গ্রাম ‘আমাদী’। গ্রামটির মেঠো পথ, সারি সারি গাছপালা, ফসলের খেত, শানবাঁধানো পুকুরঘাট দেখলে মনে হয়, এ যেন শিল্পীর রংতুলি দিয়ে আঁকা কোনো ছবি। ৫৫০ বছরেরও আগে খানজাহান আলীর (রহ.) বিশ্বস্ত সহচর বোরহান খাঁ ওরফে বুড়া খাঁ ও তাঁর ছেলে ফতে খাঁ এই গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁরা জঙ্গল কেটে আবাদ শুরু করার পর সেখানে নতুন জনগোষ্ঠীর মানুষের আগমন হওয়ায় গ্রামের নাম ‘আমাদী’ হয়েছে বলে ইতিহাসবিদেরা তাঁদের বইয়ে উল্লেখ করেছেন।
লিখিত ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৪১৮ থেকে ১৪৩৩ সালে বাংলার সুলতান ছিলেন জালাল উদ্দীন মুহাম্মদ শাহ। ওই সময় হজরত খানজাহান আলী (রহ.) দক্ষিণবঙ্গে আসেন। তিনি যশোরের মুড়লী পর্যন্ত পৌঁছে কাফেলাকে দুই ভাগে ভাগ করেন। একদল সঙ্গী নিয়ে তিনি নিজে বাগেরহাটের দিকে রওনা দেন। আরেক দল খানজাহান আলীর বিশ্বস্ত সহচর বোরহান খাঁ ওরফে বুড়া খাঁর নেতৃত্বে দক্ষিণ দিকে সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রার আমাদী এলাকায় এসে বসতি গড়েন।
আমাদী গ্রামে বুড়া খাঁর বসতি স্থাপনের ধারণা পাওয়া যায় সতীশ চন্দ্র মিত্রের ‘যশোহর খুলনার ইতিহাস’ বইয়ে। তিনি লিখেছেন, বুড়া খাঁ খানজাহান আলীর প্রধান সহচর ছিলেন। আমাদী গ্রামের পশ্চিম দিকে নদীর কূলে বুড়া খাঁ ও ফতে খাঁ উভয়ের কবর ছিল। কবরের অনতিদূরে বসতবাড়ির ভগ্নাংশের নানা চিহ্ন আছে।
সাড়ে পাঁচ শ বছরেরও আগে বোরহান খাঁ যখন আমাদী এলাকায় এসেছিলেন, তখন ছিল সুলতানি যুগ। এর পরের সময়টা ছিল মোগল যুগ। সুলতানি আমলের সেই ইটগুলো এখনো আমাদী গ্রামে আছে।ইদ্রিস আলী, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়‘কয়রা উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ বইয়ে কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আ ব ম আবদুল মালেক লিখেছেন, ‘পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বোরহান খাঁ ওরফে বুড়া খাঁ ও তাঁর ছেলে ফতে খাঁ আমাদী এলাকায় আসেন। তাঁরা সেখানে মসজিদকুঁড় মসজিদটি নির্মাণ করেন। বর্তমানে আমাদী ভূমি অফিসের দক্ষিণ পাশে তাদের বসতভিটার নিদর্শন আছে। এর পাশে কালের সাক্ষী হয়ে আছে তাঁদের খনন করা চাল ধোয়ার দীঘি, ডাল ধোয়ার দীঘি, হাতি বান্ধার দীঘিসহ নানা কিছু। আমাদী বাজারের পূর্ব পাশে আছে আমাদীর দীঘি।’
কয়রা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে আমাদী গ্রামের অবস্থান। বোরহান খাঁ ওরফে বুড়া খাঁর বসতভিটার স্থানে গিয়ে দেখা যায়, বসতভিটা বলতে সেখানে কোনো ঘরবাড়ি নেই, আছে শুধু একটি উঁচু ঢিবি। তার ওপরে বড় বটগাছের ভেতর থেকে একটি খেজুরগাছ বেরিয়ে বটগাছের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডালপালাসহ ওপরের দিকে উঠেছে। খেজুরগাছের গোড়ার অংশ বটগাছের কাণ্ডের মধ্যে ঢাকা পড়েছে। ঢিবির আশপাশে প্রাচীন বসতির ইট–পাথরের খণ্ডগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
উঁচু ঢিবির ছবি তুলতে দেখে ফিরোজা বেগম নামের এক নারী এগিয়ে এসে বলেন, ‘পীরের বাড়ির ছবি তুলছেন নাকি?’ এরপর বলতে থাকলেন, পাশেই তাঁর বাড়ি। এখানে আগে বড় বড় গাছ ছিল। স্তূপ করা ছিল পুরোনো আমলের ছোট ছোট ইট। ১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে গাছগুলো সব ভেঙে পড়ে। পীর বুড়ো খাঁর ইবাদতখানা দরগা আর মাজার ছিল মূল সড়কের পাশে। কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে সেসব হারিয়ে গেছে।
বোরহান খাঁ ওরফে বুড়া খাঁর বসত ভিটার সবচেয়ে কাছের বাড়ির বাসিন্দা শেখ তৌহিদুল ইসলাম এগিয়ে এসে জানান, তাদের পূর্বপুরুষেরা বোরহান খাঁর খাদেম ছিলেন। তাঁর সম্পদও দেখাশোনা করতেন। পরে বংশপরম্পরায় বসতভিটার জমি ও দিঘিগুলোর মালিক হন শেখ বংশের লোকেরা।
কয়রার আমাদী গ্রামে খানজাহান আলীর (রহ.) শিষ্য বোরহান খাঁর বসতভিটার পাশে চাল ধোয়া দীঘি