ফেরি থেকে নদীতে অটোরিকশা, নিখোঁজ ২ নারীর মরদেহ উদ্ধার
Published: 7th, June 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ফেরি থেকে নদীতে অটোরিকশা পড়ে নিখোঁজ ২ নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (৭ জুন) সন্ধ্যা ৭টার পরে নদীর তলদেশ থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা।
আড়াইহাজার ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ রবিউল হাসান বলেন, ‘‘ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালিয়ে আসছিল। শনিবার সন্ধ্যার পরে ঢাকার ডুবুরি দলের সহায়তায় অটোরিকশাসহ নিখোঁজ দুই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা অটোরিকশার ভেতরে আটকে ছিলেন।’’
নিহতরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার রসুলবাগ এলাকার খালেদা বেগম (৪০) ও ফারজানা আক্তার (১৯)। এর আগে, ভোররাত ৪টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সে সময় স্থানীয়রা অটোরিকশায় থাকা দুই পুরুষ যাত্রীকে উদ্ধার করেন।
আরো পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
জামালপুরে নারীর মাথাবিহীন-কব্জি কাটা লাশ উদ্ধার
উদ্ধার হওয়া দুজন হলেন- খালেদা বেগমের ছেলে কামাল হোসেন ও ফারজানা বেগমের স্বামী সাগর হোসেন। বর্তমানে তারা আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে যাচ্ছিলেন তারা। তাদের বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি বিশনন্দী ঘাট থেকে ফেরিতে উঠে। ফেরি ছাড়ার দুই মিনিট পরেই অটোরিকশাটি নদীতে পড়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফেরির পাশে কোনো রেলিং বা সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। ফেরি সামান্য কাত হয়ে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ঈদের দিন সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
তিনি বলেন, ‘‘ফেরিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
আরো পড়ুন: ফেরি থেকে নদীতে পড়ল অটোরিকশা, নিখোঁজ ২
ঢাকা/অনিক/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।