সাভারে রাত আটটা পর্যন্ত ট্যানারিতে এল ৮৫ হাজার কোরবানির পশুর চামড়া
Published: 7th, June 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া আসতে শুরু করেছে ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় অবস্থিত বিসিক চামড়াশিল্প নগরের ট্যানারিগুলোতে। আজ রাত আটটা পর্যন্ত ৩৫৪টি ট্রাকে এ শিল্পনগরীতে মোট ৮৪ হাজার ৮৫৭টি কাঁচা চামড়া এসেছে।
এ তথ্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন বিসিক চামড়াশিল্প নগরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
আজ দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন ট্যানারিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ট্রাক ও পিকআপে করে আসা কাঁচা চামড়া নামিয়ে গণনা করে ভেতরে নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। পরে চামড়া থেকে লেজ ও মাথার অংশ কেটে আলাদা করা হয়। এরপর প্রতিটি চামড়ায় লবণ দিয়ে তা স্তূপ করে রাখা হচ্ছে।
আজমীর লেদারে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন আনোয়ার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানির ঈদে অনেক ব্যস্ততা থাকে। চামড়ায় লবণ লাগানোর কাজে প্রতিটি চামড়ার জন্য ৪০-৫০ টাকা দেওয়া হয়।
ট্যানারিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি কোরবানির পশুর মাথার চামড়া সংগ্রহ করেন দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘মাথার চামড়া প্রতিটি তিন টাকা হিসেবে কিনি। ঈদের মধ্যে দিন-রাত কাজ করতে হয়। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারছি না, খারাপ লাগে। তবে সবাই মিলে কাজ করার আনন্দও আছে।’
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘এবার আমাদের প্রায় এক কোটি চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আছে। হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগরীতে আজ শনিবার ও কাল রোববার দুই দিনে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হবে।’
মো. সাখাওয়াত উল্লাহ আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমের কারণে চামড়ায় দেরিতে লবণ দেওয়া হলে চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। যাঁরা চামড়া সংগ্রহ করছেন তাঁদের কোরবানির পর দ্রুত সময়ের মধ্যে চামড়া বিক্রিসহ লবণজাত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় চামড়া নষ্ট হয়ে এর গুণগত মান হারাবে, এতে চামড়ার দাম কম পাবেন। এ ছাড়া চামড়া নষ্ট হয়ে বিক্রির অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে।’
এদিকে বিকেল পাঁচটার দিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান চামড়াশিল্প নগরের বিভিন্ন ট্যানারির কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের একপর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি নানা বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কাঁচা চামড়া ও ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির বিষয়টি একটা সময় উন্মুক্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে এটি বন্ধ করা হয়েছিল দেশের স্বার্থেই। এখন আবার দেশের স্বার্থেই যদি দাম পাওয়া না যায়, তাহলে সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে নিয়ে ওই চামড়া আমরা যদি দেশের বাইরে রপ্তানি করতে পারি তাহলে তার সঠিক দাম পাওয়া যাবে। এ জন্য কাঁচা চামড়া রপ্তানির বিষয়টি বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে।’
প্রয়োজন হলেই কেবল এটি করা হবে জানিয়ে সচিব মো. ওবায়দুর রহমান আরও বলেন, ‘পরিবেশদূষণ রোধে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি দূষণ হবে না।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স গ রহ ক জ কর করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি
বরেন্দ্র অঞ্চলে বছরে বৃষ্টি হয় প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৫০০ মিলিমিটার পর্যন্ত। বৃষ্টি কম হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানিও ক্রমাগত নিচে নামছে। ফলে দিনকে দিন অঞ্চলটি খরাপ্রবণ হয়ে উঠছে। তবে, গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতের স্মরণকালের ভারী বর্ষণে বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাটির বাড়ি ধসে পড়ার পাশাপাশি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে রাজশাহীর কাঁকনহাট পৌরসভার দরগাপাড়া গ্রামে কৃষক জহিরুল ইসলাম নিজের জমির পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “মাঠের ৮০ ভাগ ধান শুয়ে পড়েছে। এই ধান তুইলতে লোকও পাওয়া যাবে না। সবাইকে একসঙ্গে ধান তুইলতে হবে। আমরা এবারের খুব ক্ষতির শিকার।”
আরো পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারী বর্ষণে ৪০০ পুকুর ভেসে গেছে
পদ্মা-মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে পাঙ্গাস
সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষকের কথার সত্যতা পাওয়া গেছে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের ফসলি মাঠ উঁচুনিচু সিঁড়ির মতো। দুই পাশ উঁচু হলেও মাঝের অংশ তুলনামূলক নিচু থাকে, যা স্থানীয়রা ‘কান্দর’ বলেন। এবার এই কান্দরগুলো তলিয়ে গিয়ে বিলের মতো হয়েছে। এসব জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। কখনো কখনো বিলের ধান পানিতে ডুবলেও কান্দর কখনো ডুবে না। শুক্রবার রাতের বৃষ্টিতে সবই তলিয়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, “গ্রামের দিকে খুব বৃষ্টি হয়েছে। তবে, শহরে আমরা মাত্র ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছি।”
এদিকে, বিলের পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় মানুষ দলবেঁধে মাছ ধরতে নেমেছেন। শনিবার (১ নভেম্বর) থেকেই মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। পবা উপজেলার শুলিতলা ভিমারডাইং এলাকায় জোয়াখালি নদীতে অর্ধশতাধিক মানুষ মাছ ধরছিলেন।
ক্ষেত থেকে শুয়ে পড়া ধান কাটছেন এক কৃষক
আলোকছত্র গ্রামের কৃষক মো. মনিরুজ্জামান (৬৫) বলেন, “জাল ফেললেই বড় বড় মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আমি আমার জীবনে এবার দ্বিতীয়বার উত্তরা পেলি দেখছি। সাধারণত নদীর স্রোত উত্তর দিকে যায়, কিন্তু এবার উত্তরেই এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে যে পানি দক্ষিণে যাচ্ছে।”
বিলের মধ্যে খনন করা পুকুরগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছচাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গোদাগাড়ীর কালোসাঁকো বিলে চারটি পুকুরে মাছচাষ করতেন মারিফুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রায় ৪ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রিশিকুল ইউনিয়নের খড়িয়াকান্দি এলাকায় দুটি স্থানে পাকা রাস্তা প্লাবিত হয়ে একপাশ থেকে অন্যপাশে পানি যাচ্ছে। স্থানীয়রা সেখানে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। রাস্তার দুই পাশে শত শত বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। খড়িয়াকান্দি খালের পাশে ১০–১২টি বাড়ির মাটির দেয়াল ভেঙে পড়েছে।
মান্ডইল নলপুকুর গ্রামের বিশ্বনাথ সরেন জানান, তার বাড়ির দুটি ঘর ধসে পড়েছে।
জালে বড় মাছ উঠায় খুশি স্থানীয় এক বাসিন্দা
রিশিকুল এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এলাকায় এমন বন্যা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। তারপর এত বৃষ্টি ও বন্যা হয়নি। এবার প্রথম।”
এলাকাবাসী জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রান্নাবান্না সম্ভব হচ্ছে না। স্বেচ্ছাসেবীরা খিচুড়ি রান্না করে বাড়ি বাড়ি বিতরণ করছেন। গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট, আলোকছত্র হয়ে তানোরের সরনজাই ও কালীগঞ্জ এলাকায় মাঠের পর মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে।
কালীগঞ্জের কৃষক সাবিয়ার রহমান বলেন, “আমার ১২ বিঘা জমির ধান শেষ। আধাপাকা ধান ঘরে তুলতেও লোক পাওয়া যাবে না।”
এবার মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় আলু ও শীতকালীন সবজি চাষে বিলম্ব হবে। পার্শ্ববর্তী মোহনপুর ও বাগমারায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি ঢুকে যাওয়ায় পানবরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুই পাশের জমি প্লাবিত করে বৃষ্টির পানি সড়কে উঠেছে
শনিবার বাগমারার বাসুপাড়ায় নুর মোহম্মাদ নামের এক পানচাষির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, বরজে পানি ঢুকে যাওয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গিয়ে থাকতে পারেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন দাবি করেছেন, “ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি।” তিনি বলেন, “৫০০ হেক্টর ধানের ক্ষতির প্রতিবেদন আমরা দিচ্ছি। ধান শুয়ে পড়লেই কিন্তু ক্ষতি হবে না। মাঠে যাচ্ছি, দেখছি।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কিছু উপজেলা থেকে পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পেয়েছি। মাছ বেরিয়ে গেছে। এটি অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ