কলম্বিয়ার সিনেটর মিগুয়েল উরিবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটির রাজধানী বোগোতায় স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার তিনি নির্বাচনী প্রচারে নেমে হামলার শিকার হন। আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী তিনি।

মিগুয়েল উরিবের বয়স ৩৯ বছর। তাঁর স্ত্রী মারিয়া ক্লদিয়া তারাজোনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেন, ২০২৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার সভায় যোগ দিয়ে আহত হয়ে তাঁর স্বামী এখন জীবন নিয়ে লড়ছেন।

কলম্বিয়ার রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক সেন্টার পার্টি এক বিবৃতিতে এ ঘটনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য সহিংস ঘটনা’ বলে সমালোচনা করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিনেটর মিগুয়েল উরিবে বোগোতার একটি পার্কে নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন। তখন তাঁকে পেছন থেকে গুলি করা হয়।

বিবৃতিতে মিগুয়েল উরিবের শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি তাঁর দল। শুধু বলা হয়েছে, হামলা ‘গুরুতর’ ছিল। বিবিসির প্রতিবেদনের তথ্য, মিগুয়েল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে কলম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর। বলা হয়েছে, সিনেটর মিগুয়েলের শরীরে দুটি গুলি লেগেছে। এ সময় আরও দুজন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ১৫ বছরের এক কিশোরকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করেছে পুলিশ।

দেশটির সরকার বলছে, এই হামলার বিষয়ে তথ্য জানালে ৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে।

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো এক এক্স পোস্টে আহত সিনেটর মিগুয়েল উরিবের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন। গতকাল রাতে এক ভাষণে তিনি বলেন, এ হামলার পেছনে নির্দেশদাতা যে–ই হোন না কেন, তদন্ত করে তাঁকে খুঁজে বের করা হবে।

সিনেটর মিগুয়েলের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া, চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কলম ব য় র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ