কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায় নির্বাচনী প্রচারণার সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ও বর্তমান সেনেটর মিগেল উরিবে। 

শনিবার (৭ জুন) ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। জানা গেছে, ৩৯ বছর বয়সী এই রাজনীতিককে মাথায় দু’বার ও শরীরের অন্য একটি অংশে গুলি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।

ডেমোক্র্যাটিক সেন্টার পার্টি এক বিবৃতিতে এ হামলার নিন্দা করেছে। বিবৃতিতে দলটি বলেছে, সেনেটর উরিবে বোগোতার ফন্তিবন এলাকার সরকারি এক পার্কে একটি প্রচারণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন, সেখানে ‘সশস্ত্র গোষ্ঠী’ পেছন থেকে তার ওপর গুলি চালায়।

কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেদ্রো সানচেস জানিয়েছেন, গুলিবর্ষণের ঘটনায় এক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এ ঘটনার সঙ্গে আরো কেউ জড়িত আছেন কি না কর্তৃপক্ষ তা তদন্ত করে দেখছে।

এ ঘটনায় বিষয়ে তথ্য দিতে পারলে তথ্যদাতাকে প্রায় সাত লাখ ৩০ হাজার ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কলম্বিয়ার সরকার।

সিনেটর মিগুয়েল উরিবের স্ত্রী মারিয়া ক্লাউডিয়া তারাজোনা দেশবাসীর কাছে তার স্বামীর জন্য প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “মিগুয়েল এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। যারা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন, সেসব চিকিৎসকের হাত যেন ঈশ্বর পরিচালনা করেন—এই প্রার্থনাই করি।”

মিগেল উরিবে কলম্বিয়ার একটি প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান। তার মা ডায়না তুর্বাই ছিলেন প্রথিতযশা সাংবাদিক, যিনি মাদক ব্যবসা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে নির্ভীক রিপোর্টিংয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন। ১৯৯০ সালে কুখ্যাত মাদক সম্রাট পাবলো এসকোবারের নেতৃত্বাধীন মেডেলিন কার্টেল তাকে অপহরণ করে। এক বছর পর, ১৯৯১ সালে, উদ্ধার অভিযানের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

কলম্বিয়া কয়েক দশক ধরে বামপন্থি বিদ্রোহী, ডানপন্থি আধাসামরিক বাহিনী থেকে আসা অপরাধী গোষ্ঠী এবং সরকারি বাহিনীগুলোর মধ্যে চলা সংঘাতের কারণে অস্থির হয়ে আছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কলম ব য় র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ