কু‌ষ্টিয়া সদর উপজেলার পা‌টিকাবাড়ি ইউনিয়‌নের নিজ ঘর থেকে আব্দুর রহমান উজ্জল (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ীর মাথায় গু‌লিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহের পাশ‌ থে‌কে এক‌টি পিস্তল ও চিরকুট পাওয়া গেছে। পুলিশের ধারণা, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

র‌বিবার (৮ জুন) সকালে পা‌টিকাবাড়ি ইউনিয়‌নের তাহাজ‌ মোড় এলাকার একটি টিনের ঘর থেকে মরদেহটি উদ্ধার হয় বলে জানান পা‌টিকাবা‌ড়ি ক্যাম্প পু‌লি‌শের সহকারী উপ-প‌রিদর্শক শামসুল হক। 

নিহত আব্দুর রহমান একই ইউনিয়‌নের পাটিকাবা‌ড়ি বাজার এলাকার মৃত ওসমা‌নের ছেলে। তিনি একটি বিস্কুট কোম্পানির প‌রি‌বেশক ছিলেন। এছাড়াও তার স্থানীয় বাজা‌রে ফ‌টোক‌পির দোকান ছিল।

আরো পড়ুন:

ফেরি থেকে নদীতে অটোরিকশা, নিখোঁজ ২ নারীর মরদেহ উদ্ধার

জামালপুরে নারীর মাথাবিহীন-কব্জি কাটা লাশ উদ্ধার

পু‌লিশ ও স্থানীয় সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে, তাহাজ‌ মো‌ড় এলাকার নিজ জ‌মির ওপর এক‌টি টি‌নের ঘ‌রে একাই থাক‌তেন উজ্জল। রবিবার সকা‌লে ঘুম থে‌কে উঠ‌তে দে‌রি কর‌লে প‌রিবা‌রের লোকজন তা‌কে ডাক‌তে যায়। পরে জানালা দি‌য়ে উঁকি দিয়ে ‌বিছানার উপর তার লাশ দে‌খতে পান পরিবারের লোকজন। প‌রে স্থানীয়রা ঘ‌রের দরজা ভে‌ঙে ভেত‌রে ঢু‌কে পু‌লিশ‌কে খবর দেয়। 

এলাকাবাসী জানান, পা‌রিবা‌রিক কল‌হের জে‌রে পৈ‌ত্রিক বা‌ড়ি থে‌কে একটু দূরে‌ নিজ জ‌মি‌তেই টি‌নের ছাপড়া ঘ‌রে থাক‌তেন উজ্জল। প্রায় তিনমাস আগে ব‌নিবনা না হওয়ায় তার স্ত্রী একমাত্র সন্তান‌কে নি‌য়ে বাবার বা‌ড়ি চ‌লে যান। এরপর থে‌কে ওই বা‌ড়ি‌তে উজ্জল একাই থাক‌তেন। কিছু‌দিন ধ‌রে মানসিকভা‌বেও ভে‌ঙে প‌ড়ে‌ছি‌লেন।

পা‌টিকাবা‌ড়ি ক্যাম্প পু‌লি‌শের সহকারী উপ-প‌রিদর্শক শামসুল হক ব‌লেন, ‍“মাথায় গু‌লি‌বিদ্ধ অবস্থায় মরদেহটি বিছানার ওপর ছিল। স্থানীয়রা দরজা ভে‌ঙে পু‌লি‌শ‌কে খবর দেয়। মরদেহের পাশ থে‌কে একটি পিস্তল ও চিরকুট উদ্ধার করা হ‌য়ে‌ছে। চিরকুট ও বি‌ভিন্ন বিষয় পর্যা‌লোচনা ক‌রে প্রাথ‌মিক ধারণা, তিনি আত্মহত্যা ক‌রে‌ছেন। তার মরদেহ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।” 

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মরদ হ চ রক ট মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ