গাজায় হাসপাতালের নিচে সুড়ঙ্গে হামাসের সামরিক প্রধান সিনওয়ারের মরদেহ শনাক্তের দাবি ইসরায়েলের
Published: 9th, June 2025 GMT
গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে একটি হাসপাতালের নিচে থাকা গোপন সুড়ঙ্গ থেকে হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ারের মরদেহ উদ্ধার করার দাবি করেছে ইসরায়েল। গতকাল রোববার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, গত মাসে এক অভিযান পরিচালনার পর মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন দাবি করেন, হামাসের আরেক শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং রাফাহ ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ শাবানাকেও একই স্থানে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন সশস্ত্র যোদ্ধার মরদেহও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাঁদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
খান ইউনিসে ইউরোপিয়ান হাসপাতালের নিচে পাওয়া সুড়ঙ্গটি দেখাতে ইসরায়েলি সেনারা কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিককে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ডেফরিনের দাবি, সুড়ঙ্গটিকে হামাসের একটি বড় পরিচালনা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
ডেফরিন দাবি করেন, ‘এটি হামাসের পক্ষ থেকে বারবার সাধারণ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করার, বেসামরিক স্থাপনা, হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গাকে এই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার আরেকটি নজির।’
ইসরায়েলি সেনাকর্মকর্তা আরও দাবি করেন, ‘আমরা হাসপাতালের নিচে, জরুরি বিভাগের ঠিক নিচে কয়েকটি কক্ষের একটি আস্তানা পেয়েছিলাম। এর একটি কক্ষে আমরা মোহাম্মদ সিনওয়ারকে খুঁজে পেয়ে হত্যা করি।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত মাসেই মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে গতকাল ডেফরিন দাবি করেছেন, এখন তাঁদের কাছে সিনওয়ারের ডিএনএ পরীক্ষার ফল রয়েছে। আর তাতে প্রমাণিত হয়, নিঃসন্দেহে ওই মৃতদেহ সিনওয়ারেরই।
হামাস এখনো মোহাম্মদ সিনওয়ার বা মোহাম্মদ শাবানার মৃত্যুর খবরের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
মোহাম্মদ সিনওয়ার ছিলেন হামাসের নিহত নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছোট ভাই। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের চালানো হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ ওই হামলায় নিহত হন। ওই হামলার পরই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
মোহাম্মদ শাবানা ছিলেন গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের অন্যতম জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ সামরিক কমান্ডার। তিনি দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের নিচে সুড়ঙ্গপথের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এই সুড়ঙ্গগুলোকে সীমান্তের ওপারে হামলা চালানো এবং অভিযান পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হতো বলে ইসরায়েল দাবি করছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ইসর য় ল র মরদ হ ড ফর ন ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।