গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে একটি হাসপাতালের নিচে থাকা গোপন সুড়ঙ্গ থেকে হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ারের মরদেহ উদ্ধার করার দাবি করেছে ইসরায়েল। গতকাল রোববার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, গত মাসে এক অভিযান পরিচালনার পর মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন দাবি করেন, হামাসের আরেক শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং রাফাহ ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ শাবানাকেও একই স্থানে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন সশস্ত্র যোদ্ধার মরদেহও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাঁদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

খান ইউনিসে ইউরোপিয়ান হাসপাতালের নিচে পাওয়া সুড়ঙ্গটি দেখাতে ইসরায়েলি সেনারা কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিককে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ডেফরিনের দাবি, সুড়ঙ্গটিকে হামাসের একটি বড় পরিচালনা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

ডেফরিন দাবি করেন, ‘এটি হামাসের পক্ষ থেকে বারবার সাধারণ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করার, বেসামরিক স্থাপনা, হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গাকে এই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার আরেকটি নজির।’

ইসরায়েলি সেনাকর্মকর্তা আরও দাবি করেন, ‘আমরা হাসপাতালের নিচে, জরুরি বিভাগের ঠিক নিচে কয়েকটি কক্ষের একটি আস্তানা পেয়েছিলাম। এর একটি কক্ষে আমরা মোহাম্মদ সিনওয়ারকে খুঁজে পেয়ে হত্যা করি।’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত মাসেই মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে গতকাল ডেফরিন দাবি করেছেন, এখন তাঁদের কাছে সিনওয়ারের ডিএনএ পরীক্ষার ফল রয়েছে। আর তাতে প্রমাণিত হয়, নিঃসন্দেহে ওই মৃতদেহ সিনওয়ারেরই।

হামাস এখনো মোহাম্মদ সিনওয়ার বা মোহাম্মদ শাবানার মৃত্যুর খবরের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

মোহাম্মদ সিনওয়ার ছিলেন হামাসের নিহত নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছোট ভাই। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের চালানো হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ ওই হামলায় নিহত হন। ওই হামলার পরই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

মোহাম্মদ শাবানা ছিলেন গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের অন্যতম জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ সামরিক কমান্ডার। তিনি দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের নিচে সুড়ঙ্গপথের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এই সুড়ঙ্গগুলোকে সীমান্তের ওপারে হামলা চালানো এবং অভিযান পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হতো বলে ইসরায়েল দাবি করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ইসর য় ল র মরদ হ ড ফর ন ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ