যেকোনো বয়সেই ঘটতে পারে এমন দুর্ঘটনা। তবে শিশু এবং বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা বেশি। দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকেই। আকস্মিক দুর্ঘটনায় কী করতে হবে, সে সম্পর্কেও জেনে রাখা উচিত। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক-কান-গলা ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা.
এ এফ মহিউদ্দিন খান।
প্রিয়জনদের সঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়ার সময় আলাপচারিতা হয়েই থাকে; তবে খাবার মুখে নিয়ে কথা বলা কখনোই উচিত নয়। তাতে গলায় মাংসের হাড় কিংবা মাছের কাঁটার মতো কোনো জিনিস আটকে যেতে পারে। এমনকি শ্বাসনালিতেও চলে যেতে পারে যেকোনো খাবারের ক্ষুদ্র অংশ। ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। তাই কথা বলতে হলে ওই মুহূর্তে মুখে কোনো খাবার রাখবেন না। খাবার খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া করলেও এমন কিছু ঘটে যেতে পারে। তাই ধীরেসুস্থে মনোযোগ দিয়ে খাবেন। একবারে অনেকটা খাবার মুখে ঢোকাবেন না। বিশেষভাবে সতর্ক থাকুন হাড় চিবানোর সময়। আনন্দ, আড্ডা, হাসির জন্য তো বাকিটা সময় আছেই। শিশু এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের খাবার দেওয়ার সময় ভালোভাবে দেখে দিন, তাতে কোনো ছোটখাট হাড় রয়েছে কি না। তেহারির মতো খাবার নিজের হাতের আঙুল দিয়ে পরখ করে দেখুন। ছোট হাড় থাকলে অবশ্যই তা সরিয়ে দিন।
তবু যদি হাড় আটকে যায়গলনালিতে হাড় আটকে গেলে ব্যথা হবে কিংবা খোঁচা লাগার মতো একটা অনুভূতি হবে। ঢোক গেলার সময় এই কষ্ট বাড়বে। খেতে অসুবিধা হবে। একটু বড় আকারের হাড় আটকে গেলে বমিও হতে পারে। গলায় হাড় আটকে গেছে মনে হলে দ্রুততম সময়ে একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। তা সম্ভব না হলে নিকটস্থ যেকোনো হাসপাতালে চলে যেতে হবে। অবশ্যই মনে রাখবেন, বাড়িতে নিজেরা নিজেরা গলার হাড় নামানোর কোনো চেষ্টা করা যাবে না। ভাতের দলা, পাকা কলা, পানি—কোনো কিছুই গলায় আটকে থাকা হাড় নামাতে পারে না। নিজেরা চেষ্টা করতে গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়তে পারে। তাই হাসপাতালে নিয়ে হাড়টি বের করতেই হবে। গলনালিতে হাড় রয়ে যাওয়া যেমন কষ্টদায়ক, তেমনি গলনালির কোনো অংশ চিরে হাড়টি আটকে থাকলে সেখানে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিও সৃষ্টি হয়।
খাওয়ার সময় শ্বাস আটকে এলেযেকোনো খাবারের ক্ষুদ্র অংশ শ্বাসনালিতে আটকে গেলে শ্বাস আটকে আসতে পারে। এটি একটি জরুরি পরিস্থিতি। খাওয়ার সময় কারও শ্বাস আটকে এলে তিনি ওই মুহূর্তে ঠিকভাবে কথাও বলতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর কাছে থাকা মানুষটিই তাঁর প্রাণ বাঁচাতে পারেন। এক্ষেত্রে সাহায্যকারীকে চলে যেতে হবে ওই ব্যক্তির পেছনে। সাহায্যকারীকে নিজের দুহাত একসঙ্গে করে ওই ব্যক্তির পেটের ওপরের অংশে জোরে চাপ দিতে হবে। পেটের ওপর এভাবে চাপ পড়ায় খাবারের ওই অংশ বেরিয়ে আসতে পারে মুখ দিয়ে। তাতে কাজ না হলে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে দ্রুত। তবে খাবারের অংশটি বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত কিংবা হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে না পৌঁছা পর্যন্ত এভাবে চাপ দিয়ে যেতে হবে। একেবারে ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে অবশ্য পেটের ওপর চাপ দিতে নেই। বরং তাদেরকে নিজের একটি হাতের ওপর উপুড় করে শুইয়ে পিঠে জোরে ধাক্কা দিতে হয়। তবে রোগীর বয়স যতই হোক, তিনি যদি জ্ঞান হারান, দ্রুততম সময়ে সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) শুরু করতে হবে। তাই সিপিআর দেওয়ার নিয়ম জানা থাকা উচিত প্রতিটি মানুষেরই।
আরও পড়ুনতামিম ইকবালের জীবন রক্ষা করেছে সিপিআর, এটি কেন সবার জেনে রাখা জরুরি, কোথায় শিখবেন ২৬ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ ড় আটক দ র ঘটন র ওপর স আটক
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ