ঢাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৎপরতা বাড়ান
Published: 10th, June 2025 GMT
ঢাকা শহরে যে ৫০টি থানা এলাকা আছে, তার সব কটিতে অপরাধ তথা খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ও হানাহানির মাত্রা এক নয়। কোথাও বেশি, কোথাও কম। ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর প্রতিবেদনে তেজগাঁও অঞ্চলে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদকের কারবার সর্বাধিক বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ১ বছর ৫ মাস পর ২০২৫ সালের জুনে দেখা যাচ্ছে অপরাধে টেক্কা দিয়েছে রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চলের চার থানা—যথাক্রমে আদাবর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ।
এসব এলাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার কারণ নতুন করে বিভিন্ন অপরাধী চক্র গড়ে ওঠা। সরেজমিন অনুসন্ধানে আদাবর, মোহাম্মদপুর ও হাজারীবাগে এমন অন্তত অর্ধশত অপরাধী দল সক্রিয় থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। ৫ আগস্টের পর ১০ মাসে এসব অপরাধী দলের হাতে খুন হয়েছেন অন্তত ১১ জন।
পুলিশ ও র্যাবের দেওয়া তথ্য বলছে, ৫ আগস্টের পর এ চারটি থানা এলাকা থেকে মাদক, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও হত্যায় জড়িত অন্তত দেড় হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এত বেশি ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ার পরও অপরাধ না কমার কারণ কী? প্রথমত, দ্রুততম সময়ে জামিনে ছাড়া পেয়ে তারা আবার অপরাধে জড়াচ্ছে। এরা চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে প্রশ্রয় পাচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে।
গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজারের সাদেক খান কাঁচাবাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি অপরাধী দল ‘অ্যালেক্স ইমন’ ও ‘ডাইল্লা’ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং নাছির বিশ্বাস ও মুন্না নামের দুই তরুণ নিহত হন। অ্যালেক্স ইমন গ্রুপকে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল প্রশ্রয় দেন। জোড়া খুনের মামলায়ও পিচ্চি হেলালকে আসামি করা হয়েছে।
হাজারীবাগের জাফরাবাদে গত ১৫ মে গভীর রাতে একটি পরিবারের সাতজনকে কুপিয়েছে ‘পাটালি গ্রুপ’ নামের একটি অপরাধী গ্রুপের সদস্যরা। ওই ঘরের বাসিন্দারা এখন ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন।
এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ কীভাবে নিরাপদ বোধ করবেন? পুলিশের বাইরে র্যাব, বিজিবি ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আছেন। মাঝেমধ্যে এসব এলাকায় অভিযানও চলে।
অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অপরাধীরা ধরা পড়লেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসেন। তাঁরা জেলখানা থেকে বেরিয়ে এসে কেবল নতুন করে অপরাধ করছেন না, থানায় মামলা দায়েরকারীদের ওপরও প্রতিশোধ নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে একটা ভয়ের পরিবেশ বিরাজ করছে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর থানা–পুলিশ অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিল। এ কারণে সে সময় অপরাধ বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার ১০ মাস পরও একই দোহাই দেওয়া যাবে না। আর অপরাধ কেবল উল্লিখিত চার থানায় ঘটেছে, তা নয়; ঢাকার সব এলাকায়ই কমবেশি অপরাধী চক্র সক্রিয়। এক এলাকার অপরাধীদের অন্য এলাকায় ভাড়া খাটতেও দেখা যাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রতি মাসেই থানায় বৈঠক হয়। কিন্তু সেসব বৈঠকের ফলোআপ যদি না থাকে, থানায় মামলা কম দেখিয়ে যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো দেখানোর চেষ্টা থাকে, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি আশা করা যায় না। আশা করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। এখানে কারও প্রতি রাগ বা অনুরাগ দেখানোর সুযোগ নেই।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এসবির প্রতিবেদন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কর্মসূচি পালনকালে ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)।
গতকাল সোমবার এসবির এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি পুলিশের সব বিভাগকে পাঠিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে এসবি। এসবির একটি সূত্র প্রথম আলোকে এই প্রতিবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলো ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের সময়কাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির কর্মসূচিতে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষায় পুলিশের বিভিন্ন বিভাগকে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে এসবি।
নির্দেশনাগুলো হলো ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা। ৮ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত সন্দেহজনক ব্যক্তিসহ মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহন তল্লাশি করা। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল অভিযান পরিচালনা করা। মোবাইল প্যাট্রোল জোরদার করা। গুজব রোধে সাইবার পেট্রোলিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা।
এ ছাড়া কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে এসবিকে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে।