‘এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, ভাই বেঁচে নেই’
Published: 10th, June 2025 GMT
‘এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, ভাই বেঁচে নেই। দুই দিন ধরে ঘুম হয়নি। ঈদের ছুটিতে বন্ধুরা মিলে কক্সবাজার গিয়েছিলেন। তাঁরা বন্ধু, আবার আত্মীয়ও। কিন্তু কীভাবে কী হয়ে গেল, জানি না। রাজীবের স্ত্রী আর আমাদের মা এখন কথা বলতে পারছেন না। আপনারা আমার ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন। আমার ভাইয়ের পরিবারের দেখাশোনা এখন আমরাই করব।’
মলিন মুখে কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ডুবে মৃত্যু হওয়া মো.
রাজীব নগরের পশ্চিম বাকলিয়া ডিসি রোড ভরা পুকুরপাড় মেম্বার গলির মৃত নজির আহমেদের ছেলে। তিনি আন্দরকিল্লা এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন। চার ভাইয়ের মধ্যে রাজীব ছিলেন তৃতীয়। তাঁর বড় ভাই সুলতান আহমেদ ঠিকাদারির কাজ করেন। ভাইয়ের মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি।
সুলতান আহমেদ বলেন, ‘কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে একজন রাজীবের সম্বন্ধী। অন্যরাও চাচাতো–জ্যাঠাতো ভাই। একই বাড়ির ছেলে সবাই। কেউ ঢাকায় থাকেন, কেউ অন্য জেলায়। ঈদের আগে থেকে পরিকল্পনা করায় ঘুরতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল। আমাকে ফেলে রাজীব ভাতও খেতেন না। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, রাজীব নেই।’
বাক্রুদ্ধ মা ও স্ত্রী
মূল সড়কের পাশ দিয়ে সরু গলি। গলির শেষ মাথায় নারীদের জটলা। সবার মুখেই শোকের ছাপ। তাঁদের কেউ রাজীবের চাচি, কেউ ভাবি আবার কেউ চাচাতো ভাই। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই দেখিয়ে দিলেন রাজীবের ঘর। স্থানীয় একজন একটি আধা পাকা ঘরের সামনে নিয়ে গেলেন। লম্বাটে ঘরটিতেই তিন ভাই, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন রাজীব।
কয়েকজন এসে পরিচয় জানতে চেয়ে অপেক্ষা করতে বললেন। রাজীবের স্ত্রী ও চার বছর বয়সী ছেলে ভেতরের ঘরে ছিল। কথা বলতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা জানালেন, তিনি কথা বলতে পারছেন না। রাজীবের মা শামীমা বেগমও এখন বাক্রুদ্ধ। রাজীবের চাচি পরিচয়ে একজন জানান, তাঁদের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। কথা বলতে পারছেন না।
নিহত রাজিবের বড় ভাই মো. সুলতান আহমেদ ভাইয়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় চট্টগ্রাম নগরের ডিসি রোড ভরাপুকুর এলাকায়উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
১৫ দিন ধরে প্রেস ক্লাবের সামনে ‘তথ্য আপা’রা
রাজস্ব খাতে স্থানান্তর চেয়ে ১৫ দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান করছেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মীরা। দাবি না মানা হলে আবারও সারাদেশের কর্মীদের রাজধানীতে এনে কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
গত ২৮ মে থেকে আন্দোলনে রয়েছেন তারা। গত শনিবার ঈদুল আজহার দিনও ছিলেন। ঈদের পরদিন সকাল ৯টা থেকে আবারও অবস্থান নেন। শতাধিক কর্মী বিভিন্ন দাবিসংবলিত ব্যানার সাঁটিয়ে বসে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। এ প্রকল্পটি (দ্বিতীয় পর্যায়) মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত। সম গ্রেডে পদ তৈরি করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর ও কর্তন করা বেতন-ভাতা অবিলম্বে পরিশোধের দাবি তাদের।
এর আগে দাবি আদায়ে ১ জুন কয়েক দফা বাধা অতিক্রম করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন তারা। প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বিকেলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় ধস্তাধস্তি হয়। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গেলেও পরক্ষণে ছেড়ে দেয়।
ঈদের আগে থেকে আন্দোলনে থাকা সঙ্গীতা সরকার বলেন, আমরা সরকারের কাছে দয়া ভিক্ষা চাচ্ছি না। আমাদের এই দাবি ন্যায্য। প্রিয়জনদের ফেলে ঈদের দিন এখানে মেয়েরা থাকল, সরকারের পদস্থ কেউ আমাদের দেখতে এলেন না। এটা কতটা কষ্টের, বলে বোঝানো যাবে না।
আন্দোলনকারীদের সূত্রে জানা গেছে, চাকরি স্থায়ী করার কথা বলে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে মাসে কর্মকর্তাদের থেকে ২ হাজার ৪০০ ও সহকারীদের বেতন থেকে ১ হাজার ৩৯০ টাকা কেটে নেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু দাবি পূরণের অগ্রগতি না দেখে গত ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলন করেন। তখন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছিলেন। মাঝে তিন মাস পার হলেও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
তথ্য আপা কর্মীদের ভাষ্য, অন্যান্য সরকারি চাকরির মতো পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এ প্রকল্পে যোগ দেন তারা। ৪৯২ উপজেলায় তথ্যকেন্দ্রে একজন করে তথ্যসেবা কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড), দু’জন তথ্যসেবা সহকারী (১৬তম গ্রেড) ও একজন করে অফিস সহায়ক (২০তম গ্রেড) মিলিয়ে ১ হাজার ৯৬৮ জন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন।
তৃণমূল নারীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, আইন, জেন্ডার, ব্যবসা, পরিবার পরিকল্পনা এবং সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে জরুরি তথ্য সরবরাহ ও সহায়তা দিয়ে আসছেন দেড় হাজার কর্মী। সর্বশেষ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের। কর্মীদের দাবি, প্রকল্পটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছিল বলে এই সরকার তা দীর্ঘায়িত করতে চাচ্ছে না।