এবার টেক্সাসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন
Published: 11th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে গত পাঁচদিন ধরে চলা ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভ এবার ছড়িয়ে পড়েছে টেক্সাসেও। বিক্ষোভ দমাতে টেক্সাস কর্তৃপক্ষ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বুধবার টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছেন, “শান্তি ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন স্থানে টেক্সাস ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হবে।”
বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বৈধ। কোনো ব্যক্তি বা সম্পত্তির ক্ষতি করা অবৈধ এবং এর ফলে গ্রেপ্তার করা হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করার জন্য টেক্সাস ন্যাশনাল গার্ড প্রতিটি হাতিয়ার ও কৌশল ব্যবহার করবে।”
আরো পড়ুন:
লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি
যুক্তরাষ্ট্রের টিকা কমিটির সবাইকে বরখাস্ত করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেনেডি
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার বিপরীত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে মনে হচ্ছে। এ কারণেই এর গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট, সান আন্তোনিওতে পরিকল্পিত বিক্ষোভের আগে তার রাজ্যের ন্যাশনাল গার্ডকে মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের মতে, অ্যাবটের অফিস জানিয়েছে, ‘যেখানে গণ-বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেখানে টেক্সাস ন্যাশনাল গার্ড সৈন্যরা প্রস্তুত রয়েছে।’ গভর্নরের অফিস হুঁশিরারি দিয়ে বলেছে, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসে আমরা যে সহিংসতা দেখেছি, টেক্সাসে তা সহ্য করা হবে না।”
বিবিসির উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা অ্যান্টনি জুরচারের মতে, টেক্সাসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তটি পুলিশ বাহিনীর ওপর গভর্নরের আস্থার অভাব ঈঙ্গিত দিতে পারে। এর চেয়েও বড় কথা, এটি ক্যালিফোর্নিয়া, ট্রাম্প প্রশাসনে অ্যাবটের মিত্র এবং মার্কিন নাগরিকদের কাছে একটি বার্তা হিসেবে বোঝানো হয়েছে যে, রিপাবলিকানরা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে জানে।
তবে এই পদক্ষেপ ঝুঁকিমুক্ত নয়। ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে টেক্সাসে ডেমোক্র্যাট-অধ্যুষিত বড় শহরগুলোতে বিক্ষোভের সূত্রপাত হতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযানের জেরে গত শুক্রবার থেকে বিক্ষোভে উত্তাল রয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ এ শহরটিতে চলমান এ বিক্ষোভ ইতিমধ্যে সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লস অ্যাঞ্জেলেস চার হাজার ন্যাশনাল গার্ড ও ৭০০ মেরিন সেনা মোতায়েন করেছেন ট্রাম্প। তবে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে মোড় নিয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ডাউনটাউনে শহরে মঙ্গলবার রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, কারফিউ ভঙ্গ করার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ গণ গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে।
এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম ট্রাম্প প্রশাসনের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি অঙ্গরাজ্যবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, “ওখান থেকেই অবনতি শুরু হলো। প্রেসিডেন্ট ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা বাড়িয়ে পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করেছেন। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে এমনভাবে ব্যবহার করছেন যেন তারা কোনো শত্রু দেশের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।”
নিউজমের ভাষায়, “প্রেসিডেন্ট যাদের টার্গেট করছেন তারা সন্ত্রাসী নয়, তারা তো আমাদের সমাজের সাধারণ সদস্য- রান্নাঘরের কর্মী, মালী, দিনমজুর, দর্জি। এটা শক্তির বহিঃপ্রকাশ নয়, এটা দুর্বলতা। ট্রাম্পের সরকার আমাদের কমিউনিটিকে নিরাপদ করার চেষ্টা করছে না, বরং ভয়ভীতি ছড়িয়ে আমাদের আঘাত করছে। এবং মনে হচ্ছে, এটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।”
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার নিজের অবস্থানে অটল থাকার বার্তা দিয়েছেন। নর্থ ক্যারোলিনার ফোর্ট ব্র্যাগ সেনাঘাঁটিতে মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, “আমাদের বীর সেনারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিদেশের মাটিতে দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন, শুধু এই দৃশ্য দেখার জন্য নয় যে, এখন নিজ দেশের ভেতরেই তৃতীয় বিশ্বের মতো বিশৃঙ্খলা ও অনুপ্রবেশে দেশ ধ্বংস হচ্ছে- যেমনটা ক্যালিফোর্নিয়ায় ঘটছে।
তিনি বলেন, “আমি একজন কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে তা হতে দেব না। এটা কখনোই ঘটতে দেব না।”
তবে এতো পদক্ষেপের পরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনকে। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে নিউ ইয়র্ক, আটলান্টা, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া, ডালাস, অস্টিন এবং সান ফ্রান্সিসকোসহ কমপক্ষে দশটি মার্কিন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র লস অ য ঞ জ ল স পর স থ ত আম দ র কর ছ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।