ফরিদপুর সদরের বিভিন্ন স্থানে জনগণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন আসনটির (ফরিদপুর-৩) সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ. কে. আজাদ। এ সময় তিনি দুটি ইউনিয়নে গোরস্থান নির্মাণে অনুদান দেন।

বুধবার দিনব্যাপী ফরিদপুর সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ করেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.

কে. আজাদ। 

এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবার গত দুই যুগ ধরে ফরিদপুরের অসহায় মানুষের পাশে আছি। বিপদে-আপদে এই অঞ্চলের মানুষ আমাদের ভরসা করে। ভবিষ্যতে আমরা তাদের পাশেই থাকতে চাই।’

স্থানীয় বিএনপির একটি পক্ষের দিকে ইঙ্গিত করে এ. কে. আজাদ বলেন, ‘আমার সভায় আসতে অনেককে ফোন করে নিষেধ করা হয়েছে, এখানে এলে তাদের নামে মামলা দেওয়া হবে বলেও ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমি এটা জানার পর পুলিশ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করলাম- আমার সভা-সমাবেশে এলে কোনো সমস্যা আছে কিনা। পুলিশ জানিয়েছে, অসম্ভব, কোনো সমস্যা নেই, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপনি নির্বাচনের প্রার্থী হতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাবেন, এ ক্ষেত্রে পুলিশ আপনাকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। এটা কথা তাদের জানানোর পর এখনও অনেকে ভয়ে আছেন।
আশা করি, আস্তে আস্তে তাদের ভয় কেটে যাবে।’

গণসংযোগকালে জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিদ আল ফারুক বলেন, ‘আমরা ফরিদপুর সদরের এমপি হিসেবে এ. কে. আজাদকে দেখতে চাই। তিনি ফরিদপুরের অভিভাবক।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. মোতালেব হোসেন, পরিচালক বেলাল হোসেন, অ্যাডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টার, সমাজসেবক শাহ আলম মুকুল, শহিদুল ইসলাম নিরু, শিক্ষক নেতা আক্কাস পরামানিক, স্থানীয় ডিক্রীর চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু, ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সোবহান মোল্লা, সমাজসেবক উজ্জ্বল সরকার লোটন, মজিদ ফকির, মানোয়ার হোসেন, আবুল বাতিন, আক্তার হোসেন, সিরাজ মীর প্রমুখ।

এদিন বেলা ১১টায় ডিক্রীর চর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মতবিনিময় সভা শেষে নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের কামার ডাঙ্গীতে মরহুম সালাম চেয়ারম্যানের বাড়ি-সংলগ্ন গোরস্থান সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য ১০ লাখ টাকা অনুদান দেন এ. কে. আজাদ। এ সময় তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

এরপর পার্শ্ববর্তী ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের দুই ও তিন নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী নির্মাণাধীন কবরস্থানের জন্য ১৬ লাখ টাকা অনুদান দেন। কবরস্থান-সংলগ্ন মসজিদ ও মাদ্রাসার
কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয়দের সঙ্গে এ সময়ে মতবিনিময় করেন তিনি।

বিকেলে স্থানীয় কানাইপুর ইউনিয়নের সিকদার বাড়ি মন্দিরে কীর্তন পরিদর্শন করেন ও অনুদান দেন এ. কে. আজাদ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এ ক আজ দ র ইউন য ন র অন দ ন দ ন এ সময

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া

চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’

চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ