সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে ফারিহা আক্তার নামের পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্য ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠছে। এনিয়ে উদ্বিগ্ন এলাকাবাসীও। নিহতের পরিবারের অভিযোগ হত্যা করে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে ডোবায়। গত সোমবারের উপজেলার রামনগর গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটোনায় রামনগরসহ আশেপাশের এলাকায় উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। বুধবার এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, মৃত্যুর ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে রহস্যজনক মনে করছে পুলিশ। তদন্ত চলমান আছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

ফারিহার দাদী ফাতেমা বেগম বলেন, সোমবার পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে আনুমানিক ১০টা থেকে ১১ টার মধ্যে বসত ঘরের মেঝেতে প্লাস্টিকের মাদুর বিছিয়ে শুয়ে পড়েন ফারিহা ও তিনি। রাত তিনটায় ঘুম ভাঙলে তিনি দেখেন ঘরের লাইট নেভানো, দরজা খোলা এবং বিছানায় ফারিহা নেই। তিনি উঠে বিষয়টি ফারিহার বাবা ও মাকে জানান। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রতিবেশীরাসহ পরিবারের সদস্যরা শিশু ফারিহাকে খুঁজতে বের হয়। মঙ্গলবার ভোরে রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের একটি পরিত্যক্ত ডোবা থেকে তার অর্ধ নিমজ্জিত দেহ উদ্ধার করা হয়।

খবর পেয়ে জামালগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ফারিহার মরদেহ উদ্ধার করে। সুরতহাল শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সাহান আরা ও মুজিবুর রহমান দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ফারিহা আক্তার দ্বিতীয়। তিন সন্তান, শাশুড়ি, দেবরের স্ত্রীসহ ৭ সদস্য তাদের পরিবারে। দলে দলে লোকজন ও স্বজনরা বাড়িতে আসছেন শেষ বারের মতো ফারিহাকে দেখতে। সবার মুখে বিষাদের কালো ছায়া, উৎকণ্ঠার চাপ। ফারিহার মা বাবা ও স্বজনের কান্নার আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠেছিল। শোক ছড়িয়ে পড়েছে হাওরঘেরা রামনগর গ্রামে। 

নিহত ফারিহা আক্তারের মা সাহান আরা বলেন, খাওয়া শেষে নিজে মেয়েকে সঙ্গে করে টয়লেটে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে এসে ঘুমিয়ে পড়ে সে। তাদের বসতঘরে একটি মাত্র বৈদ্যুতিক লাইট রয়েছে। লাইটটি সারা রাত  জ্বালানো থাকে। রাতে তার শশুড়ির ঘুম ভাঙলে তিনি দেখেন ঘরের লাইট নেভানো। পরে তিনি লাইট জ্বালিয়ে দেখেন ঘরের দরজা খোলা ফারিহা বিছানায় নেই। অনেক খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি।  পরদিন ওই ডোবাতে থালাবাসন ধুতে গিয়ে গ্রামের লোকমান নামের এক ব্যক্তি ফরিহার অর্ধ নিমজ্জিত মরদেহ দেখতে পেয়ে ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। পাশের মাঠে খেলতে থাকা তিন শিশু সে দৃশ্য দেখে বাড়ির লোকজনকে খবর দেয়। এদের মধ্যে জাহিদ হোসেন (১৪) সাহস করে ফারিহার মরদেহ ডোবা থেকে তুলে বাড়ি নিয়ে আসে। 

প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ভোর রাতে তিনি ফারিহা আক্তার নিখোঁজের খবর জানতে পেরে ঘর থেকে বের হয়ে নিজে খোঁজাখুঁজি করেন। পরে ভোর ছয়টায় স্কুলের পাশে পরিত্যাক্ত ডোবা থেকে ফারিহার মরদেহ উদ্ধারের খবর পান।  এ ধরনের ঘটনা রামনগর গ্রামে আগে কখনো ঘটেনি। সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিভাবকরা শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। 

ফরিহার চাচাতো ভাই আমির উদ্দিন বলেন, ঘুমন্ত শিশু নিখোঁজের পর ডোবা থেকে লাশ উদ্ধারের ঘটনা এটাই প্রথম। এটি অকল্পনীয় অবিশ্বাস্য। ঘটনার পর থেকে গ্রামবাসী শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে আছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, প্রত্যেকটি মৃত্যুর কোন না কোন রহস্য ও কারণ নিয়ে সন্দেহ থাকে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে তিনি নিজে রামনগর গ্রামে এসে সব কিছু পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিক রহস্য উদ্বঘাটনে কাজ চলছে। বসতঘরটি বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। কিভাবে কেন হলো, এসব প্রশ্নের প্রাথমিক ধারনা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ শ হত য স ন মগঞ জ র মনগর গ র ম পর ব র তদন ত মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাকিমপুর সীমান্ত থেকে আটক ১৫ বাংলাদেশিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাতক্ষীরার তলুইগাছা সীমান্তে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়। 

আরো পড়ুন:

কক্সবাজারে ৮০ শতাংশ মাদক আসে সাগরপথে: বিজিবি 

অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তথ্য সহায়তার আহ্বান বিজিবির

ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশিদের মধ্যে আটজন নারী, দুইজন পুরুষ ও পাঁচজন শিশু। তারা সাতক্ষীরা সদর, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বাসিন্দা। তাদের রাতে সাতক্ষীরা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। 

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার হাকিমপুর সীমান্ত পার হওয়ার সময় বাংলাদেশি নাগরিকরা বিএসএফের কাছে আটক হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভেটখালী গ্রামের মো. শাহীন সানা, তার স্ত্রী নিলুফা ও কন্যা শাহিনা সুলতানা, একই উপজেলার নওয়াবেকি গ্রামের মিস সুরাইয়া ইয়াসমিন, মোছা. রাবিয়া বেগম, বড়কুপট গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, লিপিকা খাতুন, নাজমা খাতুন, জিম তরফদার, বয়ারসিং গ্রামের মোছা. ফারহানা আক্তার ও তার ছেলে ফারহান ঢালী, উত্তর আটুলিয়া গ্রামের সেমিনা খাতুন, আশাশুনি উপজেলার হিজলিয়া গ্রামের রাবিয়া খাতুন ও রিয়াদ হাসান এবং সদর উপজেলার পায়রাডাঙ্গা গ্রামের ফুলমতি খাতুন।

সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামিনুল হক বলেন, “ভারতের হাকিমপুর সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকরা বিএসএফের হাতে আটক হন। পরবর্তীতে বিএসএফের আমুদিয়া কোম্পানি কমান্ডার বিকাশ কুমার সাতক্ষীরার তলুইগাছা কোম্পানি কমান্ডার আবুল কাশেমের নিকট পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এসব বাংলাদেশিদের হন্তান্তর করেন।”

তিনি আরো বলেন, “বিজিবি ফেরত আনা নারী-পুরুষ ও শিশুদের সাতক্ষীরা থানায় হন্তান্তর করেছে। পরিচয় যাচাই শেষে তাদের পরিবারের কাছে হন্তান্তর করা হবে।”

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর